ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আর্টিকেরিয়া

প্রকাশিত: ১২:২৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

আর্টিকেরিয়া

এমন লোক পাওয়া হয়ত খুবই কঠিন হবে যার জীবনে কখনও না কখনও আর্টিকেরিয়া দেখা যায় নাই। আর্টিকেরিয়া হলো এলার্জির অন্যতম প্রকাশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর্টিকেরিয়া ক্ষণস্থায়ী হয়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সপ্তাহ থেকে মাস এমনকি মাস থেকে বছরাধিককালও স্থায়ী হতে দেখা যায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় সুনির্দিষ্ট কোন ঋতুতে এটা দেখা দেয় আবার ঋতুশেষে এটা আবার ভাল হয়ে যায় এবং শরীরের একটা নির্দিষ্ট স্থানেও হতে পারে, আবার সারা শরীর জুড়েও হতে পারে। লালচে ফোলা ফোলা চাকা চাকা দাগ নিয়ে ওঠে এবং সেই সঙ্গে থাকে প্রচ- চুলকানি। কোন কোন চাকা খুবই ক্ষণস্থায়ী হয় আবার দীর্ঘস্থায়ীও হয় এবং মিলিয়ে যাওয়ার পর সে স্থানে আর কোন চিহ্ন থাকে না। এর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো একদিকে পুরনো চাকাগুলো মিলে যেতে থাকে আবার অন্যদিকে থেকে নতুন নতুন চাকা উঠতে থাকে। ত্বকের গায়ে যে গধংঃ কোষ আছে সেখান থেকে হিস্ট্যামিন নিঃসরণের জন্য আর্টিকেরিয়া হয়। আর্টিকেরিয়ার সঙ্গে একত্রে অথবা আলাদাভাবে গভীর এবং আকারে বড় বড় চাকা দেখা দিতে পারে যাকে বলা হয় অহমরড়বফবসধ যা কিনা ঠোঁট মুখম-ল, এমনকি মুখনালীর ভিতরেও দেখা দিতে পারে যা কিনা কোন কোন ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসে এবং খাদ্যগ্রহণের বাধার সৃষ্টি করে জীবননাশের অবস্থা তৈরি করতে পারে। আর্টিকেরিয়ার কারণ এখনও অনেকটা রহস্যজনকই রয়ে গেছে। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু কারণ ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে যেমন : খাদ্য-বাদাম, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি। ওষুধ : এ্যাসপিরিন, পেনিসিলিন, অ্যান্টিবায়োটিক, জোলাপ, (চঁৎলধঃরাব) ইত্যাদি। পতঙ্গ : ভীমরুল, মাকড়সা, মৌমাছি, বোলতা ইত্যাদি। জৈবিক কারণ : গরম, ঠা-া, সূর্যালোক, চাপ ইত্যাদি। ভাবাবেগ : ভয়, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি। অজানা কারণ : এক্ষেত্রে কোন সঠিক কারণই নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। অনেক রোগীর ঠা-া থেকে এই রোগ হতে পারে যেমন ঠা-া আবহাওয়ায় থাকলে, কিংবা ঠা-া পানিতে গোসল করলে, ঠা-া খাবার খেলে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ঈড়ষফ ওসসবৎংরড়হ ঞবংঃ করে কারণ নির্ণয় করা সম্ভব। রোগীর হাত যদি ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত ৫সেঃ গ্রেড ঠা-া পানিতে ঢুবিয়ে রাখা হয় তাহলে তার হাতে এই রোগে লক্ষণ যেমন লাল হওয়া স্ফীত হওয়া ইত্যাদি ফুটে উঠবে। আবার কোন কোন ব্যক্তির ত্বকে নখ দিয়ে আঁচড় কাটলে সে জায়গাটা ফুলে ওঠে। ঐ সমস্ত ব্যক্তির ত্বকে নখ দিয়ে আঁচড় কাটলে মিনিট দশেক পরেই স্থানটিতে স্ফীতি দেখা দেয়-এরূপ অবস্থাকে বলা হয় ‘গ্রাফিজম’। এই সমস্ত রোগীর ক্ষেত্রে ত্বকে কোন রকমের সামান্য আঘাত পেলেও ফুঠে ওঠে এবং চুলকায়। ওষুধের মধ্যে ঈড়ঃৎরস জাতীয় ওষুধটি আমাদের দেশে যত্রতত্র ব্যবহার হয় এমনকি চৎবংপৎরঢ়ঃরড়হ ছাড়াও অনেকেই কিনে খেতে শুরু করে দেন। এটি আর্টিকেরিয়ার জন্য একটি অন্যতম কারণ। আবার অনেকে খালি গায়ে সূর্যালোক লাগানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ত্বকের খোলা স্থানে চাকা চাকা দেখা দেয় এবং লাল হয়ে উঠেও চুলকাতে থাকে। আবার ক্লান্তি, তাপ উত্তেজনা কোন কোন ক্ষেত্রে এ রোগের কারণ হতে পারে। যেমন গরম পানিতে গোসল, সূর্যালোকে বিচরণ, গরম খাদ্য গ্রহণ, উত্তপ্ত ঘরে কাজ-বাজ করা, ব্যায়াম করা থেকেও এ রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এর বাইরেও অসংখ্য কারণে আর্টিকেরিয়া হতে পারে যেমন ফুলের রেণু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করলে, নাইলন বা কোন কোন রাসায়নিক দ্রব্য ত্বকের সংস্পর্শে এলে, পেটে ক্রিমি হলেও এ রোগ দেখা দিতে পারে। ইউরোগে এই রোগের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্যানডিডা নামক ছত্রাক। এ জাতীয়, জীবাণু ছাড়াও খরাবৎ ঋষঁশব জাতীয় জীবাণু থেকেও এ রোগ হতে পারে। এছাড়া ঘুমের ওষুধ, টিকা, হরমোন ব্যবহার থেকেও এর রোগ হতে পারে। কলা, কমলালেবু, বাদাম, জাম, টমেটো, ডিম গম, চকলেট, চিংড়ি, অন্য মাছ, কাকড়া, শামুক ইত্যাদি খেলেও আর্টিকেরিয়া হতে পারে। এ রোগের ক্ষেত্রে মূল কারণ খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্ট তবে সে কি খাদ্য খেয়েছে তা খুঁটিয়ে দেখতে হবে। কোন বিশেষ সময়ে বা ঋতুতে এটা হলে ফুল ও ফুলের পরাগ রেণুর কথা ভাবতে হবে। এ রোগের চিকিৎসা অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে তবে সুনির্দিষ্ট কারণ পাওয়া গেলে সারিয়ে তোলা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। পরজীবী (ঢ়ধৎধংরঃব) থাকলে সুনির্দিষ্ট পরজীবী নাসক ওষুধ প্রয়োগ হলে এর সঙ্গে ঈরসবঃরফরহবও ব্যবহার করা যায়। অবস্থা গুরুতর হলে কটিমোন মুখে খেতে হবে। তবে যদি জীবন নাশের হুমকির সম্মুখীন কেউ হয় সেক্ষেত্রে শিরা পথে হাইড্রোকর্টিসোন ব্যবহার করা উচিত। ডাঃ দিদারুল আহসান চর্ম, যৌন (সেক্স), এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ
×