স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ শুক্রবার সকালে এক রিক্সাচালকের সততা ও পুলিশের দ্রুত তৎপরতায় এক ব্যবসায়ী ২০ লাখ টাকা হারানোর ৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে পেয়েছেন। রাজীব প্রসাদ (৩৬) নামে ওই ব্যবসায়ী রিক্সাচালকের সততায় মুগ্ধ গয়ে নতুন রিক্সা কেনার জন্য তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছেন। রিক্সাচালক লাল মিয়া (৫৫) জানান, ‘ম্যানসের টাকার ওপর তার লোভ নাই’ এজন্য তিনি টাকা ফিরে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলার রনবাঘা এলাকার সার ব্যবসায়ী রাজীব প্রসাদের ‘প্রসাদ এ্যান্ড সন্স’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছেন। থাকেন শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি শহরের ভাড়া বাড়ি থেকে রনবাঘায় যাওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকাসহ বের হোন। টাকাগুলো একটি কাপড়ের ব্যাগে ছিল। বাসের জন্য শহরের সাথমাথায় আসতে তিনি রিক্সায় ওঠেন। রিক্সা থেকে নামার সময় রিক্সায় ২০ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ ফেলে আসেন। বাসে ওঠার মুহূর্তে তিনি বুঝতে পারেন টাকা হারিয়ে গেছে। পরে তিনি সদর থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান। পুলিশ দ্রুত রিক্সাচালককে খোঁজার এক পর্যায়ে সিসি টিভি ফুটেজের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করেন। এদিকে রিক্সাচালক লাল মিয়া জানান, যাত্রীকে নামিয়ে দেখতে পান একটি ব্যাগ। ভিড়ের মধ্যে ওই যাত্রীকে আর খুঁজে পাননি। পরে ব্যাগ খুলে টাকা দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে যান। টাকা ভর্তি ব্যাগ বাড়িতে রেখে এসে সাতমাথা এলাকায় ব্যবসায়ীকে টাকার ব্যাগ ফেরত দেয়ার জন্য খুঁজতে থাকেন। দু’দফা সাতমাথা এলাকা ঘুরে বাড়ির নিকটবর্তী খান্দার এলাকায় গিয়ে অবস্থান নিয়ে জানার চেষ্টা করতে থাকেন, কারও টাকা হারিয়েছে কিনা। রিক্সাচালক আরও জানান, অন্যকেউ যেন টাকাগুলো নিতে না পারেন এবং প্রকৃত মালিকের কাছে টাকা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তিনি খান্দার এলাকায় খবর নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি জানান, এর মধ্যে টাকার মালিককে খুঁজে না পাওয়া গেলে থানায় গিয়ে টাকা জমা দেয়ার ইচ্ছে ছিল তার। ইতোমধ্যে পুলিশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পুলিশকে জানান, একটি টাকা ভর্তি ব্যাগ তার কাছে রয়েছে। বগুড়া সদর থানা পুলিশ রিক্সাচালক লাল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে টাকা উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। পরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে রিক্সাচালক ও ব্যবসায়ীকে নিয়ে আসা হয়। সেখানে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা টাকার মালিক সার ব্যবসায়ী রাজীব প্রসাদের হাতে টাকা বুঝিয়ে দেন। এ সময় ব্যবসায়ী রাজীব প্রসাদ রিক্সাচালকের সততায় মুগ্ধ হয়ে একটি নতুন রিক্সা কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেন। পুলিশ নতুন রিক্সা কিনে রিক্সাচালককে দেবেন। পুলিশ সুপার জানান, রিক্সাচালকের সততা ছিল। ইচ্ছে করলে তিনি টাকা নিয়ে চলে যেতে পারতেন, তবে সে ধরনের কিছু তাদের চোখে পড়েনি।
