ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জয় এখনই নেতৃত্বে আসতে চান না ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

 জয় এখনই নেতৃত্বে আসতে  চান না ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এখনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসতে চান না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এখানে জয়ের ইচ্ছার ব্যাপারও আছে। নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) এ নিয়ে কোন কিছু বললে তিনি বলেন, জয় তো আসতে চায় না। এখনও তার আসার আগ্রহ নেই।’ শুক্রবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের আসন্ন ২১তম জাতীয় সম্মেলনে সজীব ওয়াজেদ জয়কে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দেখা যাবে কিনা- সেই প্রশ্ন সাংবাদিকরা রেখেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে। জবাবে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সেটা আমাদের পার্টির সভাপতি, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিষয়। জয় তো আছেনই। আমি বারবারই নেত্রীকে বলে আসছি যে, জয়কে গ্রুমিং করার বিষয়টা। এটা নেত্রীর সিদ্ধান্তের ব্যাপার। জয়ের নিজেরও ইচ্ছার ব্যাপার। জয় নিজেই যেভাবে আছেন, সেভাবেই তিনি আপাতত থাকতে চান। জয় যখন বাংলাদেশে আসবেন, আপনারা তাকেও জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’ আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের কমিটির নেতৃত্বে দলীয় সংসদ সদস্যদের না রাখতে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, উপজেলা পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্যরা সভাপতি পদপ্রার্থী হন, এটা নিরুৎসাহিত আমরা করছি। উপজেলা পর্যায়ে সংসদ সদস্যদের আমরা অনুরোধ করছি, তারা যেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে না এসে, ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের একটা সুযোগ করে দেন। কারণ তাদেরও অধিকার আছে। তারা এমপিও হতে পারেনি, দলেও নেতৃত্ব পাবে না- এটা তো হয় না। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা জেলা পর্যায়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন। কারণ কেন্দ্রের সঙ্গে তাদের সমন্বয় করতে হয়। সম্মেলনে দলের সম্পাদকম-লীতে নতুন কাদের দেখা যেতে পারে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পুরনো মুখ কিংবা নতুন, এটা ডিসাইড করার মালিক আমাদের সভাপতি, আমাদের গঠনতন্ত্রে তাঁকে এই ক্ষমতা দেয়া আছে। আমাদের নেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, তিনি নির্ধারণ করবেন, কে আসবেন দলে। আমাদের দলে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ অপরিহার্য ব্যক্তি নয়।’ নিজের পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নেত্রী যা ইচ্ছা করবেন সেটাই হবে। তিনি পরিবর্তন চাইলে পরিবর্তন হবে। আমাদের এখানে কোন প্রতিযোগিতা নেই। হয়ত কারও কারও ইচ্ছা, আকাক্সক্ষা থাকতে পারে। সাধারণ সম্পাদক পদেও প্রার্থী থাকতে পারে। সেখানে কোন অসুবিধা নেই। আমি যদি মনে করি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ হতে পারবে না, এটা তো ঠিক হবে না।’ আওয়ামী লীগের কমিটির পরিধি বাড়তে পারে কিনা এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের কমিটির কলেবর এখন পর্যন্ত বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা নেই। কমিটি ৮১ জনেরই থাকবে। আমাদের নেত্রী যেটা মনে করছেন, আপাতত কমিটিতে সংখ্যা বাড়ানোর কোন ইচ্ছে নেই। বর্তমান কমিটিতে সদস্যের একটি এবং সভাপতিম-লীর যে দুটি পদ খালি আছে, সেগুলো সম্মেলনের মধ্য দিয়েই পূরণ করা হবে। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে বিএনপিসহ সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিবার যাদের আমন্ত্রণ করি, এবারও তাদের করব। যারা জোটের অংশ, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমরা বিএনপিকেও দাওয়াত দেব। বিদেশ থেকে প্রতিনিধি যেহেতু মুজিববর্ষে আসবে, সে জন্য জাতীয় সম্মেলনে আমরা তাদের দাওয়াত দিচ্ছি না। তবে আমরা এখানে কূটনৈতিকদের দাওয়াত দেব। কারণ আমরা মুজিববর্ষকে কালারফুল করতে চাই। জাতীয় সম্মেলনের পরিকল্পনা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে যে পরিমাণ কাউন্সিলর থাকবে তার সমপরিমাণ ডেলিগেট থাকবে। সম্মেলনের প্রথম দিন সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনটি আকারে কিছুটা বড় হলেও তিনি সংক্ষিপ্ত আকারে পড়বেন। এছাড়া থাকবে শোক প্রস্তাব। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কাউন্সিল অধিবেশন হবে। যদি আমাদের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রে কোন সংশোধনী থাকে, সেটার অনুমোদন নেয়া হবে। সংশোধনীর ব্যাপারে ইতোমধ্যেই আমরা জেলা শাখাগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছি, তাদের কোন প্রস্তাব আছে কিনা, সংযোজন, সংশোধন অথবা পরিমার্জন পরিবর্ধনে জেলা শাখার কোন প্রস্তাব আছে কিনা, সে বিষয়ে চিঠি পাঠাতে বলেছি। সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনে বিশৃঙ্খলা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ‘চোখে পড়ার মতো’ সংঘাত আওয়ামী লীগে হয়নি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের উত্তরের সম্মেলনে বসা নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে একটু চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছে, এটা সত্য। যারা যারা করেছে, তাদের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এটা সিরিয়াসলি বলা হয়েছে। চট্টগ্রামে তো সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কোথাও কোন ঘটনা ঘটেনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন এক সঙ্গেই হবে। কিভাবে সম্মেলন পরিচালিত হবে তা মহানগর নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এবার একই মঞ্চেই আমরা সব সম্মেলন করব। দলের জাতীয় সম্মেলনও এ মঞ্চেই হবে। মঞ্চটা আমরা আকৃতি ও আকার পরিবর্তন করেছি, এখন নৌকারে আদলে মঞ্চটা তৈরি হয়েছে। আজ স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন থেকে এই মঞ্চেই আমাদের সব সম্মেলন হবে। সে বিষয়ে সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। বিএনপি নেতারা আইনের শাসনে বিশ্বাসী নন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নেতারা বলেছেন তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে জেল থেকে বের করে আনবেন। তারা বার বার বলছেন, আইনী লড়াইয়ে খালেদার মুক্তি হবে না। আমরা তাদের দুর্বার আন্দোলন দেখার অপেক্ষায় আছি। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। খুব শীঘ্রই তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আসবে, এ সঙ্কট সাময়িক। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×