ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪৮ বছরেও মিলল না শহীদের স্বীকৃতি

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২০ নভেম্বর ২০১৯

৪৮ বছরেও মিলল না শহীদের স্বীকৃতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেছে। গত এই চার যুগেও শহীদের তালিকায় নাম ওঠেনি কালামিয়া শেখের। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদারদের হাতে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও নির্যাতনের শিকার হয়, এক মেয়েও শিকার হন পাশবিক নির্যাতনের। হানাদাররা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেননি কালামিয়া শেখ। কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার থেকে কোনই স্বীকৃতি মেলেনি এই পরিবারটির। শহীদ কালামিয়া শেখের ছেলে সিদ্দিকুর রহমানসহ স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধারা গণস্বাক্ষর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠির মাধ্যমে আবেদন জানিয়েছেন, যেন অন্তত শহীদ কালামিয়া শেখকে শহীদের সরকারী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে থাকা তাঁর অশীতিপর স্ত্রীও জানিয়েছেন আবেদন। গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার পোনা (কাদিরপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা শহীদ কালামিয়া শেখ। তিনি গরীব হলেও ছিলেন স্বাধীনতাচেতা একজন মানুষ। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের আগস্টে (ভাদ্র মাসের ২ তারিখ) স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাঁর বাড়িতে আক্রমণ চালায়। সে সময় ছেলে সিদ্দিকুর রহমান তার মা ও ছোট ভাইবোনকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পালাতে পারলেও কালা মিয়া শেখ ও তার ১৪ বছর বয়সী এক কন্যা পাকহানাদের হাতে ধরা পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাক্ষর সংবলিত চিঠিতে শহীদ কালামিয়া শেখের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান জানান, হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে তার ছোটবোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। তার বাবা কালামিয়া শেখকে হানাদাররা ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। এরপর তার বাবা আর ফিরে আসেননি। নিশ্চয়ই তিনি শহীদ হয়েছেন। তখন থেকে পিতৃহীন নির্যাতিন সর্বহারা তার পরিবার জীবন সংগ্রাম করে কোন রকম বেঁচে আছেন। আক্ষেপ প্রকাশ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে আমদের এত বড় ক্ষতি হলেও আজ পর্যন্ত কেউ আমাদের না দিয়েছে সান্ত¦না বা সহযোগিতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই আমাদের দিকে দৃষ্টি দিতেন, আমরা সব হারানোর দুঃখ ভুলতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে এই শহীদের পুত্র করুণ আর্তি জানিয়ে বলেন, ‘আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা, এতিমের দুঃখ আপনার থেকে আর কারও ভাল বোঝার কথা নয়। তাই আজ শেষ বয়সে আমরা নির্যাতিত বোন ও বিছানায় পড়ে থাকা মাকে আপনি যদি একটু সান্ত¦না দিতেন ও আপনার ¯েœহের হাত আমাদের মাথায় রাখতেন তাহলে মনে করতে পারতাম যে বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোঁয়া পেয়েছি এবং আমরা সব হারানোর দুঃখ একটু হলেও ভুলতে পারতাম।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত পিতা কালামিয়া শেখকে শহীদের সরকারী তালিকাভুক্ত করার আকুল আবেদন জানান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এই আবেদনে ভারতীয় তালিকাভুক্ত স্থানীয় সাতজন মুক্তিযোদ্ধাও একই অনুরোধ জানান। তারাও জানান, কালামিয়া শেখকে পাক হানাদাররা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে না আসার ঘটনা।
×