ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাপানের বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

জাপানের বিনিয়োগ

ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও জাতীয় প্রবৃদ্ধির আলোকে বৈশ্বিক মানচিত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। সেদিক বিবেচনা করেই বাংলাদেশে বিশাল বিনিয়োগে এবার স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপান। ইতোপূর্বে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েতও বাংলাদেশে বিনিয়োগের আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শনিবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এক আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন জাপানের বিনিয়োগকারীরা। তারা জাপানের জন্য পরিকল্পিত ও গঠিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিরাট অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে চান বিভিন্ন শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য। এসব বিশ্বখ্যাত কোম্পানির মধ্যে রয়েছে সুমিতোমো, নিক্কন স্টিল, হোন্ডা, সজিত কর্পোরেশনের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এর জন্য ইতোমধ্যে রাজধানীর অনতিদূরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আপাতত ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরও ৫০০ একর জমি দেয়া হবে শিল্প স্থাপনের জন্য। আর সেখানেই গড়ে উঠবে জাপানী বিনিয়োগ বিশিষ্ট বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এর কার্যক্রম শুরু হলে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে নিঃসন্দেহে। উল্লেখ্য, জাপানের জাইকা বাংলাদেশে অন্যতম সহযোগী দাতা সংস্থা ও অকৃত্রিম সুহৃদ। জাপানী অর্থায়নে ইতোমধ্যে দেশে মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর, ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এই প্রেক্ষাপটে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানী বিনিয়োগ সুনিশ্চিত যোগ করবে বাড়তি মাত্রা ও আকর্ষণ। আমরা একে অকুণ্ঠচিত্তে স্বাগত জানাই। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে গিয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠকসহ এশিয়া বিষয়ক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সফরের প্রথম দিনেই সে দেশের জাতীয় দৈনিক জাপান টাইমসে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর শৈশব থেকেই জাপান সম্পর্কে সবিশেষ আগ্রহের কথা অকপটে ব্যক্ত করেছেন, যা তিনি শুনেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে একদিন জাপানের মতো উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, যা তিনি ঘাতকদের বুলেটে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হওয়ার কারণে বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশে পা দিয়েই বলেছেন, জাপানের মডেল ধরে একদিন বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে চলে যাবে, আর সেদিন খুব দূরে নয়। মনে রাখতে হবে যে, জাপানের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, চিত্রকলা, শিল্প-সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, সুমোকুস্তি, চা-পানসহ রন্ধনশিল্প অতীব প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। এও সত্য যে, দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধ এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকি পরপর দুটি পারমাণবিক বোমার আঘাতে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সত্ত্বেও জাপানীরা প্রবল বিক্রম ও উদ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং অচিরেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বিশ্বের বুকে প্রায় শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, বর্তমান বিশ্বে উৎপাদিত যে কোন শিল্পপণ্য ‘মেড ইন জাপান’ একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্র্যান্ড হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে ক’টি দেশ সে সময় আমাদের পাশে এসে দাঁডিয়েছে, অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে, সর্বোপরি প্রথম পর্যায়েই দিয়েছে স্বীকৃতি ও সহায়তা, তার মধ্যে অন্যতম জাপান। জাপান বরাবরই বাংলাদেশের পাশে ছিল উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে এবং চিরকালই তা থাকবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা যায়। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার পর থেকেই জাপান যথাসাধ্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে থাকছে। তারা এমনকি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের সে দেশে সম্মানজনক পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতেও প্রস্তুত। জাপান বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু এবং উন্নয়নের প্রধান অংশীদার। আর এর জন্যই দেশে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাকল্পে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে জাপানকে।
×