ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হলি আর্টিজান মামলার রায় ২৭ নবেম্বর

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

হলি আর্টিজান মামলার রায় ২৭ নবেম্বর

শংকর কুমার দে ॥ আদালত বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছে আগামী ২৭ নবেম্বর। রবিবার আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুনানি শেষে এই দিন ধার্য করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান। ২০০৯ সালের এই আইনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মাধ্যমে হত্যার অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান অনুযায়ী দন্ডিত হবে জঙ্গীরা। এই মামলায় ২১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেয়া হয়। অভিযুক্ত ২১ জনের মধ্যে ৫ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। অপর ১৩ জন বিভিন্ন সময়ে জঙ্গীবিরোধী অভিযানকালে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে ৮। অভিযোগপত্রে (চার্জশীটে) বলা হয়েছে, জঙ্গী হামলা করেছে জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবি। ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালায় তারা। জঙ্গীদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে ‘অস্থিতিশীল করা’ এবং বাংলাদেশকে একটি ‘জঙ্গী রাষ্ট্র’ বানানো। দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ওই বছরের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে ২১১ সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। ’১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হয়েছিল ভয়াবহ ওই হামলা। হামলাকারীরা ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করে। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়ে। নিহতরা হলো- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। নব্য জেএমবি ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় হামলা চালিয়ে নিজেদের সামর্থ্যরে জানান দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে এই হামলার ছক কষেছিল বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে। নজিরবিহীন ওই হামলা বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের বিপজ্জনক বিস্তারের মাত্রা স্পষ্ট করে তোলে। হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে দলটির শীর্ষনেতাদের বেশ কয়েকজন মারা পড়ে। এই হামলায় জড়িত হিসেবে যে আটজনকে জীবিত গ্রেফতর করা হয়, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয় হামলার পর এসআই রিপন কুমার দাসের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলাটিতে। জীবিত গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলো- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। রবিবার রায়ের তারিখ ঘোষণার সময় এই আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিল। এর আগে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেয়ার সময় তারা সবাই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। এই মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। হলি আর্টিজানে হামলার আগে জঙ্গীরা বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করে। এর অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে গাইবান্ধার বোনারপাড়া বাজার এলাকার কলেজ মোড়ে একটি বাসায় মিটিং করে প্রথমে তারা হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনা করে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে। তিন বছর আগের এই জঙ্গী হামলার ঘটনার মামলায় আট আসামির যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন মামলার আইনজীবীরা। এরপর ফের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি খ-ন করেন। এরপর রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন বিচারক। তিন বছর আগে জঙ্গী হামলার ঘটনা দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে শুরু হয় জিরো টলারেন্স নিয়ে জঙ্গীবিরোধী অভিযান। জঙ্গীবিরোধী অভিযানে জঙ্গী সংগঠনগুলোর মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে জঙ্গীবাদশূন্য করা হয়, যা এখনও অব্যাহত। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের চার দিনব্যাপী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে রবিবার মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২৭ নবেম্বর তারিখ ধার্য করে আদালত। