ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জ নিতে কলকাতায় মুমিনুলরা

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ২০ নভেম্বর ২০১৯

গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জ নিতে কলকাতায় মুমিনুলরা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ইন্দোরে চিরাচরিত লাল বলের টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল। সেখানেই ভারতীয় পেসারদের ভয়ানক বোলিংয়ের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন মুমিনুল হক সৌরভরা। মাত্র তিনদিনেই নতি স্বীকারের পর দ্বিতীয় টেস্টে আরও বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে সফরকারীদের জন্য। ইন্দোরে যদি এমন নাজেহাল হতে হয়, তাহলে ইডেন গার্ডেন্সে কি ঘটবে মুমিনুলদের ভাগ্যে- এমন শঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে ইন্দোরে বাজে হারের পর থেকেই। কারণ প্রথমবারের মতো দিবারাত্রির টেস্ট এবং খেলতে হবে অচেনা গোলাপি বলে। আর গোলাপি বলে থাকে অধিক সুইং আর বাউন্স। সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার আগে অবশ্য বাড়তি সময় পেয়েছে দল। দু’দিন ইন্দোরেই বাংলাদেশ দল অনুশীলন করে বুঝে ওঠার চেষ্টা করেছে গোলাপি বলের গতি-প্রকৃতি। মঙ্গলবার দুপুরে দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু কলকাতায় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ দল। আগামী দু’দিন ইডেনে গোলাপি বলের মূল চ্যালেঞ্জে নামার আগে অনুশীলনের সুযোগ। একইদিনে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও সহঅধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে কলকাতায় এসেছেন, বাকি ক্রিকেটাররা আসবেন আজ। শুক্রবার শুরু হবে ইডেন টেস্ট। স্বাগতিক ভারতেরও প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচ হওয়াতে প্রতিপক্ষের অবস্থা যেমনই হোক সবার নজর এখন ইডেনের দিকে। ঐতিহাসিক মুহূর্তটাকে স্মরণীয় করতে তাই কলকাতাজুড়েই বর্ণিল সাজগোজ চলছে। ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি) নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এসবের দিকে তাকালে চলবে না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। বাজেভাবে প্রথম টেস্টে হারের পর যে করেই হোক এই টেস্টে ইতিবাচক কিছু করতে হলে মরিয়া হয়েই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে সেই সুযোগ আছে মাত্র দু’দিন। শুক্রবার ম্যাচ শুরু দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে, তার আগে সেদিন সকালেও নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারবেন মুমিনুলরা। ইন্দোরে পাওয়া বাড়তি দু’দিন ছুটি উপভোগ করেছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। তারা প্রথম টেস্ট একেবারে একতরফাভাবে জেতার কারণে অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে আছে। তাছাড়া ভারতীয়দের নিজ দেশের প্রথম শ্রেণীর আসরে গোলাপি বলে দিবারাত্রির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা যেমন আছে, তেমনি সিরিজ শুরুর আগে ও প্রথম টেস্টের পরে গোলাপি বলে অনুশীলন করেছে তারা। সবমিলিয়ে নির্ভারই আছেন কোহলিরা। চ্যালেঞ্জটা কঠিন শুধু মুমিনুলদের। তাই প্রস্তুতির ঘাটতি যেন না থাকে সে জন্য প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো কোন বিশ্রাম দেননি ক্রিকেটারদের। অবশ্য টেস্ট শেষ হওয়ার পরদিন ছিল ঐচ্ছিক অনুশীলন। অনেক ক্রিকেটারই ছিলেন না সেখানে। কিন্তু সোমবার পুরো দলই কঠোর অনুশীলন করেছে। ফ্লাড লাইটের নিচে হয়েছে অনুশীলন। