ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঠাকুরগাঁওয়ে শতবিঘা জমির মালিক হয়েও তারা ভূমিহীন

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

ঠাকুরগাঁওয়ে শতবিঘা জমির মালিক হয়েও তারা ভূমিহীন

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৬ নবেম্বর ॥ সদর উপজেলার চোংগাখাতা গ্রামে প্রায় শতবিঘা জমির মালিক হয়েও মকছেদ ও জমিলা নামে ভাই ও বোন এখন ভূমিহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা বাবার রেখে যাওয়া জমিতে প্রবেশ করতে পারছে না । নিজের জমিতে ঘর তুলতে না পেরে পাশের জেলার একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন এই দুই ভাই-বোন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মকছেদের বয়স ছিল পাঁচ বছর ও জমিলার বয়স চার বছর। সে সময় তাদের বাবা-মা-ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যরা নির্মমভাবে হত্যাকা-ের শিকার হন। বাবা-মাসহ স্বজনদের হারানোর পর অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়ে উঠে তারা। অনুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় মকছেদের বাবা আব্দুল কাদের ও তার পরিবারের সদস্যরা দুষ্কৃতকারীদের হাতে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। লাশের স্তূপ থেকে মকছেদ ও জমিলাকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয়রা। দেশ স্বাধীনের পর বড় হয়ে তারা জানতে পারেন সিএস ও এসএ রেকর্ড অনুযায়ী রায়তি সূত্রে তার বাবা প্রায় ৯০ একর জমির মালিক। যার কিছু অংশ তখনই বিক্রি করেন। আর বাকি জমি বেহাত হয়ে যায়। সে সময় জায়গাজমির কাগজপত্র খোয়া যাওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। ফলে জায়গাজমির খাজনা ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারেননি। ২০০৮ সালে স্থানীয় ভূমি অফিসের মাধ্যমে মকছেদের কাছে ভূমির খাজনা পরিশোধের নোটিস গেলে তিনি জানতে পারেন কিছু জমি কতিপয় অসাধু ব্যক্তি মিথ্যা, ভুয়া ও বেআইনী ভাবে নাম খারিজ করে নিয়েছেন। এই ঘটনা গড়েয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে জানতে পেরে মকছেদ বাদী হয়ে জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে জমাজমি উদ্ধারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঠাকুরগাঁও বরাবর খারিজ বাতিলের ১৯ টি মিস কেস করেন। এতে বিবাদী পক্ষের কাগজপত্র জাল, ভুয়া, যোগসাজশী, অকার্য্যকর ও প- প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৮ সালের এপ্রিল ও মে মাসে অসাধু ব্যক্তিদের নামে মিথ্যা, ভুয়া ও বেআইনী খারিজ বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। এরপরও মকছেদ থেমে থাকেননি। সর্বশেষ পৈত্রিক জমাজমি ফিরে পেতে ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর বাদী হয়ে বিজ্ঞ যুগ্ম জেলাজজ ১ম আদালতে মামলা দায়ের করেন। মকছেদ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বয়স ৪৮। এই বয়সেও বাবার রেখে যাওয়া জায়গাজমিতে যেতে পারছি না আমরা। তিনি আরও বলেন, একটি বেসরকারী কোম্পানি অর্থের প্রভাব খাটিয়ে আমার এবং আমার লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে পুলিশী হয়রানি করছে। অপরদিকে ২০১০ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চোংগাখাতা গ্রামের আব্দুর রশীদ মাস্টার ক্রয়সূত্রে জমির মালিকানা দাবি করে যশোর উপজেলার নিরিবিলি আবাসিক এলাকার (পুরাতন কসবা) আকিজ গ্রুপের পক্ষে ডাঃ শেখ মহিউদ্দীনের কাছে দলিলমূলে হস্তান্তর করেন। এ প্রসঙ্গে আব্দুর রশীদ মাস্টার খারিজ বাতিলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি জবেদ আলী ম-লের কাছে জমি ক্রয় করে ভোগদখল করে আসছি। এই জমির মালিকানা প্রমাণে যথেষ্ট দলিলপত্রাদি রয়েছে। সেই দলিলমূলে আকিজ গ্রুপের পক্ষে ডাঃ শেখ মহিউদ্দীনের কাছে হস্তান্তর করেছি। দ্বন্দ্ব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর জন্য আকিজ গ্রুপের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম তোতা দায়ী। অপরদিকে আকিজ গ্রুপের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম তোতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সঠিক পথেই এগুচ্ছি। এ ব্যাপারে গড়েয়া গোপালপুর মুন্সীপাড়া গ্রামের ইউনুছ আলী বলেন, এই জমির মালিকানা রক্ষায় উভয়পক্ষ মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে একে অপরের ওপর মামলা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । একই কথা বলেন চোংগাখাতা গ্রামের মহির উদ্দীন ও আশরাফ আলী। ভূমি অধিকার নিয়ে কাজ করেন একটি বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধি ডালিম হোসেন বলেন, জমি ক্রয়ের সময় জমির ওপর মামলা থাকায় আকিজ গ্রুপের লোকজন তা ক্রয় করে ঠিক করেননি।
×