ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাগদাদীর মৃত্যুই কি আইসিসের শেষ

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

বাগদাদীর মৃত্যুই কি আইসিসের শেষ

আইসিস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদীর মৃত্যুতে বিশ্বের পরিস্থিতি কি তেমন একটা বদলে যাবে? খুব সম্ভবত না। বরং বলা যায় যে ঘটনা পরম্পরার মধ্য দিয়ে গত ২৬ অক্টোবর বাগদাদীর মৃত্যু ঘটল তা থেকে হয়ত এক অনিশ্চিত নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত হবে। ঘটনা পরম্পরার প্রথমটির শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসে যখন ইরাক সরকার আল বাগদাদীর এক স্ত্রী ও একজন বার্তাবাহককে গ্রেফতার করে। এর পেছনে সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়াদের মধ্যে কর্মরত সিআইএর হাত ছিল বলে মনে করা হয়। ইরাকী ও কুর্দিরা হচ্ছে আইসিসের জানি দুশমন। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইরাক থেকে আইসিসকে বিতাড়িত করতে গিয়ে হাজার হাজার ইরাকী প্রাণ হারায়। আর সিরিয়ায় আইসিসের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে প্রায় ১১ হাজার কুর্দি যোদ্ধা নিহত হয়। এ থেকে একটা সত্য বেরিয়ে আসে। তা হলো আইসিসের বিরুদ্ধে লড়াইটা এক বৈশ্বিক লড়াই। সেই লড়াইয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় আরও অনেকেই সংশ্লিষ্ট। যারা আইসিস সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছে তাদের প্রায় সবাই স্থানীয় এবং মুসলমান। শুধু ইরাক ও সিরিয়া নয় উপরন্তু লিবিয়া, নাইজার, শাদ, মালি, সোমালিয়া, দক্ষিণ ইয়েমেন ও আফগানিস্তানের এক বিরাট অংশ এই লড়াইয়ে যুক্ত। তবে আইসিসবিরোধী লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে কুর্দি মিলিশিয়ারা। ইরাক ও সিরিয়ায় এরা আইসিসির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং এ দুটি দেশ থেকে মার্কিন বাহিনী সরে যাওয়ার পরও তারা লড়াই চালিয়ে গেছে এবং বাগদাদীর পিছু ধাওয়া করেছে। বাগদাদীর বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান সম্পর্কে বলতে গিয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, সিরীয় ও ইরাকী কুর্দিদের সাহায্য ছাড়া এই অভিযান সম্ভব হতো না। ইদলিব থেকে বিতাড়িত হয়ে বাগদাদী তার দলবল নিয়ে পূর্বদিকে চলে গিয়েছিলেন। তিনি ফোরাত উপত্যকার অদূরে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। আইসিস যোদ্ধারা ওখানে সংগঠিত হয়ে ইদলিব প্রদেশে এ্যামবুশ ও চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে। সিরিয়ার ওই শেষ বিশাল অংশটি তখনও ছিল বিদ্রোহী মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণে। এই মিলিশিয়াদের ওপর আধিপত্য ছিল আল কায়েদার একটি অঙ্গ সংগঠনের। অথচ আইসিসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ইরাকের আল কায়েদা হিসেবে সেখানকার মরু সীমান্তে। ওখানে আইসিস মার্কিন দখলদারীর বিরুদ্ধে লড়েছে এবং সেই সঙ্গে শিয়া মুসলমান ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও হত্যা করেছে। আল বাগদাদীর জন্ম ৪৮ বছর আগে মধ্য ইরাকের এক গ্রামে। তার আসল নাম ইব্রাহিম আওয়াদ ইব্রাহিম আলী আল বদরী। রাজধানী বাগদাদে এসে তিনি নতুন নাম ধারণ করেন। সেখানে তিনি কুরআন শরিফের ওপর পিএইচডি করেন। মার্কিন বাহিনী ২০০৪ সালে ব্যাপক ধরপাকড়ের সময় তাঁকেও গ্রেফতার করে। আটক থাকাকালে তিনি কারাগারকে উগ্রবাদের আঁতুরগৃহে পরিণত করেছিলেন। মুক্তি লাভের পর তিনি একটি সশস্ত্র গ্রুপে যোগ দেন এবং ২০১০ সালে এই গ্রুপের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এ গ্রুপে তার পূর্ববর্তী তিন নেতার সবাই মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হন