ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর পথে পথে আগের মতোই আইন ভঙ্গের চিত্র

প্রকাশিত: ১১:০২, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

রাজধানীর পথে পথে আগের মতোই আইন ভঙ্গের চিত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক পরিবহন আইন আনুষ্ঠানিক কার্যকর শুরুর পর সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে নতুন আইনে মোবাইল কোর্টের অভিযান। রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিআরটিএ) পক্ষ থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা পরিচালনা করা হয়। এর আগে সোমবার মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে নতুন সড়ক আইনটি সংযুক্ত করে যে বিষয়টি অসম্পূর্ণ ছিল রবিবার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, আজ থেকে মোবাইল কোর্ট কার্যকর হচ্ছে। আইন প্রয়োগে যাতে কোন অসুবিধা না হয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অযথা হয়রানি কিংবা বাড়াবাড়ি বন্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উর্ধতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। সহনীয় মাত্রা মানে বাড়াবাড়ি যেন না করে, এটাই বলছি। এক নবেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর করার কথা থাকলেও বিভিন্ন পক্ষের অনুরোধে গত রবিবার থেকে তা কার্যকর শুরু হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ১৫ দিনেও নতুন আইন সম্পর্কে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, চালক থেকে শুরু করে পথচারীর মধ্যে খুব একটা সচেতনতা আসেনি। অনেকেই আইন হয়েছে তাও খোঁজ রাখেন না। প্রথম দিনের মোবাইল কোর্টের কাছে পুরনো অভিযোগই পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ফিটনেস সমস্যা, গাড়ির ও চালকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, বেপরোয়া চলাচল, বাড়তি ভাড়া আদায়, চালকের মোবাইলে কথা বলা, সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়। সব মিলিয়ে আগের মতোই অনিয়ম আর আইন ভঙ্গের চিত্র পাওয়া গেছে রাজধানীর পথে পথে। প্রথম দিন রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ সাদিয়া তাজনীন। অভিযান চলাকালে পুলিশ বিভিন্ন পরিবহনের ২০টির বেশি বাস থামায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, একটি বাসকেও জরিমানা করা হয়নি। এর বাইরেও বাসের ভেতরে ভাড়ার তালিকা না রাখা, হাইড্রলিক হর্ন থাকা, নারীদের জন্য আসন বরাদ্দ না রাখার মতো অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে নতুন আইনে। যখন মোবাইল কোর্টের অভিযান চলছিল তখন বাসের যাত্রীরাও যেন সরাসরি অভিযোগ করার ফুরসত পেয়েছিলেন। তাই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সরাসরি তুলে ধরেন বাসের নানা অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার চিত্র। একযাত্রী বলেন, সিটিং সার্ভিসের কথা বলে বাড়তি ভাড়া আদায় করলেও পথ থেকে যাত্রী তোলে। তিনি বলেন, সিটে কেউ বমি করে গেছে, পরিষ্কার না করেই যাত্রী তোলা হয়। এ সময় গাড়ি চালক হইচই শুরু করেন। যাত্রীরা বলেন, তাদের কথা শোনার কেউ নেই। আজ ম্যাজিস্ট্রেটকে পেয়েছেন কথা বলবেনই। ম্যাজিস্ট্রেট নিজের আসন ছেড়ে বাসে উঠে ভেতরের চিত্র দেখেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত ফোরকান নামের এক গাড়িচালককে ২ হাজার টাকা জরিমানা করে। তিনি খুশি মনে জরিমানা দিয়ে বলেন, আমার ভাই ম্যাজিস্ট্রেট, মামাত ভাই সাংবাদিক, মামা ইনকাম ট্যাক্স অফিসার। চাইলেই জরিমানা মাফ হইত। দিয়া দিলাম। রাজধানীর কাকলী বাসস্ট্যান্ডের পাশে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত-৪ পরিচালনা করছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এমএম সামিরুল ইসলাম। দুপুর পর্যন্ত ৭টি মামলা ও ৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। দুপুরের দিকে একটি বাস থামানো হলে আদালত বাসের ভেতরে গিয়ে দেখে সংরক্ষিত আসনে কারা বসেছেন। এ ছাড়া বাসটির ফিটনেসও দেখা হয়। বিকাশ পরিবহনের একটি বাস থামানো হলে আদালত দেখে গাড়ি এবং চালকের কোন কাগজপত্রের মেয়াদ নেই। বাসটি জব্দ করা হলে যাত্রীরা নেমে যান। মোঃ আলমগীর নামের এক মোটরসাইকেল চালককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি জানান, তার চার চাকার বাহন চালানোর লাইসেন্স আছে। কিন্তু মোটরসাইকেলের না থাকায় জরিমানা করা হয়েছে। এবার জরিমানার পরিমাণ বেশি হওয়ায় এ নিয়ে মানুষের মনে নানা আলোচনা চলছে। ম্যাজিস্ট্রেট এমএম সামিরুল ইসলাম বলেন, জরিমানার সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। তবে সর্বনিম্নটা বলা হয়নি। জরিমানার পরিমাণ নির্ভর করছে অপরাধের পরিমাণ ও আদালতের ওপর। অনেকের মধ্যে ভীতির সঞ্চারও হয়েছে এটা নিয়ে যে, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেই ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। কিন্তু এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ পরিমাণ।
×