ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাম্পার উৎপাদন গত মৌসুমে, বর্তমান মজুদে চলবে ৩ মাস

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ২০ নভেম্বর ২০১৯

বাম্পার উৎপাদন গত মৌসুমে, বর্তমান মজুদে চলবে ৩ মাস

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ গত মৌসুমে দেশে লবণের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। যেখানে বিসিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১৬ লাখ টন, সেক্ষেত্রে ফলন এসেছে ১৮ লাখ টনেরও বেশি। সঙ্গত কারণে দেশে লবণের কোন সঙ্কট নেই। স্বার্থান্বেষী একটি চক্র কোন না কোনভাবে গুজব ছড়িয়ে দেশে লবণের বাজার অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত বলে প্রশাসন এবং বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে মঙ্গলবার জানান দেয়া হয়েছে। গত সোমবার সিলেট থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন স্বার্থান্বেষী চক্র লবণের মূল্য বাড়তি বলে অপপ্রচার চালিয়েছে। এদিকে, লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে যে পরিমাণ লবণের মজুদ রয়েছে এর পরিমাণ প্রায় সাত লাখ টন, যা আরও টানা তিনমাস চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এ অবস্থায় লবণের নতুন মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ নতুন উৎপাদনের লবণ বাজারে চলে আসবে। সঙ্গত কারণে লবণের কোন সঙ্কট যেখানে নেই সেখানে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি শুধু গুজব। এছাড়া এবার বিদেশ থেকে লবণ আমদানিরও কোন প্রয়োজন নেই। উল্লেখ করা যেতে পারে, শুধু বিদেশ থেকে লক্ষাধিক টন ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ আমদানি করতে হয়। চট্টগ্রাম মহানগরী এবং পটিয়ায় ৭০টির মতো লবণ মিল রয়েছে। এসব মিল গেটে বর্তমানে ৭৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে ৫৩৫ টাকা। অর্থাৎ কেজি ৭ থেকে ৮ টাকা। আর এ লবণ যখন প্যাকেটজাত হয় তার মূল্য হয় ১১ থেকে ১২ টাকা। উন্নতমানের লবণ ১৫ থেকে ২০ টাকাও বিক্রি হয়ে থাকে। খুচরা পর্যায়ে এ লবণ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয় বিভিন্ন দোকানে। এদিকে, লবণের কথিত সঙ্কট নিয়ে গুজবের ঘটনায় মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের মিল মালিকদের নিয়ে জরুরী বৈঠক করে দেশে লবণের কোন ঘাটতি নেই বলে ঘোষণা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে প্রায় সাত লাখ টনের মতো লবণ মজুদ রয়েছে, যা কমপক্ষে তিন মাস দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এ সংক্রান্ত আয়োজিত সভায় জানানো হয়েছে, দেশে লবণের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। কোন ধরনের ঘাটতি নেই। বর্তমানে যে পরিমাণ লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে তা দিয়ে আরও অন্তত তিন মাস চলবে। এক শ্রেণীর অসাধু চক্র লবণের সঙ্কট দেখিয়ে মূল্য বৃদ্ধির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে একটা কুচক্রীমহল পেঁয়াজের পর লবণের কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মিল মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্বার্থান্বেষী চক্রটি মূলত লবণ শিল্পকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত মিল মালিকদের সভায়। কক্সবাজারে আয়োজিত এ সভার পর বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, বর্তমানে তিন লাখ মেট্রিক টনের ওপরে লবণ উদ্বৃত্ত। কিছু মিল মালিকের কারণে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সোডিয়াম সালফেট বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। বন্ড লাইসেন্স, কাস্টিং সল্ট ইত্যাদি নামে ইতিপূর্বে লবণ আমদানি হয়েছিল। কিন্তু কঠোর পদক্ষেপের কারণে তা এবার বন্ধ হয়েছে। লবণের জাতীয় চাহিদা নিরূপণে সবাইকে এক টেবিলে বসতে হবে। আমরা লবণ ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ হলে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব। ঘরের সমস্যা ঘরেই সমাধান চাই। লবণ ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, দেশের বাজারে লবণের কোন সঙ্কট নেই। অথচ গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে এই লবণ নিয়ে ঘটে গেছে তুঘলকি কা-। শুধু সিলেট নয়, বিভাগজুড়েই একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র অসৎ উদ্দেশ্যে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে চক্রটি। তবে রাতের মধ্যে বিষয়টি গুজব হিসেবে নিশ্চিত হয়ে যায়। এরপরও সাধারণ ক্রেতাদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। মিল মালিকদের পক্ষ থেকে আয়োডিনের দাম কমানোর দাবি করা হয়েছে। সভায় আরও বলা হয়েছে, কালোবাজারি, উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ও বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেটের কারণে দেশীয় লবণ শিল্প সঙ্কটে রয়েছে। মাঠে ও মিলে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী রয়েছে প্রায় ৭ লাখ টন লবণ। লবণ মিল মালিক, ব্যবসায়ী, চাষীসহ সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশীয় লবণশিল্প বাঁচাতে সমস্ত লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে মাঠে ফেরানো যাবেনা চাষীদের। পরনির্ভর হবে দেশ। বাড়বে বেকারত্ব। সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে যারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট, সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৮০ কেজির লবণের বস্তা মাঠ পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা দরে। সে হিসেবে কেজিতে দাম দাঁড়াচ্ছে মাত্র ৪ টাকা। যা দিয়ে মজুরি বা উৎপাদন খরচও সামাল দিতে পারছে না চাষীরা। অথচ বাজারে প্যাকেটজাত লবণ কেজিতে বিক্রি করা হয় প্রায় ৪০ টাকা। উৎপাদনের পর থেকে বাজারে পৌঁছা পর্যন্ত অন্তত ৩টি হাত বদল হয় লবণের। প্রত্যেক ধাপে লাভ যুক্ত হয়। কেবল লোকসান সয়েই যেতে হচ্ছে বঞ্চিত চাষীদের। লবণ মিল মালিকদের পক্ষে আরও জানানো হয়েছে, অপরিশোধিত লবণ পরিশোধিত তথা খাবার উপযুক্ত ও বাজারজাত করতে কেজিতে সর্বোচ্চ ১ থেকে দেড় টাকা খরচ পড়ে। সে হিসেবে এক কেজি লবণের দাম হওয়ার কথা সাড়ে ৫ টাকার নিচে। কিন্তু বাজারে ভোক্তারা কিনছে প্রায় ৪০ টাকায়। নবেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে লবণের মৌসুম। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে লবণ উৎপাদন শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিসিকের চাহিদা ধার্য হয়েছে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার মে.টন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মে.টন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় উৎপাদনযোগ্য লবণ জমির পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৫৯৬ একর। চাষীর সংখ্যা ২৯ হাজার ২৮৭ জন।
×