ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এভাবেই এগিয়ে যেতে চান আগরওয়াল

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

এভাবেই এগিয়ে যেতে চান আগরওয়াল

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, অজিঙ্কা রাহানে, মোহাম্মদ শামি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা... সবাই তারকা। প্রতিষ্ঠিত পারফর্মার। যে কেউ যে কোনদিন নায়ক বনে যেতে পারেন। সেখানে তুখোড় এই দলটাতে জায়গা করে নিয়েই সমানে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশেকে ইনিংস ও ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে ভারত। ২৪৩ রানের অনবদ্য ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ আগরওয়াল। গত বছর ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া সফরে মেলবোর্নে অভিষেক। ক্যারিয়ারের মাত্র ৮ম টেস্টে এটি তার দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। তিন সেঞ্চুরির দুটিকেই ডাবলে রূপ দিলেন ২৮ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যান। হাফ সেঞ্চুরিও সমান তিনটি। ক্যারিয়ারে দ্রুত দুটি ডাবল সেঞ্চরির পথে তিনি পেছনে ফেলে দিয়েছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও বিনোদ কাম্বলিকে। কর্নাটকে জন্ম নেয়া এ ক্রিকেটারের চোখে আরও বড় স্বপ্ন। এখানেই থামতে চান না। আগরওয়াল বলেন, ‘এ হাসিটা আমি আরও অনেকদিন বয়ে নিয়ে যেতে চাই। প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে এবং প্র্যাকটিসে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু টেস্টে এই প্রথম। ভারতের হয়ে খেলা ছিল আমার জীবনের বড় স্বপ্ন। সেখানে যেভাবে শুরু করতে পেরেছি, তা নিয়ে সন্তুষ্ট। আমি যখন ১৫০ পূর্ণ করি তখন ননস্ট্রাইকিংয়ে কোহলি বলেছিল, ২০০ অসম্ভব নয়। ওপেনিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ভারতের হয়ে নিয়মিত রান করতে চাই, দলকে জেতাতে চাই।’ ৩৩০ বলে ২৮ চার ও ৮ ছক্কায় আগরওয়াল তার ২৪৩ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। ১৯৬ রানে দাঁড়িয়ে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে ছক্কা হাঁকিয়ে ডাবল সেঞ্চুরিতে পা রাখেন। ৮ ছক্কার ৬টিই মেরেছেন মিরাজকে। আউটও হয়েছেন তারই বলে। গত মাসে বিশাখাপত্তমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১৫ রান করা আগরওয়াল ওই সিরিজেই পুনে টেস্টে খেলেন ১০৮ রানের ইনিংস। তাতে বিনোদ কাম্বলির পর সবচেয়ে কম ইনিংস খেলে (১২ ইনিংস) ক্যারিয়ারে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির কৃতিত্ব দেখালেন। এ যাত্রায় পেছনে ফেলেন কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে (১৩ ইনিংস)। তবে রেকর্ড মাথায় ছিল না আগারওয়ালের, ‘আসলে বিষয়টা আমি ঠিক ওইভাবে দেখিনি। ক্রিকেটে আমার যাত্রাটা হয়তো অন্য কারও মতো হবে না। আর এই বিষয়টা আমি তাদের মতো দু’জনের সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। তাছাড়া আমার পরে হয়তো কেউ আরও দ্রুত এই রান করে ফেলতে পারে। পরবর্তীতে হয়তো কেউ এমন কিছু করার সুযোগ পেতে পারে। তবে এই বিষয়টা আমাদের কারোরই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। যেসব বিষয় আমার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে সেগুলো নিয়েই আমি ভাবতে চাই। দেশের হয়ে খেলতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। দলের হয়ে অবদান রাখতে পেরে আমি খুশি।’ তাই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি?, ‘না, আমি ছক্কা হাঁকানোর বিষয়টি ভাবিনি। আমি চিন্তা করছিলাম যে যদি আমার সুবিধামতো বল না পাই তাহলে পরবর্তী ৪-৫ ওভারে ১, ১, ১, ১ রান করে নিব। কারণ তখন আমি ১৯৬ রান নিয়ে ব্যাট করছিলাম। তবে আমি বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কয়েকটা বেশ ভাল শটও খেলেছিলাম। যদি আমার সুবিধামতো বল পাই তাহলে নির্দিষ্ট কিছু স্ট্রোক খেলব। তখন একটা পেয়ে যাই এবং ছক্কা হাঁকাই।’ শনিবার তৃতীয়দিনের দ্বিতীয় ভাগে খেলার ফল এসেছে, ম্যাচসেরা হয়েছেন আগরওয়াল। তবে শুক্রবার ডাবল সেঞ্চুরির দিনেই সুপার কোহলির সঙ্গে দারুণ মুহূর্ত কাটিয়েছেন সেনসেশনাল ওপেনার। বিসিসিআই টিভিতে অধিনায়ককে অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, ‘দারুণ। দলের প্রয়োজনে বড় ইনিংস খেলতে পেরে বেশি ভাল লাগছে।’ বড় ইনিংস খেলার রহস্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক ক্রিকেটারের জীবনে খারাপ সময় আসে। আমারও এসেছিল। এখন যখন ব্যাটে-বলে হচ্ছে তখন যত সম্ভব রান করে যাওয়াই লক্ষ্য। এই মানসিকতাটাই হয়তো কাজ করছে।’ গাট্টাগোট্টা শরীরের আগরওয়ালের ফিটনেস সতীর্থদের মতো অতটা ভাল নয়, ‘সুপার ফিট নই বলে বড় ইনিংসের সুযোগ হাতছাড়া করার উপায় নেই। হ্যাঁ ফিটনেসে আরও উন্নতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তোমাকে (কোহলি) দেখেই তো এখন সবাই আরও ফিট হতে চায়। আমিও চাই। ভারতীয় দলে এখন যে তীব্র প্রতিযোগিতা সেখানে টিকে থাকতে হলে ফর্ম-ফিটনেস দুটোই সমান হতে হবে।’ আগরওয়ালের ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক কোহলি নিজেও মুগ্ধ, ‘মায়াঙ্কের যেটা ভাল লেগেছে সেটা হলো ও বুঝতে পারছে দলে নিজের জায়গা মুজবুত করতে হবে, দলকে জেতাতে হবে। ওর ব্যাটিং গড় প্রায় ৬০। দারুণ শুরু করেছে। আশাকরি এভাবে আরও এগিয়ে যাবে।’
×