ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমিরাতের শ্রমবাজার খুলে দেয়ার ইঙ্গিত

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

আমিরাতের শ্রমবাজার খুলে দেয়ার ইঙ্গিত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য সেখানকার শ্রমবাজার পুনরায় খুলে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। দুবাই ওয়ার্ল্ড সেন্টারে দুবাই এয়ার শো ২০১৯-এর ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবুধাবির যুবরাজ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্রবাহিনীর ডেপুটি সুপ্রীম কমান্ডার শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান এক সৌজন্য সাক্ষাতকালে এ ইঙ্গিত দেন। খবর বাসসর। বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য শীঘ্রই তার দেশের শ্রমবাজার পুনরায় খুলে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে যুবরাজ নাহিয়ান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার পরবর্তী আমিরাত সফরকালে আপনাকে এ প্রশ্নটি আর করতে হবে না।’ তিনি বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য আগের চেয়ে বেশি ওয়ার্ক পারমিট দেয়ারও ইঙ্গিত দেন। সাক্ষাত শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, যুবরাজ বাংলাদেশ থেকে চাল আমদানিরও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি উদ্বৃত্ত চাল উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের চাল উৎপাদন করছে। আমরা বিভিন্ন দেশে চাল রফতানি করছি।’ যুবরাজ বলেন, তারা বাংলাদেশ থেকে সেরা মানের চাল আমদানি করতে চায়। তার দেশ তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের চাল দেখার জন্য বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে। বৈঠককালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন। দুবাই এয়ার শোতে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার পাঁচ দিনব্যাপী ষোড়শ দ্বিবার্ষিক এয়ার শো ইভেন্ট ‘দুবাই এয়ার শো-২০১৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। দুবাইয়ের ভবিষ্যত বিমানবন্দরের (দুবাই আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবেও পরিচিত) দুবাই ওয়ার্ল্ড সেন্টারে এই এয়ার শোটি শুরু হয়েছে। ১৭ থেকে ২১ নবেম্বর প্রতিদিন স্থানীয় সময় দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দুবাইয়ের আকাশে দ্বিবার্ষিক এয়ার শো অনুষ্ঠিত হবে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে সফল এয়ার শো এবং মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকা বৃহত্তম এরোস্পেস ইভেন্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে এই এয়ার শোতে অংশ নেন। পরে তিনি দুবাই ওয়ার্ল্ড সেন্টারে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফ্লাইং ডিসপ্লে উপভোগ করেন। এ বছর সারাবিশ্বের ৮৭ হাজারের বেশি ট্রেড ভিজিটর ও এক হাজার তিন শ’র বেশি এক্সিবিটর দুবাইয়ের ভবিষ্যৎ বিমানবন্দর দুবাই ওয়ার্ল্ড সেন্টারে এ উপলক্ষে সমবেত হয়েছেন। এছাড়াও এতে ১৬০ দেশ থেকে ১৬৫ বিমান অংশ নিচ্ছে। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত এয়ার শো সাফল্যকে এবারের শোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের এই শোতে ১১ হাজার তিন শ’ ৮০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যে অর্ডার পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল এয়ারবাসের কাছে ৪৩০ বিমানের জন্য ৪ হাজার নয় শ’ ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ইন্ডিগো পার্টনার্স অর্ডার এবং ফ্লাই দুবাইয়ের সঙ্গে বোয়িংয়ের ২ হাজার সাত শ’ মার্কিন ডলার চুক্তি। ১৯৮৯ সালে দুবাই এয়ার শোটি প্রথম প্রদর্শিত হয়। এটি এখন বেসামরিক বিমান শিল্পের জন্য একটি বৈশ্বিক প্লাটফরমে পরিণত হয়েছে। এখানে বিশ্বের বিমান প্রস্তুতকারক এখানে তাদের প্রস্তুতকৃত নতুন মডেলের বিমান প্রদর্শন ও বিক্রয় করেন। পাশাপাশি, এখানে প্রাইভেট ও পাবলিক সেক্টরের কোম্পানিগুলো নতুন নতুন প্রযুক্তি, সুযোগ এবং এই শিল্পের প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়েও আলোচনা করতে পারেন। ইউএই’র বিমান কোম্পানিগুলো বেশ কিছু নতুন অর্ডার ঘোষণা করে ও তাদের আগের চুক্তিগুলো নিশ্চিতের মাধ্যমে একে এই অঞ্চলের সবচেয়ে সফল ও বৃহত্তম প্রদর্শনিতে পরিণত করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আবুধাবির শাংরিল-লা হোটেলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ ইমরান আয়োজিত এক নৈশভোজে তিনি যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী সফরকালীন সময়ে ওই হোটেলেই অবস্থান করবেন। প্রধানমন্ত্রী দুবাই এয়ার শো-২০১৯ ও অন্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চারদিনের সরকারী সফরে শনিবার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাত পৌঁছেন। আমিরাতের আরও বড় বিনিয়োগ প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক সুবিধার্থে বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে বিশেষ করে তৈরি পোশাক, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ইউএই’র উদ্যোক্তাদের আরও বড় আকারের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চলে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এবং হাইটেক পার্কে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’ আবুধাবিতে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকালীন হোটেল সাংরি-লা’তে রবিবার তার সম্মানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগদান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস সুবিধা এবং এক শ’র অধিক অবকাঠামোসহ নানা প্রয়োজনীয় সুবিধাদি প্রদান করছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সব থেকে সহনীয় বিনিয়োগ নীতি বিদ্যমান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা তৈরি পোশাক শিল্প, ভবন অবকাঠামো নির্মাণ, নির্মাণ শিল্প, যোগাযোগ, জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, জাহাজ নির্মাণ, পর্যটন, হাল্কা প্রকৌশল, শিল্প পার্ক এবং পণ্য সরবারাহের কেন্দ্র হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শীর্ষ উদ্যোক্তাগণ ও ইউএই’র স্বনামধন্য ব্যবসায়ী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং তাদের সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দেশে বিদ্যমান বৈদেশিক বিনিয়োগ সুরক্ষা নীতিমালার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইন দ্বারা বিদেশী বিনিয়োগকে সুরক্ষা প্রদান, শুল্ক রেয়াত, যন্ত্রাংশ আমদানিতে স্বল্প শুল্ক, যে কোন সময় লাভ এবং আসলসহ প্রস্থানের সুবিধা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তৈরি পোশাকের পরেই আমাদের রফতানির ক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক পণ্য উল্লেখযোগ্য আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আরব আমিরাতের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের কৃষিজাত এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই।’ বাংলাদেশ এবং আরব আমিরাতের মধ্যে পারস্পরিক ব্যবসা এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারী ও বেসরকারী উভয় খাতেই বাংলাদেশ এবং ইউএই’র যৌথ উদ্যোগের জন্য সম্ভাবনাময় বেশ কিছু খাত খুঁজে বের করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও আমিরাতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও আমিরাত অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের পণ্য আমদানির জন্য ইউএই’র প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে ইউএই ফার্মাসিউটিক্যাল সামগ্রী, পাট ও পাটজাত পণ্য, সিরামিক, চামড়া, খাদ্যদ্রব্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, নিটওয়্যার, ফ্রোজেন ফুড, বস্ত্র, হোম টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য এবং প্রকৌশল সামগ্রী আমদানি করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউএই সফরের কথা স্মরণ করেন যখন বাংলাদেশ ও ইউএই’র মধ্যে বন্দর স্থাপন, শিল্প পার্ক, বিদ্যুত কেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, এলএনজি সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সেই সফরকালে আমরা ইউএই’র পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিলাম। ইউএই’র সংস্থা বাংলাদেশের বিদ্যুত এবং সৌরশক্তিসহ জ্বালানি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা তখন এলএনজি টার্মিনাল এবং বন্দর প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ দেখিয়েছিল। আমরা তখন আমিরাত অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রকল্প চালুর প্রস্তাব পেয়েছিলাম।’
×