ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিশুদের চার প্রস্তাব ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলা হবে’

রাজধানীকে শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে ॥ রাজউক চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ১২:০২, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

রাজধানীকে শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে ॥ রাজউক চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকাকে শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ। একই সঙ্গে মহানগরকে শিশুবান্ধব করতে তাদের দেয়া সব প্রস্তাব রাজউক প্রণয়নাধীন ড্যাপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি শিশুদের তাদের প্রস্তাব বা অভিমতগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিংয়ের আহ্বান জানান। শনিবার রাজউকের সভাকক্ষে ঢাকার সংশোধিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) শিশুদের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য শিশুদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। শিশুবান্ধব আদর্শ নগরী গড়ে তুলতে ও শিশুদের চাহিদা ও স্বপ্নের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে রাজউক ও সেভ দ্য চিলড্রেনের যৌথ উদ্যোগে এ সভা হয়। অনুষ্ঠানে শিশুদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অন্যতম চারটি প্রস্তাব হচ্ছে : নিকটতম দূরত্বে স্কুল স্থাপন, পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও পার্ক তৈরি, নগরে সবুজ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ও নিরাপদ আবাসিক এলাকা নিশ্চিত করা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি সালমা এ শফি। বিশেষ অতিথি সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সাবেক কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের (সিডিএমপি) প্রকল্প পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম, ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি ডিরেক্টর সৈয়দ মতিউল আহসান বক্তব্য রাখেন। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, শিশুরা তাদের প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে খেলার মাঠের অভাবকে। আমি তাই রাজউকের সব প্রকল্পের খালি খ- জমি কাউকে বরাদ্দ না দিয়ে বিনোদন বা অবকাশ যাপনের জন্য পার্ক, সবুজ চত্বর করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। তিনি শিশুদের মতামত নিয়ে নগর পরিকল্পনা করা হচ্ছে-এটা গুরুত্বসহকারে প্রচারের জন্য প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতি অনুরোধ জানান। ড. সুলতান বলেন, তোমরা (শিশুরা) নিজেরা সচেতন হলে তোমাদের বাড়ি গুলশানের মতো সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করতে পার। রাজউক থেকে নক্সা অনুমোদন করিয়ে সেই নক্সা অনুযায়ী বাড়ি তৈরি করতে বড়দের বাধ্য করতে পার। শিশুদের মোবাইল বা ট্যাবে সময় না কাটিয়ে বেশি পড়াশোনা করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়ন শুধু রাজউকের একার কাজ নয়, এর সঙ্গে সরকারী-বেসরকারী অনেক সংস্থা জড়িত। পরিকল্পনামাফিক কাজ করে ঢাকা শহরের উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ড্যাপ প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত দেশসেরা বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেছি, দেশের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছি। সুতরাং ভবিষ্যতে তাদের প্রণীত ড্যাপের মাধ্যমে আমরা পরিকল্পিত ঢাকা শহর পাব বলে আশা রাখি। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাস্টার প্ল্যান করেছেন। নদী দূষণরোধে ও নদীগুলোতে টলটলে পরিষ্কার পানি ফিরিয়ে আনতে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি সালমা এ শফি বলেন, বড়দের সঙ্গে শিশুরা পরিকল্পনা করলে শহর বাসযোগ্য হবে। জায়গা কম, কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব। অতিরিক্ত সচিব ও সাবেক কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের (সিডিএমপি) প্রকল্প পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশের সব কিছুই রাজধানী নিয়ে করা হচ্ছে। ফলে বিকেন্দ্রীকরণ না হলে পরিকল্পিত ঢাকা নগরী গড়া সম্ভব নয়। শুধু একটি নির্দিষ্ট এলাকা নয় নগরীর সকল পাড়া-মহল্লায় নাগরিক সুবিধা দেয়ার বিষয়টি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি ডিরেক্টর সেয়দ মতিউল আহসান বলেন, আমাদের মেগা প্রকল্পগুলো শিশুদের কথা ভেবে করা হয় না। পরিকল্পিত শহর গড়ার ক্ষেত্রে শিশুরা তাদের চাহিদা মোতাবেক কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। শিশুরা সবার মঙ্গল কামনা করে। তাই তারা যে শহরের স্বপ্ন দেখে সে শহর জনবান্ধব হবে। পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত ঢাকা গড়তে শিশুদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য তিনি রাজউককে ধন্যবাদ জানান। ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপকে উপযোগী ও বাস্তবসম্মত করতে আমরা সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মতামত নিয়েছি। শিশুরা কেমন ঢাকার স্বপ্ন দেখে তা জানতে আমরা এর আগে এ বছরের মে মাসে তাদের নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করেছি। সেখানে তারা তাদের মূল্যবান মত দিয়েছে। তাদের সেই মতামতসমূহ চূড়ান্ত করার জন্যই আজকের এই সভা। তিনি বলেন, বাড়ির কাছাকাছি হেঁটে যাওয়ার মতো মানসম্মত স্কুলের অভাব একটি অন্যতম বড় সমস্যা বলে শিশুরা মত দিয়েছে। তাই নতুন ড্যাপে আমরা স্কুল জোনিংয়ের প্রস্তাব রেখেছি। এতে এলাকাভিত্তিক স্কুল-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) আজহারুল ইসলাম খানসহ রাজউক ও সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
×