ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হতাশার মাঝেও আছে কিছু অর্জন!

প্রকাশিত: ১২:১৭, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

হতাশার মাঝেও আছে কিছু অর্জন!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ভারত সফরে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ দলে নেই সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের মতো দুই অপরিহার্য ক্রিকেটার। তাই বিশ্বসেরা টেস্ট দলের বিপক্ষে অভিজ্ঞতাটা বেদনার হবে এমনটাই শঙ্কা ছিল। ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্টে সেটাই সত্য হয়েছে। তৃতীয়দিন শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই বিষাদময় হারের স্বাদ নিয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। এরপরও কিছু প্রাপ্তি খুঁজলে শুধু আবু জায়েদ রাহীর দুর্দান্ত বোলিং এবং মুশফিকুর রহীমের উভয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের খেলাটাই। তবে এই প্রাপ্তির মধ্যেও আছে অস্বস্তির ছোঁয়া। বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করার পথে মুশফিক নিশ্চিত আউট থেকে বেঁচে গেছেন ৩ বার। দ্বিতীয় ইনিংসেও সাবলীল ছিল না তার ব্যাটিং, একটি ক্যাচ এবং আরেকটি নিশ্চিত রানআউট থেকে বেঁচে যান তিনি। তাছাড়া ৬৪ রান করার পথে দলের সপ্তম উইকেট পতনের পর টেলএন্ডার তাইজুল ইসলাম ৪৩ বল খেললেও তখন সেট ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের রান বাড়িয়ে নেয়ার দিকে মনোযোগী হননি তিনি। আর রাহী ৪ উইকেট শিকার করলেও সে জন্য বেশ কিছু আলগা বলের খেসারত দিয়েছেন অনেক বেশি রান দিয়ে। ইন্দোর টেস্টে নামার আগে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংটাই কিছুটা ভরসা করার মতো ছিল। কারণ দুই অভিজ্ঞ মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছাড়াও টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুল হক সৌরভ ছিলেন ব্যাটিং লাইনআপে। আর সাম্প্রতিক সময়ে বোলিংয়ে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ও অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যতীত বাকিদের অবস্থা বেশ নাজুক। বিশেষ করে পেস বোলিংয়ে তো ভরসা করার মতো কেউ নেই। আর ইন্দোরের উইকেটে যখন সবুজ ঘাসের উপস্থিতি তখন স্পিনারদের দিয়ে আহামরি কিছু করা যাবে সেই সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়। বাস্তবে সেটিই হয়েছে। তাইজুল-মিরাজরা ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপে বিন্দুমাত্র সমস্যা তৈরি করতে পারেননি। বর্তমানে ওপরের সারির ৪ ভারতীয় ব্যাটসম্যানই আছেন ফর্মের তুঙ্গে। তাই তারা ব্যাটিং স্বর্গ বানিয়ে নিয়েছেন ইন্দোরের উইকেটকে, রান তুলেছেন ওয়ানডে মেজাজে খেলে। অবশ্য অন্যরা যেখানে পড়ে পড়ে মার হজম করছিলেন, সেখানে রাহী শুধু মার খেয়ে নিস্তেজ হয়ে যাননি। তিনি ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন। তবে আলগা বল প্রচুর করার কারণে অন্যদের মতোই বেদম পিটুনি হজম করে ২৫ ওভার খরচা করেন ১০৮ রনে। ঘাসের উইকেটে ফর্মে থাকা ভারতীয় পেসাররা দারুণ সব সুইংয়ে উভয় ইনিংসে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন। রাহী সুইং বোলার হওয়ার সুবিধাতেই রোহিত শর্মা, চেতেশ্বর পুজারা, বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের মতো নিয়মিত পারফর্মারদের সাজঘরে ফিরিয়েছেন। তার এই উইকেটগুলো হয়তো আরও দ্রুতই ইন্দোর টেস্ট শেষ হওয়ার পথে কিছুটা বাধা তৈরি করেছে। নখ-দন্তহীন ভোঁতা বাংলাদেশী বোলিং বিভাগে একমাত্র করিৎকর্মা হিসেবে তাই রাহীর বোলিংটা প্রাপ্তিরই। অন্তত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বোলিং বিভাগে পেসার হিসেবে ভরসা করার মতো একজনকে তো ইন্দোর থেকে পেয়ে গেল বাংলাদেশ দল। ভারতীয় পেসারদের সুইং, বুদ্ধিদীপ্ত চাতুর্যে দারুণ লেন্থে ফেলা বল আর বাউন্সের মুখে রান করা দূরের কথা, বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের উইকেটে টিকে থাকতেই নাভিশ্বাস উঠে যায়। এমনকি মুশফিকের মতো বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ৬৮ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাটসম্যানও প্রথম থেকেই এলোমেলো ছিলেন। ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ আর অশেষ কৃপায় ব্যক্তিগত ৩, ৪ ও ১৪ রানের সময় নিশ্চিত আউট থেকে বেঁচে যান তিনি। তবে ৩ বার জীবন ফিরে পাওয়ার পরও টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে দু’টি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশফিক বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। মাঝপথেই দলকে আরও বিপর্যয়ে ফেলে আউট হয়েছেন ৪৩ রানে। অন্যদের ব্যর্থতা আরও চরম শিখরে ছিল বলেই তিনি প্রথম ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক হতে পেরেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতীয় পেসাররা একইভাবে আগ্রাসন চালিয়েছেন। দলীয় ৩৭ রানেই চলে যায় ৩ উইকেট। এরপর মুশফিক ক্রিজে এসে প্রথম থেকেই ছিলেন অগোছালো। তার ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ যে একেবারেই ছিল না কিংবা তিনিও ভারতীয় বোলিংয়ের বিপক্ষে অসহায় ছিলেন তা বোঝা গেছে তার ব্যক্তিগত ৪ রানের সময়ই। পেসার মোহাম্মদ শামির বলে ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে স্লিপে রোহিতের কাছে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান। দ্বিতীয় ইনিংসেও বিধাতা সুপ্রসন্ন থেকেছেন শুরু থেকেই। এরপর নিশ্চিত একটি রানআউট থেকেও রক্ষা পান সে কারণেই। এতকিছুর পরও টিকেই থাকেন মুশফিক। অপরপ্রান্তে মোহাম্মদ মিঠুন (১৮) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১৫) সাজঘরে চলে যান একক যোদ্ধা হিসেবে মুশফিককে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়ে। অতি সাবধানী মুশফিক উইকেট আঁকড়ে থাকায় ছিলেন মনোযোগী যা প্রশংসনীয়ই ছিল। ষষ্ঠ উইকেটে ৬৩ রানের জুটি গড়ে ওঠে শুধু লিটন কুমার দাসের ৩৯ বলে ৩৫ রানের মারমুখী ইনিংসের সুবাদে। সপ্তম উইকেটে মিরাজের সঙ্গেও ৫৯ রানের দারুণ জুটি হয়েছে যার মধ্যে মিরাজের অবদান ৩৮। অর্থাৎ দারুণ টেস্ট মেজাজেই ব্যাট করেছেন মুশফিক। তবে মিরাজ সাজঘরে ফিরে যাওয়ার পর তিনি উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ার পরও যে মনোভাবে ব্যাট চালিয়েছেন তা একটি প্রশ্নবোধক চিহ্নই এঁকে দিয়েছে। যখন টেলএন্ডার ব্যাট করতে আসেন, স্বাভাবিকভাবেই একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান উইকেটে সেট অবস্থায় থাকলে দ্রুত রান করে দলের অবস্থানকে আরও ভাল করার দিকে মনোযোগী হন। কিন্তু তাইজুল ৪৩টি বল ঠেকিয়ে দিয়েছেন দাপুটে ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে, সেখানে একই সময়ে মাত্র ২৭ বল খেলে মুশফিক করেছেন মাত্র ৮ রান। এমনকি দুইবার তিনি ওভারের শুরুতেই সিঙ্গেলস নিয়ে ননস্ট্রাইকিংয়ে চলে গেছেন নিজে স্ট্রাইকিংয়ে না থেকে। একজন দেশসেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান, অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যান ৬৮ টেস্ট খেলার পর এমন মনোভাব দেখিয়েছেন। অথচ তখন অর্ধশতক পেরিয়ে গেছেন মুশফিক, ১১৮টি বলও খেলেছেন। শেষ পর্যন্ত আউটও হয়ে গেছেন নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাই ১৫০ বলে ৭ চারে ৬৪ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেও পূর্ণ প্রশংসা পাওয়ার কাজ কি করতে পেরেছেন মুশফিক? তবে এই ৬৪ রানের মাধ্যমে এখন ভারতের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা ব্যাটিং পারফর্মার হয়ে গেছেন তিনি। নিচে নেমে গেছেন ৬ টেস্টে ৩৮৬ রান করা মোহাম্মদ আশরাফুল। এখন ভারতের বিপক্ষে মুশফিকের রান ৫ টেস্টে ৪৪৪।
×