ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুলের অদূরে ইটভাঁটি ॥ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

স্কুলের অদূরে ইটভাঁটি ॥ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ মান্দায় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অদূরে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাঁটি। ইতোমধ্যে ভাঁটিতে নতুন ইটকাটা শুরু হয়েছে। কয়লার পরিবর্তে ভাঁটিতে মজুদ করা হচ্ছে কাঠের খড়ি। অচিরেই এ ভাঁটিতে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করা হবে। এতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে দুটি বিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই ফিক্সট চিমনির সাহায্যে দীর্ঘদিন ধরে এ ভাঁটিতে ইট পোড়ানো হলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বুধবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় ভাঁটিটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা। সরেজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকায় ঝাঁঝরের মোড়ে ভাঁটিটি স্থাপন করেছেন, গোঁসাইপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র নামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। ভাঁটিটির নাম দেয়া হয়েছে যমুনা ব্রিক্স। এ ভাঁটির মাত্র ২৫০ মিটার দূরে রয়েছে একরুখী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একরুখী উচ্চ বিদ্যালয়। রয়েছে দুটি আমবাগান ও আবাসিক এলাকা। ভাঁটিতে ইট পোড়ানো শুরু হলেই এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এবারও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। একরুখী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম জানায়, ‘গতবছর ইটভাঁটি চালু হওয়ার পর হঠাৎ একদিন আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। শ্বাসকষ্টসহ একাধিকবার বমন করেছি। পরে ডাক্তারের নিকট গিয়ে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠি।’ একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন ও মোস্তাকিম জানায়, ইটপোড়ানো শুরু হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হয়। এছাড়া স্কুল মাঠের আম গাছগুলোর ফল নষ্ট হয়ে যায়। পরিপক্ব হওয়ার আগেই পচন ধরে গাছ থেকে ঝরে পড়ে আম। ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো পরিবেশ অধিদফতর আইনে (২০১৩-এর সংশোধনী) উল্লেখ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাগান ও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাঁটি স্থাপন করা যাবে না। এ আইনের তোয়াক্কা না করেই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাত্র ২৫০ মিটার দূরে ভাঁটিটি স্থাপন ও দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ইটপোড়ানোর কাজ করে আসছেন কার্তিক চন্দ্র। কোন খুঁটির জোরে ভাঁটি মালিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইটপোড়ানোর কাজ করে আসছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা জানান, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে ইটপোড়ানো বন্ধ রাখার জন্য ভাঁটিমালিক কার্তিককে বারবার নিষেধ করার পরও তা মানছেন না। চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, ভাঁটিমালিক কার্তিক চন্দ্রের দম্ভোক্তি পরিবেশ অধিদফতরসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কিনে পকেটে রেখেছেন তিনি। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোথাও অভিযোগ দিয়েও কাজ হবে না।’ ভাঁটিমালিক কার্তিক চন্দ্র জানান, ‘পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়েই ভাঁটির কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কয়লার পরিবর্তে ভাঁটিতে খড়ির মজুদ কেন, জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান তিনি’। একরুখী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, ‘এক বছর হয়েছে আমি এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি। এর অনেক আগে থেকেই বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাঁটিটি রয়েছে। ইটভাঁটি থেকে যে কালো ধোঁয়া নির্গত হয় তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। এতে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যেই শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, যমুনা ব্রিকসের মালিক কার্তিক চন্দ্রের ইট প্রস্তুত ও পোড়ানোসহ পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র রয়েছে কিনা সেটি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনীগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া লাইসেন্সবিহীন প্রত্যেকটি ইটভাঁটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ পরিবেশ অধিদফতর বগুড়ার পরিদর্শক মকবুল হোসেন জানান, ‘বিদ্যালয়, বাগান ও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ভাঁটি স্থাপন করে ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো আইন সম্মত নয়। যমুনা ব্রিকস এ নীতিমালা লঙ্ঘন করে ভাঁটির কার্যক্রম পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
×