যাদের একজন ছিলেন আবু মুসাভ আল-জারকাবি। বলাবাহুল্য ইরাক সরকারও এ ব্যাপারে মার্কিনীদের সহযোগিতা করেছিল। আল বাগদাদীর মৃত্যুর পেছনেও মার্কিন বাহিনীর যৌথ অভিযান কাজ করেছিল। সিআইএ থেকে শুরু করে ইরাকী সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনী এবং সিরিয়ার কুর্দিরা সবাই যৌথভাবে কাজ করেছিল। বাগদাদী যেসব পথ ব্যবহার করতেন বলে ভাবা হতো সেসব পথে তারা এজেন্ট পাঠিয়ে দেয়। এজেন্টদের অশেষ চেষ্টায় তুর্কী সীমান্তের কাছে এক কম্পাউন্ডে বাগদাদীর হদিস পাওয়া যায়। কম্পাউন্ডের ভেতর কুর্দিদের এক চর ছিল বলে তাদের জেনারেল মাজলুম আবদি পার সাংবাদিকদের জানান। আবদি বলেন, বাগদাদীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সেই চর জাঙ্গিয়ার ভেতরে নিয়ে পাচার করতেন। এমনকি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনাও এভাবে পাচার করা হয়। ওই পরীক্ষা থেকে আইসিস নেতার উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। সেই এজেন্ট একটি সুরঙ্গসহ ওই কম্পাউন্ডের লেআউট অনুপঙ্খরূপে বর্ণনা করেন। বলাবাহুল্য যুক্তরাষ্ট্রকে বাগদাদী সংক্রান্ত তথ্যের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল আড়াই কোটি ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাগদাদীর হদিস সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য ২৬ অক্টোবরের হামলার মাসখানেক আগে পেয়ে গিয়েছিল। তার সঠিক অবস্থানটা যে তুর্কী সীমান্তের কাছে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বারিশা গ্রামের কাছে সেটা জানা গিয়েছিল অক্টোবরের মাঝামাঝি। এর পরপরই অভিযান পরিকল্পনা নেয়া হয়। তাকে জীবিত ধরার অথবা মেরে ফেলার পরিকল্পনাটি করে সেনাবাহিনীর এলিট ডেলটা ফোর্স এবং রেঞ্জার রেজিমেন্টের সদস্যরা। মিশনের নাম দেয়া হয় কাইলা মুয়েলার। ইনি এক মার্কিন সাহায্যকর্মী যাকে আইসিস ২০১৩ সালে অপহরণ করেছিল এবং বাগদাদী যাকে ধর্ষণ করেছিল। ২৬ অক্টোবর সিরীয় সময় রাত ১১টায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সদলবলে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে সমবেত সবার কয়েক মুহূর্ত পর ৮টি হেলিকপ্টার যেগুলোর বেশিরভাগই ছিল টুইন রটর, সিএইচ ৪৭ চিনুক ও সেই সঙ্গে আরও অন্যান্য হেলিকপ্টার ইরাকের উত্তরাঞ্চলের একটি বিমান ঘাঁটি থেকে রওনা হয়। মার্কিন কর্মকর্তারা ঠিক কোন বিমান ঘাঁটি থেকে ওগুলো যাত্রা করেছিল তা নিশ্চিত না করলেও অধিকাংশ খবরে বুঝা যায় ঘাঁটিটি ছিল ইবরিল। বিমানগুলো তুরস্কের ওপর দিয়ে এবং সিরিয়ায় রুশ সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকা দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। যাত্রা শুরু করার প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর ওগুলো তুর্কী সীমান্তের ৩ মাইল দক্ষিণে সিরিয়ার ইদলিবের বারিশা গ্রামের বাইরের একটি ছোট কম্পাউন্ডে গিয়ে নামে যা ছিল তাদের অভীষ্ট টার্গেট। স্থলভাগের এই অভিযানে সমর্থন যুগিয়েছিল সামরিক বিমান ও জাহাজ। অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা সামরিক বাহিনীতে ব্যবহৃত কুকুর ও একটি সামরিক রোবোটও নিয়েছিল। বারিশার গ্রামবাসীরা জানায়, হেলিকপ্টারগুলো থেকে ত্রিশ মিনিট ধরে গুলিবর্ষণ চলে। তারপর স্থলভাগে কমান্ডোরা তৎপর হয়। তারা দুটো বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মেরে একটিকে ধূলিসাত করে দেয়। পেন্টাগনের ফুটেজে দেখা যায় যে আইসিস যোদ্ধারা মার্কিন বিমান এবং কম্পাউন্ডের দিকে অগ্রসরমান কমান্ডোদের উদ্দেশে গুলি ছুড়ে। মূল কম্পাউন্ডের দরজাটা ‘বুবি ট্র্যাপ’ করা থাকতে পারে ধারণা করে কমান্ডোরা দেয়াল উড়িয়ে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। বাগদাদী কম্পাউন্ডের