ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ রানের পাহাড়ে চাপা

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

  বাংলাদেশ রানের  পাহাড়ে  চাপা

মিথুন আশরাফ ॥ ইন্দোর টেস্টে কী যে দুর্দশায় পড়েছে বাংলাদেশ। টেস্টটি শেষ হলে যেন বাঁচা যায়। এমন কঠিন অবস্থা হয়েছে, বাংলাদেশকে রানের পাহাড়ে চাপা দিয়েছে ভারত। এমনই রানে ডুবাল, দ্বিতীয়দিনেই ৩৪৩ রানে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যেখানে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রান করতে পারে, সেখানে এক মায়াঙ্ক আগরওয়ালই ২৪৩ রান করলেন। আগরওয়ালের ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিংয়ে ভারতও ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৯৩ রান করে ফেলেছে। ভারতের ব্যাটিং এখনও শেষ হয়নি। রবীন্দ্র জাদেজা (৬০*) ও উমেশ যাদব (২৫*) আজ তৃতীয়দিনের ব্যাটিং শুরু করবেন। ভারত ইনিংস ঘোষণা না করলে স্কোর যে ৫০০ ছাড়াবে তা তো নিশ্চিতই। যদি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা প্রথম সেশন পুরোটা খেলে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় তাহলে স্কোর আরও বড় হবে। তখন ভারত অনেক বড় লিড নেবে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ যে ব্যাটিং করেছে তাতে দ্বিতীয় ইনিংসে যদি মুশফিক, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, ইমরুল, সাদমানরা হাল না ধরেন, তাহলে ইনিংস হারও হয়ে যেতে পারে। ভারতের তখন এক ইনিংসই খেলাই যথেষ্ট হয়ে দাঁড়াবে। আগরওয়াল যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এক দীপক আগরওয়ালের ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটের কাছে লুকিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন সাকিব আল হাসান। ভারত সফরের আগে তিনি নিষিদ্ধ হওয়াতে দলের ক্রিকেটারদের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে। ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলা অথচ সাকিব নেই, দলও দুর্বল হয়ে পড়ে। তার প্রভাব টি২০ সিরিজে পড়ে। যখন টেস্ট সিরিজ শুরু হলো তখনও নেই সাকিব। যিনি টি২০’র চেয়েও বেশি কার্যকর টেস্টে। সাকিব নেই মানে একজন ব্যাটসম্যান ও বোলার আলাদা করে খেলাতে হচ্ছে। টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টেই দেখা গেছে আরেক আগারওয়ালে বাংলাদেশের বারোটা বেজে গেছে। এই আগাওয়াল ভারতের ওপেনার। যিনি প্রথমদিন ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয়দিন ৪৩ রানে অপরাজিত থাকা চেতেশ্বর পুজারাকে নিয়ে ব্যাট হাতে নামেন। পুজারা খুব বেশিদূর যেতে পারেননি। প্রথমদিনের ১ উইকেটের সঙ্গে দ্বিতীয়দিনে আরও ৩টি উইকেট নেয়া আবু জায়েদ রাহী বেশিদূর যেতে দেননি। পুজারাকে (৫৪) শুরুতেই আউট করে দেন। পুজারার আউটের পর বিরাট কোহলি ব্যাট হাতে নামেন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কোনভাবে যদি কোহলি দাঁড়িয়ে যান তাহলে সব শেষ। কোহলিকে উইকেটে টিকতেই দেননি রাহী। রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন কোহলি। প্রথম সেশনটি কি দুর্দান্তভাবে কাটে। কিন্তু এরপরই সব এলোমেলো হয়ে যায়। আগারওয়াল ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। তার সঙ্গে এবার যোগ দেন অজিঙ্কা রাহানে। তিনি সমানতালে পথ চলতে থাকেন। রানের গতিও থাকে দুর্দান্ত। দুইজন মিলে প্রথম সেশন শেষ করেন। দলকে (১৮৮ রান) ২০০ রানের কাছে নিয়ে যান। ততক্ষণে ভারত লিডও নিয়ে ফেলে। এরপর দ্বিতীয় সেশনে কোন সুযোগই দেননি আগারওয়াল ও রাহানে। পুরো সেশন ব্যাটিং করেন। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ফিল্ডাররাও ক্লান্ত হতে থাকেন। আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে যায়। দ্বিতীয় সেশনে ১১৫ রান যোগ হয়। ততক্ষণে আগারওয়াল দ্রুত রান তুলতে থেকে ১৮৩ বলে সেঞ্চুরি ও ২৩৪ বলে ১৫০ রানও করে ফেলেন। যখন আগারওয়াল ১৫০ রান করেন, তখন কোহলি ‘দুই আঙ্গুল’ দেখান। তার মানে ২০০ রান করতে হবে। তাও করে দেখান আগারওয়াল। তবে ৩০৩ বলে যখন দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি করেন আগারওয়াল তার আগেই রাহানেকেও (৮৬) আউট করে দেন রাহী। উইকেট পড়লেই যেন রাহীর বলেই পড়তে থাকে। যখনই উইকেট খুবই দরকার, রাহী ত্রাতা হয়ে হাজির হন। এবার যখন আগারওয়াল ও রাহানে মিলে মহা বড় জুটি গড়ে ফেলতে থাকেন তখন রাহী জুটি ভাঙ্গেন। এরপরও ১৯০ রানের জুটি গড়েন। যা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের চতুর্থ উইকেটে দ্বিতীয়সেরা জুটি হয়ে যায়। এই দুইজনই দলকে ৩০০ রানের (৩০৯ রান) ওপরে নিয়ে যান। ততক্ষণে ভারত দেড় শ’ রানের লিডও নিয়ে নেয়। রাহানে আউটের পর রবীন্দ্র জাদেজা ব্যাট হাতে নেমেও আগারওয়ালের সঙ্গে দুর্দান্তভাবে এগিয়ে যান। এই দুইজনও বড় জুটি গড়েন। দলকে ৪০০ রানের ওপরে নেন। যখন দলের ৪৩২ রান হয় দুইজনের জুটি ১২৩ রানে হয়, তখন আগারওয়ালকে আউট করা যায়। ডাবল সেঞ্চুরি করার পর আগারওয়াল যেন আরও বিধ্বংসী হয়ে যান। ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। যেন টি২০ খেলা চলছে। যখন ডাবল সেঞ্চুরি উৎসব করছেন, তখন কোহলি ‘তিন আঙ্গুল’ দেখান। মানে তিন শ’ করতে হবে। এবার তা করতে পারেননি। তবে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করে ৩৩০ বলে ২৮ চার ও ৮ ছক্কায় ২৪৩ রান করেন। মিরাজের বলে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ আউট হন আগারওয়াল। এই আউটেও থাকেন রাহী। ক্যাচটি ধরেন তিনি। ডাবল সেঞ্চুরি করার পর ২৭ বল খেলেন। এর মধ্যে ৩ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকান আগারওয়াল। দ্রুতই ৩০০ রান করার দিকেই এগিয়ে যেতে চান। কিন্তু পারেননি। তবে দলকে ৪৩২ রানে রেখে যান। ঋদ্ধিমান সাহা ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি। সাহাকে (১২) বোল্ড করে দেন এবাদত হোসেন। তবে জাদেজা যে উইকেটে থাকেন, শেষ পর্যন্ত ৬০ রান করে অপরাজিত থাকেন। জাদেজার সঙ্গে উমেশ যাদবও (২৫*) উইকেট আঁকড়ে থাকেন। ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলেন। জাদেজা ৭৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৬০ রান করেন। আর যাদব ১০ বলেই ১ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ২৫ রান করেন। প্রথমদিন ১ উইকেটে ৮৬ রান করা ভারত দ্বিতীয়দিন আরও ৫ উইকেট হারিয়ে ৪০৭ রান করে। ৩৪৩ রানে এগিয়ে গেছে ভারত। যে রানে এগিয়ে গেছে তা করাই বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে। প্রথম ইনিংসের দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাটিং এখন দ্বিতীয় ইনিংসে না দেখার মিললেই হয়। তা নাহলে যে ইনিংস হারও হয়ে যেতে পারে। রানের যে চাপ মিলেছে, তাতে এখন মুশফিক, মুমিনুলরা যে কি করেন তা আজ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামার পরই হয়তো বোঝা যাবে।
×