ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপিপন্থী এক আইনজীবী সন্তানের মাধ্যমে উস্কানি দিচ্ছেন ॥ উপমন্ত্রীর অভিযোগ

বুয়েট আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ সক্রিয়!

প্রকাশিত: ১১:০০, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

বুয়েট আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ সক্রিয়!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবরার হত্যায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের উদ্যোগের পরেও কেন বুয়েটে আন্দোলন? বিভিন্ন মহল থেকে সেই প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। তবে এবার বুয়েটে অচলাবস্থা জিইয়ে রেখে তৃতীয় পক্ষের রাজনৈতিক ফায়দা লোটার গুরুতর অভিযোগ আনলেন খোদ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আসামিদের গ্রেফতারের পরেও বহিষ্কার দাবিতে কেন বুয়েটে আন্দোলন, এ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে বুয়েট নিয়ে নোংরা রাজনীতি হচ্ছে। বিএনপিপন্থী এক আইনজীবী তার সন্তানের মাধ্যমে বুয়েট অচলাবস্থার উস্কানি দিচ্ছেন। সোমবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ এনেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। বুয়েট সঙ্কট নিয়ে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশের আন্দোলনের বিষয়ে তথ্য জানাতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। উপমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে বুয়েট নিয়ে নোংরা রাজনীতি হচ্ছে। বুয়েটে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। চার্জশীট দেয়া হয়েছে। যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তবুও কেন বহিষ্কার দাবিতে বুয়েট আন্দোলন? বুয়েট শিক্ষার্থীদের সকল দাবি বাস্তবায়ন করার পরও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিএনপি’র রাজনৈতিক সুবিধা নিতে এক অভিভাবক উস্কানি দিয়ে দেশের শীর্ষমানের এই প্রতিষ্ঠানটিকে অস্থির করে রেখেছেন। উপমন্ত্রী বলেন, বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। সরকারের অর্থে পরিচালিত হলেও এটি স্ব^ায়ত্তশায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি আবরার হত্যার ঘটনার মাধ্যমে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। সন্দেহভাজন অপরাধীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। দ্রুততার মধ্যে আদালতে পুলিশ চার্জশীট জমা দিয়েছে। অথচ এরপরও নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে বুয়েটকে অচল করে রাখা হয়েছে। আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিএনপিপন্থী এক আইনজীবী সমিতির নেতা তার সন্তানকে উস্কানি দিয়ে এ আন্দোলন অব্যাহত রাখছে। এখন কেন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে তা জানতে চাচ্ছে। উপমন্ত্রী আরও বলেন, জাতীয়তাবাদী ওই আইনজীবী তার সন্তানকে নিদের্শনা দিচ্ছেন বুয়েটে আন্দোলন চালিয়ে যেতে। আর সেই সন্তান বাবার নির্দেশনা মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। যে বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য ছেলেকে উদ্বুদ্ধ ও উস্কানি দিচ্ছেন, আসলে সেই বাবা কোন ধরনের অভিভাবক? তবে মামলার তদন্ত ও ওই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মন্ত্রী ওই অভিভাবক ও তার সন্তানের নাম সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করতে রাজি হননি উপমন্ত্রী। তবে বিএনপিপন্থী এ আইনজীবীর কর্মকা- সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, এ আইনজীবী ইতোমধ্যেই আন্দোলনকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সন্তানেরও মাধ্যমে তিনি শুরু থেকেই আন্দোলনে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি আন্দোলনের সংহতি প্রকাশের জন্য এক পর্যায়ে তিনি ড. কামাল হোসেনসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আইনজীবীকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসবেন বলেও শিক্ষার্থীদের জানিয়েছিলেন। তবে এ আইনজীবীর সঙ্গে আন্দোলনকারী এক নেত্রীর সম্পর্ক সম্পর্কে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানেন না। দু’তিন জন আন্দোলনকারী বিষয়টি জানলেও এ বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছেন না। এমন প্রেক্ষাপটে সংবাদ সম্মেলনে উস্কানি দেয়া অভিভাবকদের উদ্দেশে উপমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় আমাদের কাছে সকল তথ্য রয়েছে। মেধাবীদের প্রতিষ্ঠান বুয়েট, তাই আমরা কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা বা অন্যকোন ব্যবস্থা নিতে চাই না। আপনারা (অভিভাবকরা) তাদের সন্তানদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে সঠিকপথ দেখান। উস্কানিমূলক আচরণ করে জনগণের অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় অচল রাখার চেষ্টা করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করবেন না। কারা এসব করছেন আমাদের কাছে সেসব সকল তথ্য রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপমন্ত্রী বলেন, অভিযুক্ত অপরাধীরা কারাগারে আটক রয়েছে। তাদের বিচারকাজ চলছে, এ সময় বুয়েট থেকে তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের ইস্যু তুলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছেন। স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য একটি প্রক্রিয়া রয়েছে, এজন্য সময় প্রয়োজন। যেহেতু অপরাধীরা পুলিশের হাতে আটক, এ সময় তাদের স্থায়ী বহিষ্কার মুখ্য বিষয় নয়। এ ইস্যুতে আন্দোলন চাঙ্গা রাখা হবে তা হতে পারে না। এ হত্যাকা-ের কোন আলামত যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় অত্যন্ত সচেতন ছিল এবং দলীয় বিবেচনা না করে সন্দেহভাজন সকলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চার্জশীটও দেয়া হয়েছে। তারপরও আমরা লক্ষ্য করছি কতিপয় গোষ্ঠী হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে রেখেছে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে উপমন্ত্রী আরও বলেন, মাঠের রাজনীতিতে পরাস্ত হয়ে একটি গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি এ আন্দোলনে ইন্ধন দিচ্ছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির একজন নেতা। বুয়েটে অধ্যায়নরত তার সন্তানের মাধ্যমে তিনি এ আন্দোলনের ইন্ধন দিচ্ছেন। শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার না হয়ে নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সন্তানদের এ আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান উপমন্ত্রী। আন্দোলনে ইন্ধনদাতা শিক্ষকদের উদ্দেশে উপমন্ত্রী বলেন, আপনারা উস্কানি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে রেখেছেন। আবার আপনারা বেতনও নিচ্ছেন। এটা কোন নৈতিকতার মধ্যে পড়ে? উপমন্ত্রী এক প্রশ্নে বলেন, বাংলাদেশে আবাসিক কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্যুতে কথা বলছেন, আমাদের সমস্যা নিয়ে তাদের কথা বলাটা একটি সাংস্কৃতিতে পরিণতি হয়েছে। এটি আমরা প্রত্যাশা করি না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব¦বিদ্যালয়ের বর্তমান সঙ্কট কবে কেটে যাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে মহিবুল হানান বলেন, ভিসির পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষকদের দুটি আলাদা অভিযোগ জমা দিয়েছে, আমরা প্রাথমিক তদন্ত কাজ শুরু করেছি। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের বাকি দাবি বাস্তবায়নে সময় চাইলেন উপাচার্য বুয়েট শিক্ষার্থীদের সর্বশেষ তিনটি দাবি বাস্তবায়নে দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের তিন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম তাদের এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। এর আগে সম্প্রতি প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের একটি বৈঠক হয়। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, তিনটি দাবি মেনে নিলে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন তারা। সোমবার ফের উপাচার্যের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। এ সময় ওই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রশাসন আরও দুই সপ্তাহ সময় চায়। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করবেন। আন্দোলনকারীদের তিনটি দাবি হলো- চার্জশীটের ভিত্তিতে আবরার হত্যার অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কারের পর আহসানুল্লা, তিতুমীর এবং সোহরাওয়ার্দী হলের র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি বাস্তবায়ন করা, সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি এবং র‌্যাগিংয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরির শাস্তির নীতিমালা প্রস্তুত করে সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে প্রশাসনের আলোচনা, আলোচনার ভিত্তিতে বুয়েট একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদিত হয়ে প্রস্তাবিত একাডেমিক কার্যক্রম মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাবিত নীতিমালা পাঠানোর আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা করা প্রয়োজন তার সবকিছু নিশ্চিত করতে হবে। বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, উপাচার্য কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি দাবিগুলো বাস্তবায়নে তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে। তবে আমরা দুই সপ্তাহের মধ্যে এগুলো পূরণের চেষ্টা করব। ভিসি স্যার তাদের এই আশ্বাস দিয়েছেন।
×