ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আয়কর মেলা

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

আয়কর মেলা

প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে শুরু হয়েছে আয়কর মেলা। মেলায় নতুন টিআইএন, আয়কর বিবরণী পূরণ, জমা ও কর পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে। এবারই প্রথম কর পরিশোধে শুরু হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। বিকাশ, ইউপে, নগদ, শিওর ক্যাশের মতো চালু করা হয়েছে এটি। প্রান্তিক করদাতাদের জন্য মোবাইল ব্যাংকেও কর দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে দেশে এনবিআর আয়োজিত কর মেলা চালু হওয়ার পর থেকেই এটি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কর দেয়ার প্রতি সাধারণের আগ্রহ ও আস্থাও সৃষ্টি হচ্ছে। এটি এই মেলার অন্যতম সাফল্যের দিক। এবারের মেলায় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্য রয়েছে অন্তত ৩০ লাখ করদাতাকে টিআইএনধারীর আওতায় আনা। চলতি বছর জরিপের মাধ্যমে প্রায় ৬ লাখ নতুন করদাতা পাওয়া গেছে। ২০২১ সাল নাগাদ এনবিআরের লক্ষ্য করদাতার সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করা। তবে কর মেলা উপলক্ষে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান যে প্রশ্নটি উত্থাপন করেছেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। কেন প্রতিবছর একজন জর্দা ব্যবসায়ী শীর্ষ করদাতার সম্মাননা পান, অন্য ব্যবসায়ীরা কেন পান নাÑ এই অমূল্য প্রশ্নটি অবশ্যই আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পমালিকদের। কর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন খাতা রাখার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে তার বক্তব্যে। আয়কর প্রদানে দেশের বহু মানুষের অনীহা একটি সর্বজনস্বীকৃত বিষয়। এ অনীহার জন্য দায়ী কিছুটা আয়কর ব্যবস্থাও। আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানিও কম দায়ী নয়। সুনাগরিকরাও আয়কর প্রদানের বিদ্যমান পদ্ধতিতে অস্বস্তি বোধ করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে আয়কর ব্যবস্থায় গতি আনার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও পদ্ধতিগত জটিলতা এখনও পুরোপুরি দূর করা যায়নি। গত বছর আয়কর মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছিলেন, আয়কর রিটার্ন ফরমের অনেক কিছু তিনিও ভাল বোঝেন না। এ কারণে তাকেও মধ্যস্বত্বভোগী কর আইনজীবীদের শরণাপন্ন হতে হয়। অনেক সময় কর আইনজীবীরা কাগজপত্র ঠিক করতে কর অফিসের বাড়তি খরচের দোহাই দেন। প্রভাবশালী উপদেষ্টার দৃষ্টিতে কর প্রদানের পদ্ধতি কঠিন হলে সাধারণ করদাতাদের অবস্থা কী দাঁড়ায় তা সহজেই অনুমেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান অবশ্য বলেছেন, এর আগে আয়করের বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয়ভীতি ছিল। মানুষ সহজে কর দিতে চাইতেন না। তাদের বিশ্বাস ছিল, কর দিতে এলেই এনবিআর কর্মকর্তারা ধরবেন, হয়রানি করবেন। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু উদ্যোগের কারণে করদাতাদের সেই মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে। ভয়ভীতি দূর হয়েছে মানুষের। এখন অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। করদাতাদের সামাজিক মর্যাদা বাড়ানো হয়েছে। তাদের সম্মাননা প্রদান ও পুরস্কৃত করা হচ্ছে। আয়কর মেলার মূল উদ্দেশ্য করদাতা বাড়িয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারের আয় বৃদ্ধি করা। গত কয়েক বছরে সরকারের আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতায় এগিয়ে গেছে দেশ। জাতীয় আয় বাড়ায় নিজস্ব অর্থায়নে বিশাল বাজেট প্রণয়ন, পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। স্বীকার করতেই হবে, নাগরিকদের মধ্যে আয়কর দেয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তার পরও কর প্রদানের ব্যাপার জনগণের মধ্যে এখনও অনাগ্রহী হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখা সঙ্গত। আয়কর বাড়ানোর জন্য এনবিআর এবং আয়করদাতাদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক জরুরী। কর প্রদান পদ্ধতি আরও সহজ এবং যুগোপযোগী হলে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে, দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য যা হবে ইতিবাচক।
×