ভিতর দিয়ে তৈরি করা বাঙ্কার ও সুরঙ্গের নেটওয়ার্কের ভিতর পালিয়ে যান। সুইসাইড ভেস্টপরা বাগদাদী তার দুই সন্তানকে টেনে নিয়ে যান। সামরিক রোবোট তার দিকে একটু একটু করে এগোতে থাকে। সামরিক বাহিনীর একটি কুকুরকেও তার দিকে লেলিয়ে দেয়া হয়। বাগদাদী এক সময় শেষ মাথায় পৌঁছে যান। তার পিছু হটার আর পথ না থাকায় তিনি সুইসাইড ভেস্টটির বোতাম টিপে দেন। বিস্ফোরণে তিনি ও তার সন্তানরা মারা যান। সুরঙ্গটি ধসে পড়ে। কুকুরটা আঘাতপ্রাপ্ত হয় তবে কমান্ডোরা সেটি উদ্ধার করে। বাগদাদীর দেহাবশেষ পাওয়ার জন্য সৈন্যরা ধ্বংসাবশেষ খুঁড়ে সেগুলো বের করে আনে। ল্যাব টেকনিশিয়ানরা অকুস্থলে ডিএনএ টেস্ট চালান। মৃত্যুর ১৫ মিনিটের মধ্যে তারা সঠিকভাবে তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। কমান্ডোরা সেখান থেকে সরে যাওয়ার পর মার্কিন জঙ্গী জেট বিমানগুলো ৬টি রকেট ছুড়ে বাড়িটি ধূলিসাত করে দেয়। সিরীয় সময় রাত সাড়ে তিনটার দিকে হেলিকপ্টার বহর ইরাকের ঘাঁটির দিকে রওয়ানা হয়। বাগদাদীর দেহাবশেষ পরে সাগরে ফেলে দেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউস সিচুয়েশন রুমে বসে ভিডিওতে গোটা দৃশ্যটি ছায়াছবির মতো দেখেন। বাগদাদীর মৃত্যু আইসিসের জন্য নিঃসন্দেহে এক বড় আঘাত। তাই বলে সংগঠনটি ধ্বংস হয়ে গেল না। এটি একটি বিশাল মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তুলেছিল। একটা সরকার গঠন করেছিল ও চালিয়েছিল এবং ভয়াবহ নৃশংস কার্যকলাপ সত্ত্বেও বিপুলসংখ্যক অনুসারীকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আইসিসের এখন রয়েছে পোড় খাওয়া নেতৃবৃন্দ, তরুণ ক্যাডারবাহিনী এবং একটা গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। বাগদাদী শেষ হয়ে গেছেন বলে সংগঠনটি যে পঙ্গু হয়ে গেল এমন নয়। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের নেতৃত্বের গভীরতা ও ব্যাপ্তি নজিরবিহীন। সিরিয়া ও ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের এ তল্লাটে অস্থিরতা ও যোগাযোগ চলতেই থাকবে। তাই আইসিস আপাতত কোণঠাসা হয়ে গেলেও তার তৎপরতা বাড়াতেই থাকবে। ইরাক ও সিরিয়ার যে সব ভূখ- আইসিসের হাতছাড়া হয়ে গেছে সেগুলো এখনও স্থিতিশীল ও নিরাপদ নয় বরং এগুলো আরও গোলযোগপূর্ণ ও সংঘাতময় হয়ে উঠবে। আইসিসও তখন তার ডালপালা নতুন করে মেলে ধরার সুযোগ পাবে। বাগদাদীর অজানা কিছু কথা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াল সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইসিসের প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদী নিজেকে মহানবী মোহাম্মদের কোরায়েশ বংশের সদস্য বলে দাবি করতেন। ওসামা বিন লাদেনের মতো ইঞ্জিনিয়ার বা আইমান আল জাওয়াহিরির মতো ডাক্তার তিনি ছিলেন না। তবে তিনি ইসলাম চর্চার ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইডি ডিগ্রীধারী ছিলেন। মসুলের মসজিদে থেকে খিলাফত প্রতিষ্ঠা। নিজেকে খলিফা বলে ঘোষণা দেয়ার সময় তার পরিধানে ছিল কালো আলখেল্লা যা ইসলামের আদি যুগের অতি শক্তিমান খলিফা আব্বাসীদের কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। জন্মের সময় তার নাম ইব্রাহিম আওয়াদ হলেও সেই নাম তিনি পরিবর্তন করে ধারণ করেছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা আবুবকরের নাম। আর আব্বাসীয় শাসনামলে ইসলামের রাজধানী ছিল বাগদাদ। সেই হিসাবে তিনি আল-বাগদাদী পদবীটি তার নামের সঙ্গে যোগ করেন। ২০০৫ সালে ইরাকে আল-কায়েদায় যোগ দেয়ার মুহূর্ত থেকেই তার একটা বৈশ্বিক লক্ষ্য ছিল। পরের বছর আল কায়েদা ইসলামিক স্টেট ছিল। পরের বছর আল কায়েদা ইসলামিক স্টেট অব ইরাক হিসেবে পুনর্গঠিত হলে তিনি এর প্রচারণার দায়িত্ব পান। প্রথমে নাইনভে প্রদেশে, পরে যত দূর