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এই মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে দাবি করে আসছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। ২০১৮ সালের ২৬ নবেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ৩ ডিসেম্বর মামলার বাদী এসআই রিপন কুমার দাসের জবানবন্দী নেয়ার মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার শুরু হয়। হলি আর্টিজান বেকারি কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত থাকায় সেখানে হামলা করার পেছনে কারণ ছিল জঙ্গীদের নিজেদের সামর্থ্যরে জানান দেয়া। এছাড়া বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করে নৃশংসতার প্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি তারা এর মাধ্যমে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে প্রচার করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে চেয়েছিল। গুলশান হলি আর্টিজান মামলার আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জ গঠন করা হয় ২০১৮ সালের ২৬ নবেম্বর। এর আগে ৮ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। একই বছরের বছরের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের জিআর শাখায় মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেয়। এরপর ৩০ জুলাই মামলাটির অভিযোগপত্র গ্রহণ ও আসামিদের উপস্থিতির জন্য আদালত এ দিন ধার্য করে। জঙ্গী হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী যিনি বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। আমের ঝুড়িতে আসে অস্ত্র আমের ঝুড়িতে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে গুলশান হামলার অস্ত্র। নব্য জেএমবির কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজান সেই অস্ত্র গ্রহণ করে এবং বসুন্ধরায় পাঠায়। তবে অস্ত্রের গায়ে কোন দেশের নাম লেখা ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, বর্ডার থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে আমের ঝুড়িতে করে গুলশান হামলার অস্ত্র ঢাকায় আনা হয়। সেই অস্ত্র নব্য জেএমবির কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজান গ্রহণ করে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যে বাসাটি জঙ্গীরা ভাড়া নিয়েছিল, সেখানে সেই অস্ত্র পৌঁছে দেয় মারজান। পরবর্তীতে সেই অস্ত্র দিয়েই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলা করা হয়। গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী ও সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অভিযানে তামিম চৌধুরী নিহত হয়। তবে মেজর জিয়া এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। অস্ত্র ও অর্থের উৎসের বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। গুলশান হামলা বাস্তবায়নের জন্য দুবাই থেকে হুন্ডির মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকা আসে। অস্ত্র ভারতের সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সেই অস্ত্রই চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে আমের ঝুড়িতে করে ঢাকায় আনা হয়। অপারেশন প্ল্যান ঢাকায় হামলার পরিকল্পনা রাজশাহীতে, কৌশল নির্ধারণ গাইবান্ধায়, চূড়ান্ত অপারেশন প্ল্যান ঢাকায়। রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গীদের ভয়াবহ হামলার ঘটনাটি নিছক কোন আক্রমণ ছিল না, এটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ। এই হামলার পরিকল্পনা করা হয় রাজশাহীতে, সেই পরিকল্পনার প্রাথমিক কৌশল ঠিক করা হয় গাইবান্ধায় এরপর ঢাকায় বসে দিনের পর দিন রেকি করে হামলার লক্ষ্যবস্তু, সমর কৌশল ও অস্ত্র প্রবেশের উপায় নির্ধারণ করে জঙ্গীরা। চার মাস ধরে এই পরিকল্পনা করা হলেও ওই হামলায় যে ৫ জঙ্গী অংশ নেয় তারা ‘আত্মঘাতী’ হওয়ার নির্দেশ পেয়েছিল ঘটনার মাত্র দুই মাস আগে। ইসলাম ধর্মেও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ‘শহীদ’ হওয়ার জন্য ‘বাইয়াত’ গ্রহণ করানো হয়েছিল ওই ৫ তরুণকে। আর সিরিয়াভিত্তিক ইসলামিক স্টেটস (আইএস) জঙ্গীদের পরিচয় ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হলেও হামলাকারী ও তাদের মাস্টারমাইন্ডরা ছিল দেশী নব্য জেএমবির সদস্য। হলি আর্টিজানে হামলায় হামলাটির পরিকল্পনা ও এ ঘটনার নেপথ্যের রূপকারদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা ঢাকার কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী জঙ্গীর মধ্যে তিনজনের আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ও সিটিটিসি কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে হামলার পরিকল্পনার আদ্যোপান্ত। তাদের বক্তব্যে জানা গেছে, সারাবিশ্বের মনোযোগ পাওয়ার জন্যই বেছে নেয়া হয় গুলশানের কূটনীতিকপাড়াকে। বিদেশীদের আনাগোনা আছে এমন একটি জায়গায় হামলার পরিকল্পনা থেকে টানা চার মাস ধরে রেকি করেই বেছে নেয়া হয়েছিল হলি আর্টিজানকে। রাজধানীর বিদেশী অধ্যুষিত কূটনীতিকপাড়ায় একটি জায়গায় হামলার পরিকল্পনা থেকেই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিকে জঙ্গীরা প্রথম বেছে নেয় গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। রাজশাহীর একটি আস্তনায় বসে এ বিষয়ে প্রথম পরিকল্পনা করা হয়। এরপর গাইবান্ধার জেলার সাঘাটা থানাধীন বোনারপাড়া বাজারের কলেজ মোড়সংলগ্ন এলাকায় সাখাওয়াত হোসেন শফিক ও বাইক হাসান নামে দুই জঙ্গীর ভাড়া নেয়া বাসায় এ বিষয়ে বৈঠক করে নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী, মেজর জাহিদ, সারোয়ার জাহান মানিক ও তাদের সহযোগী তারেক, মারজান, শরিফুল ইসলাম খালিদ ও রাজীব গান্ধী। সেখানেই গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে আত্মঘাতী হামলার বিষয়ে দায়িত্ব বণ্টন ও বিস্তারিত পরিকল্পনা করে মাস্টারমাইন্ডরা। ওই বৈঠকেই হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় দেশী-বিদেশী হত্যার মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয় তামিম চৌধুরী ওরফে তালহাকে। কিন্তু মাস্টারমাইন্ডদের কেউ এই আত্মঘাতী হামলায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে না চাওয়ায় তাদের হামলাকারী নির্বাচনের দরকার পড়ে। হামলার আগে হলি আর্টিজান রেকি গুলশান হামলার আগে একাধিকবার হলি আর্টিজান রেকি করা হয়। এই হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী নিজেও হলি আর্টিজান রেকি করেছিল। এছাড়া পাঁচ হামলাকারীও পরপর দু’দিন হলি আর্টিজানে গিয়ে রেকি করে আসে। রাজীব গান্ধী তার জবানবন্দীতে বলেছে, তামিম চৌধুরী গুলশানে হামলা করার জন্য মারজান, চকলেট ও আমাকে নির্দেশ দিয়ে বলে যে রোহান, নিবরাস, খায়রুল ইসলাম পায়েল ওরফে বাঁধন, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ, মোবাশ্বের যেন সন্ধ্যার পর আলাদা আলাদা করে হোটেলটি রেকি করে আসে। তামিমের কথামতো মারজান, রোহান ও নিবরাসকে নিয়ে ’১৬ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে রেকি করে আসি। পরেরদিন সন্ধ্যায় আবার চকলেট, বিকাশ ও বাঁধনকে নিয়ে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে যাই। রাত আনুমানিক সাড়ে দশটায় বসুন্ধরার বাসায় ফিরে এসে সবার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করি। হামলার রাতে মাস্টারমাইন্ড তামিম ও তার সহযোগীদের অবস্থান হলি আর্টিজানে হামলার ওই রাতে মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী ও নূরুল ইসলাম মারজান শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় অবস্থান করে। ভেতরে থাকা জঙ্গীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ও বার্তা আদান-প্রদানের প্রমাণও পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ সময় মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকার একটি বাসায় অবস্থান করছিল জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী। রাজীব তার জবানিতে বলেছে, “রাত ৯টার দিকে মারজান ভাই আমাকে থ্রিমা আইডির মাধ্যমে হলি আর্টিজানে হামলার আপডেট দেখতে বলে। তখন আমি নামাজ, দোয়া ও জিকির করতে থাকি। যেন আল্লাহ আমাদের অপারেশন সফল করে এবং আমার ভাইদের শহীদ করে। সারারাত নেটের মাধ্যমে আমাদের অপারেশনের সফলতা দেখে আমি খুব খুশি ছিলাম। সকাল ৭টার দিকে মারজান ভাই আমাকে থ্রিমা আইডির মাধ্যমে জানায় যে, সেনাবাহিনী প্রস্তুত কিছুক্ষণের মধ্যে ভাইয়েরা শহীদ হবে। আপনারা দোয়া করবেন। আমি ও আমার পরিবার ভাইদের জন্য দোয়া করি এবং সেনাবাহিনীর অভিযানে ভাইয়েরা শহীদ হলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলি।” অপারেশন গাজওয়াত-২০১৬ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার একটি নাম দিয়েছিল জঙ্গীরা। তা হলো ‘অপারেশন গাজওয়াত-২০১৬’। এই নাম দিয়েই প্রটেক্টেডটেক্সট-এ ইউজার আইডি খুলেছিল জঙ্গীরা। অপারেশন গাজওয়াত-২০১৬-এর হামলা দলের প্রধান বা কমান্ডার নির্বাচন করা হয় রোহান ইমতিয়াজকে। রোহানই হলি আর্টিজানে প্রবেশের পর সারারাত অপর চার হামলাকারীকে নির্দেশনা দেয়। এমনকি ভেতর থেকে বাইরে থাকা তামিম ও মারজানের সঙ্গে যোগাযোগও করে সে। হলি আর্টিজান বেকারিতে যে হামলা হয়েছে, জঙ্গীবাদের ভাষায় এটাকে ‘ইঙ্গিমাসি’ হামলা বলে।
×