ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবরার হত্যার বিচার

প্রকাশিত: ১০:০৯, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

আবরার হত্যার বিচার

দ্রুততম সময়ের মধ্যে বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যাকা- মামলার চার্জশীট দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই চার্জশীটকে নির্ভুল আখ্যা দিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন শীঘ্রই বিচার শুরু হবে। সক্রিয় ও সতর্ক তৎপরতার জন্য পুলিশের ধন্যবাদ প্রাপ্য। হত্যাকারীরা রাজনৈতিক পরিচয়কে নিজেদের রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সাধারণ মানুষের মর্মমূল ছুঁয়ে যাওয়া এই হত্যাকা-ের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ১৩৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে সুখবর দিয়েছেন আইনমন্ত্রী। এতে সরকারের সদিচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা আগেও বলেছি দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত বলেই স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতির বিবেককে নাড়া দেয়ার মতো অপরাধের বিচার সুসম্পন্ন হচ্ছে। আগুনে পুড়িয়ে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে হত্যার বিচারও অল্প কালের ভেতর সম্পন্ন হয়েছে। পেছনের দিকে তাকালে আমরা শিউরে উঠব। নিছক ‘শিবির’ সন্দেহে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি মানুষকে বিষাদগ্রস্ত ও বিক্ষুব্ধ করেছিল। ভয়াবহ ও মর্মান্তিক এই ঘটনাটি রীতিমতো নাড়া দেয় সমগ্র দেশ ও জাতিকে। স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ করেছিল আমাদেরও। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সুখ্যাত ও মানসম্মত একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম একটি পরিকল্পিত হত্যাকা- সংঘটিত হতে পারে তা ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়। আরও লক্ষণীয়, আবরারের হত্যাকারী আর কেউ নয়। বহিরাগত তো নয়ই, বরং তার সহপাঠী, সতীর্থ, বন্ধু, এমনকি রুমমেট। হত্যাকারীরা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়েছে বুয়েটের শিক্ষার্থী হিসেবেই। তারা ছাত্রলীগের নামধারী, বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত নেতা ও কর্মী। আবরারের অপরাধ সম্প্রতি সে ভারতে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে কিছু ইলিশ দেয়া এবং ফেনী নদীর পানি ভারতকে সরবরাহসহ তথাকথিত গ্যাস রফতানির খবরে ‘ভিন্নমত’ প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছিল তার ফেসবুকে। আরও যা দুঃখজনক তা হলো, ভারতে গ্যাস রফতানি বিষয়ক চুক্তির ভুয়া সংবাদটি প্রচার করে বিবিসি বাংলা, যা নিয়ে পরে তারা সংশোধনী বার্তাও প্রদান করে। তবে এসব পোস্টই আদৌ উত্তেজক, নেতিবাচক, হিংসাত্মক, ধ্বংসাত্মক নয়; সরকার ও দেশবিরোধী তো নয়ই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রীও সে সময় বলেছিলেন, কাউকে ভিন্নমতের জন্য মেরে ফেলার কোন অধিকার কারও নেই। সরকার তা সমর্থন করে না কোন অবস্থাতেই। প্রশ্ন জাগে, বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের যে কক্ষে আবরারকে নির্মম নৃশংসভাবে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী পিটিয়ে হত্যা করা হলো তার আর্তচিৎকার ও আর্তনাদে রুমমেটসহ আশপাশের কেউ আদৌ এগিয়ে এলেন না কেন, এমনকি প্রভোস্টসহ? আর ভিসি তো নিহত আবরারের লাশ দেখতে, এমনকি জানাজায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসেও যাননি অসুস্থতার অজুহাতে। যে কারণে ভিসিকে অবরোধসহ উত্তাল হয়ে উঠেছিল বুয়েট। দুঃখজনক হলো, ঢাবি, চবি, বুয়েটসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অতীতে একাধিক হত্যা সংঘটিত হলেও কোনটিরই বিচার হয়নি। তাই এবারের অপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে আশা জাগানোর মতো ইতিবাচক মোড় নেবে ক্যাম্পাসের চলমান পরিস্থিতি- এমনটি প্রত্যাশা করা যায়। আবরার হত্যাকান্ডের পর জনকণ্ঠ সম্পাদকীয় লিখে জোরালো মত গঠনে ভূমিকা রেখেছিল। আমরা বলেছিলাম, দ্রুত বিচারসহ অপরাধীদের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। শেষ পর্যন্ত তাই হতে চলেছে। বিষয়টি স্বস্তিকর। ছাত্রলীগ করলেই যে ভয়ঙ্কর অপরাধ করে ছাড় পাওয়া যাবে না এই বার্তাটিও তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজের ন্যায়ের ও প্রগতির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখার জন্য এমন বার্তা জরুরী। আমরা আশা করব সন্তান হারানো মা সুবিচার পাবেন এবং বুয়েট কলঙ্কমুক্ত হবে।
×