অবধি সম্ভব। ২০১০ সালে তিনি এর প্রধান হন। ২০১৩ সাল নাগাদ তিনি সংগঠনটি ইসলামিক স্টেট এই নতুন নামে চালু করেন। ২০১৪ সালে আল কায়েদা প্রধান জাওয়াহিরি তাকে ইরাকে থেকে যাওয়ার নির্দেশ দিলে বাগদাদী তা প্রত্যাখ্যান করেন। তারপরই আল কায়েদার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কারণ কাগদাদীর মনে হয়েছিল সিরিয়া ধসে পড়ছে। এই অবস্থায় সেখানে অনেক কিছু করার আছেÑ কোয়ালিশন গড়তে হবে, যোদ্ধা বিক্রুট করতে হবে, আয়ের প্রবাহ রাখার জন্য তেল খনি দখল ও জিম্মিদের আটক করতে হবে। স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর সরকারবিরোধী সদস্যদের তিনি হাত করেছিলেন, কাজে লাগতে পারে এমন যে কারোরই- তিনি সন্ধান করেছিলেন। বামপন্থী এবং ইরাকে সাদ্দামের সাবেক অফিসারদেরও তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশে পরিচালক প্রতিটি অভিযান বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের তরুণদের এবং কিছু কিছু তরুণীকেও বাগদাদীর খিলাফতের কৃষ্ণ পতাকাতলে সমবেত হতে আকর্ষিত করত। তাঁর কৃষ্ণ পতাকা ছিল আব্বাসী খিলাফতের প্রতীক। একটা পর্যায়ে তার খিলাফত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। দখল করা শহর-নগরে তিনি প্রকৃত রাষ্ট্র যেভাবে চলে সেভাবে কর আদায়, ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘনের জরিমানা আদায়, নবজাতকদের নিবন্ধীকরণ, বিবাহের সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য অফিস স্থাপন করেছিলেন। শরিয়তী আইন চালু করেছিলেন, যে বিষয়ে তিনি ছিলেন বিশেষজ্ঞ। চুরির অপরাধে হাত কেটে ফেলা হতো, মদ খেয়ে মাতলামির জন্য চাবুক মারা হতো, ব্যাভিচারী নারীদের পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা হতো। বিধর্মীরা কর না দিলে তাদের মেরে ফেলা কিংবা বহিষ্কার করা হতো। ইয়াজিদিদের বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তাদের নারীদের অপহরণ করে সুসংগঠিত দক্ষতার সঙ্গে বিক্রি করে দেয়া এবং ধর্ষণ করা হতো। শত্রুদের ক্রুশবিদ্ধ করে, জ্যান্ত পুড়িয়ে, খাঁচাবন্দী অবস্থায় পানিতে চুবিয়ে মারা হতো। অনেককে শিরñেদও করা হতো। আতঙ্ক জাগানোর জন্য সবকিছুর ছবি তুলে অনলাইনে ছেড়ে দেয়া হতো। কাফের রমণীদের তিনি নিজের মনোরঞ্জনের জন্য কাছাকাছি রুমে শিকল বেঁধে রাখতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন কাফের মহিলাদের ধর্ষণ করা একটা আধ্যাত্মিক কাজ যা একজন ইমানদারকে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দেয়। এসব কিছুই করা হতো তার আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়। তবে তিনি কখনও একস্থানে বেশিক্ষণ থাকতেন না। স্থান থেকে স্থানান্তরে সর্বক্ষণ চড়ে বেড়াতেন। সাক্ষাৎপ্রার্থীদের কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তার সাজসরঞ্জাম আগে নিয়ে নেয়া হতো। চোখ বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে নিয়ে একটা খালি ঘরে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানেই তিনি দেখা দিতেন। নরম গলায় যা বলার বলতেন। তার ইসলামী স্টেট নিয়ন্ত্রণ করত ৩৪ হাজার বর্গমাইল এলাকা। তাঁর জঙ্গীরা রক্তাক্ত আক্রমণ চালিয়েছিল সুদূর প্যারিস, শ্রীলঙ্কা, ফ্লোরিডা ও ম্যাচেঞ্জারে। বহু গোয়েন্দা সংস্থা একাধিকবার তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। কিন্তু তিনি প্রহেলিকার মতো এখানে ওখানে দেখা দিয়েই মিলিয়ে যেতেন। আল বাগদাদী শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে সুরঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সেখানে শেষ প্রান্তে পৌঁছে আর পালনোর পথ না পেয়ে বোমা মেরে নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সূত্র : টাইম ইকোনমিস্ট
×