ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে চাই ॥ সুজন মাহাবুব

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে চাই ॥ সুজন মাহাবুব

সুজন মাহাবুব। টগবগে তরুণ, পুরোদস্তুর একজন শিল্পী। ভোলা জেলার লালমোহন থানার মনপুরা দ্বীপের সন্তান সুজন মাহাবুব স্বীয় দক্ষতায় একজন প্রতিভাবান সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে ইতোমধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। লোকনাট্যদলের সদস্য সুজন মাহাবুব পারফর্মিং আর্ট নিয়ে কাজ করছেন, গবেষণা করছেন। পাশাপাশি টিভি এবং চলচ্চিত্রেও কাজ করেন। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে সুজন মাহাবুব অভিনীত চলচ্চিত্র ‘আহত ফুলের গল্প’। অন্তু আজাদ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি দেশের কয়েকটি স্থানে বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হবে। এ চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে সুজন মাহাবুবের সঙ্গে কথা হয়। ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্র নিয়ে জানতে চাই। সুজন মাহাবুব : তরুণ প্রতিভাবান নির্মাতা অন্ত আজাদের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে ‘আহত ফুলের গল্প’। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনায় রয়েছে ওশান মাইন্ড এন্টারটেইনমেন্ট। আমার পাশাপাশি চলচ্চিত্রে আরও অভিনয় করেছেন গাজী রাকায়েত, তাহিয়া খান, আলী আহসান, অনন্যা হক, শেলী আহসান, জয়া, অভি চৌধুরী, শান্ত কু-ু, কামরুল হাসান, তৌহিদুল আলম, সজীব, রিফাত, পিয়ারা বেগম, শহীদুল ইসলাম, ওমরচাঁদ, ইকতারুল ইসলাম, আরিফ, মিনহাজ, তাজিন, রাব্বি, শিরিনসহ আরও অনেকে। চলচ্চিত্রে ৪টি গান ও একটি বিয়ের গীত রয়েছে। এর মধ্যে মৌলিক গান তিনটি লিখেছেন টোকন ঠাকুর, কামরুজ্জামান কামু, সোলায়মান আকন্দ। গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন যথাক্রমে পিন্টু ঘোষ, কামরুজ্জামান রাব্বি ও লিপু অসীম। রবীন্দ্রসঙ্গীতটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন রোকন ইমন। আর বিয়ের গীতটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন উত্তরবঙ্গের স্থানীয় শিল্পীরা। চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণ করেছেন মোঃ আরিফুজ্জামান, সম্পাদনা করেছেন সৈকত খন্দকার, আবহসঙ্গীত ও গানের সঙ্গীত আয়োজনে পিন্টু ঘোষ ও রোকন ইমন, সাউন্ড শৈব তালুকদার, কালার রাশেদুজ্জামান সোহাগ, টাইটেল এ্যান্ড ভিএফএক্স নাজমুল হাসান। চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ শূটিং হয়েছে পঞ্চগড়ের মাটিয়ারপাড়া গ্রামে। ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? সুজন মাহাবুব : পিতৃতান্ত্রিক বাংলাদেশের মুসলিম সমাজব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি ও সংস্কৃতি সংস্পর্শ; এ তিনটি বিষয় যথাক্রমে শাপলা, কামিনী এবং মোহনা নামের তিনজন মেয়ের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করেছে তাই নিয়ে আমাদের ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্রের মূল গল্প। এছাড়াও এ চলচ্চিত্রে আছে শাপলা-সবুজের অপরিণত প্রেমকাহিনী। এ চলচ্চিত্রে ফ্যান্টাসি না থাকলেও চারপাশে দেখা ঘটনার বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রচলিত জীবনের গভীর সঙ্কটকে উপলব্ধির চেষ্টা রয়েছে। সিরিয়াস বিষয় গল্পের বিষয়বস্তু হলেও দৈনন্দিন জীবনে বয়ে চলা হাসি-ঠাট্টা, গান-গীত এবং একটি প্রেমকাহিনীর মধ্য দিয়ে গল্পের মূল সুর প্রবাহিত। এছাড়াও বর্ণনাত্মক রীতির সরল ভঙ্গিতে গল্প বলার ধরনটিও আধুনিক যান্ত্রিক চাপে পিষ্ট মানুষের আবেগ ও উপলব্ধিকে একই সঙ্গে স্পর্শ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। চলচ্চিত্রে আপনার চরিত্রটি কেমন ছিল? সুজন মাহাবুব : ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্রে আমি আত্মত্যাগী এক যুবকের চরিত্র রূপায়ণে দেখা যাবে। আমার চরিত্রের নাম সবুজ। গ্রামের স্কুলে পড়াকালে একই স্কুলের শাপলার সঙ্গে সবুজের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অবুঝ এই সম্পর্ক এক সময় ভালবাসায় রূপ নেয়। চলচ্চিত্রের এ চরিত্রে কাজ করে বেশ ভাল লেগেছে। চলচ্চিত্রের বিশেষত্ব কী ছিল? সুজন মাহাবুব : ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্রে ৪টি পূর্ণাঙ্গ গান এবং একটি উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত শুনতে পাবেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও বিয়ের গীতটি ছাড়া, বাকি গান তিনটি মৌলিক। গানগুলো চলচ্চিত্রের অন্যতম শক্তি। এছাড়া শিল্পীদের অভিনয় দর্শকদের আনন্দ দেবে। আর সবচেয়ে শক্তিশালী যে বিষয়টি সেটি হলো চলচ্চিত্রের গল্প। আর পঞ্চগড়ের মাটিয়ারপাড়া গ্রামে এ চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ শূটিং হয়েছে। যা দর্শকদের কাছে দৃষ্টিনন্দন মনে হবে। শিল্প চর্চার শুরু থেকে এ পর্যন্ত আসা কেমন ছিল? সুজন মাহাবুব : ভোলার লালমোহনের সাংস্কৃতিক সংগঠন তোলপাড় কৃষ্টি সংসারে শিল্প নাটকে অভিনয় করি। এক সময় ঢাকায় এসে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্য সংগঠন লোক নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হই। দলের একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে আমি বিভিন্ন প্রযোজনায় নিয়মিত অংশ নেই। এছাড়া কয়েকটি টিভি নাটক, বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে কাজ করেছি। পাশাপাশি সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারি-১ এবং গ্যালারি-৬ এর প্রদর্শিত ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বপ্ন সারথী’ প্রদর্শনী অংশে তরুণ ১০ শিল্পীর একজন হিসেবে অংশ নিয়েছি। প্রদর্শনীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক এবং সংশ্লিষ্ট উচ্চারিত সংলাপের অঙ্কিত দৃশ্যকল্পের সঙ্গে জামদানি শাড়ি মেশানো আমার অঙ্কিত ক্যানভাস। এছাড়া রাশিয়ান কথাসাহিত্যিক দস্তয়ভস্কির ছোট গল্প আশ্রয়ে ‘হার্ট অব আর্ট’ স্লোগানে ‘ভাসানে উজান’ শিরোনামে পারফর্মেন্স আর্ট উপস্থাপনার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। ভবিষ্যতে কাজের ব্যস্ততা কী নিয়ে? সুজন মাহাবুব : দেখুন আমি সবসময় চর্চা করি, পারফর্মেন্সের অনুশীলনের মধ্যেই থাকি। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চাই। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি, অনুশীলন ও চর্চা চালিয়ে যাচ্ছি। আশাকরি দেশের সংস্কৃতির জন্য কিছু হলেও করতে পারব। -সাজু আহমেদ
×