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের আলাদা আলাদা প্র্যাকটিস হয়েছে। কলকাতা টেস্টের আগে বাংলাদেশের কোচেদের অনেক খাটুনি করাতে হবে ক্রিকেটারদের। ফিল্ডিংয়ে অনেকগুলো ক্যাচ ড্রপ হয়েছে, বোলিংয়ে আবু জায়েদ রাহী ছাড়া তেমন সুবিধা করতে পারেননি এবাদত হোসেন এবং স্পিনাররা একেবারেই অথর্ব ছিলেন তাদের নৈপুণ্যে, ব্যাটিংয়েও কেউ সাবলীল ছিলেন না। সবমিলিয়ে ইডেন টেস্টে নামার আগে সব বিভাগেই ডোমিঙ্গো, ড্যানিয়েল ভেট্টরি, রায়ান কুক ও চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্টদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রধান কোচ ডোমিঙ্গোর দেখানো পথে পুরোদমে অনুশীলন করছে তারা। তবে আল-আমিনের মতামত কোচ শুধু পথটাই দেখিয়ে দিতে পারবেন, বাকি কাজটি করতে হবে খেলোয়াড়দের। ২৯ বছর বয়সী এ পেসার বলেন, ‘আমরা যতোই অনুশীলন করি না কেন, কোচ আমাদের মুখে তুলে দিতে পারবেন না। আমাদের যে কাজ এবং প্রক্রিয়াটা আছে সেটা দেখিয়ে দেবে, এখন আমরা অনুশীলন করব এবং সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা সেটা দেখব।’ এদিকে সিএবি’র উদ্যোগে কলকাতা রঙ্গিন সাজে সেজে উঠছে। এই টেস্টকে ঘিরে অনেক রথী-মহারথীদের মিলনমেলা বসবে ইডেনে। ঐতিহাসিক ইডেন টেস্ট ঘণ্টা বাজিয়ে উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে থাকবেন কিংবদন্তি দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ, টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা, ব্যাডমিন্টনের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পি ভি সিন্ধু, ছয়বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মুষ্টিযোদ্ধা ম্যারি কম এবং দেশের একমাত্র অলিম্পিক সোনাজয়ী অভিনব বিন্দ্রা। থাকবেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকরসহ সাবেক বর্তমান অনেক ক্রিকেটার। এছাড়া ২০০০ সালের নবেম্বরে এই ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলা বাংলাদেশ দলের সদস্যরাও উপস্থিত হবেন। এত আয়োজন যেখানে তা দেখার ফুসরত কি আছে মুমিনুলদের? মাঠের কাজটা করতে হবে ঠিকঠাক মতো, নয়তো বর্ণিল সাজের রঙ্গিন ছটায়ও বিবর্ণ দেখাবে পুরো বাংলাদেশকেই। সেখানে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ এই গোলাপি বল। প্রতি মুহূর্তেই অজানা অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসছে বলটি সম্পর্কে। আল-আমিন জানিয়েছেন, রাতের কৃত্রিম আলোয় বলটি আরও বেশি সুইং হয়। মূলত রাতের শিশিরটাই তাতে সুবিধা করে দেয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বলটা যখন ভিজে যাবে আমাদের জন্যও ভিজবে, ভারতের জন্যও ভিজবে। ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যাটিং করবে ওদের জন্যও অসুবিধা আমাদের জন্যও অসুবিধা।’ কিন্তু পেসের লড়াই হতে যাচ্ছে ইডেনে এতে কোন সন্দেহ নেই। সেদিক থেকে ভারতীয় পেস বোলিংয়ের চেয়ে তুলনামূলকভাবে পিছিয়েই আছে বাংলাদেশ। আল-আমিন বলেন, ‘যদি ভাল জায়গায় বল না করতে পারি আমাদের জন্য এটা কঠিন হয়ে যাবে। এখানে নতুন বলের চেয়ে পুরনো বলে চ্যালেঞ্জ বেশি হবে। কারণ সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন ফ্ল্যাড লাইটটা জ্বালিয়ে দেবে, এই সময় বলের মুভমেন্টটা একটু বেড়ে যাচ্ছে। আমরা অনুশীলনে যতটুকু বুঝলাম। ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে, তবে আমার মনে হয় চ্যালেঞ্জটা মূলত বোলারদের। যে দলের বোলাররা ভাল বল করবে তারা এগিয়ে থাকবে।’
×