ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একাধিক নতুন নাটক মঞ্চে আনছি ॥ খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

 একাধিক নতুন নাটক মঞ্চে আনছি ॥ খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বাংলাদেশের অন্যতম প্রথিতযশা নাট্যকর্মী, অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ও সংগঠক। সুষম নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। অসংখ্য নাটকে অভিয়ের পাশাপাশি, নিয়মিতভাবে নাটক রচনা ও নির্দেশনাও দিয়ে থাকেন। একজন সংগঠক হিসেবেও যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন। সম্প্রতি তার রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চে এসেছে সুষম নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন নাটক ‘গয়না’। নতুন এ প্রযোজনা এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে গুণী এ নাট্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথা হয়। গয়না’ নাটক বিষয়ে জানতে চাই খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম : ‘গয়না’ নাটকটি সুষম নাট্য সম্প্রদায়ের ১৫তম প্রযোজনা। নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনাও দিয়েছি। ইতোমধ্যে নাটকটির দুটি প্রদর্শনী হয়েছে। ‘গয়না’ নাটকের কাহিনীতে দেখানো হয়েছে গয়না নারীর সৌন্দর্যবর্ধনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিয়ের সময় প্রাপ্ত গয়নার অলিখিত মালিক স্ত্রী হলেও এর ওপর তার অধিকার খুবই নগণ্য কেননা, স্বামীর ভাগ্য ফেরাতে অথবা সংসারের জরুরী কোন কাজে এই গয়না বন্ধক রেখে অথবা বিক্রি করে দেয়া হয়। আশ্বস্ত করা হয়, স্বামীর দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে গয়না আবার ফিরে আসবে তার কাছে। স্ত্রী বিশ্বাসে বুক বাঁধে, স্বপ্ন দেখে, কল্পনায় নিজেকে সাজায়। কিন্ত তার আর গয়না পরা হয়না। এই নিয়েই ‘গয়না’ নাটকের গল্প এগিয়ে যায়। আপনার রচিত, নির্দেশিত এবং অভিনীত নাটক মঞ্চনাটক কতগুলো? খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম : এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি নাটকে অভিনয় করেছি। নির্দেশনা দিয়েছি প্রায় ৩০টি নাটক। আমার লেখা ১৯টি নাটক মঞ্চে এনেছি। আমার দলের চলতি প্রযোজনার মধ্যে রয়েছে ‘মৃগতৃষ্ণা’, ‘মৌবনে কাক’ এবং ‘গয়না’। বাংলাদেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধিতে গ্রুপ থিয়েটার চর্চা কতটা ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন? খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম : বাংলাদেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধি, প্রচার ও প্রসারে গ্রুপ থিয়েটার চর্চা বড় এবং অত্যন্ত জোড়ালো ভূমিকা অতীতেও রেখেছে এবং এখন রেখে চলেছে। সেইসঙ্গে বিশ্ব নাট্য আন্দোলনের সঙ্গেও সমান তালে তাল মিলিয়ে সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। দেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। মঞ্চনাটকের দর্শক সঙ্কটের কারণ কী? খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম : মঞ্চে দর্শক সঙ্কটের কারণ একাধিক। শহরের যানজট, ঘরে বসে আকাশ সংস্কৃতির ধূম্রজালে আটকেপড়া, মানসিকতার পরিবর্তন, মুঠোফোনের অপব্যবহার ইত্যাদি। নাট্যদলগুলো আন্দোলনের অংশ হিসেবে নাট্য চর্চা করে কি? খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম : আমার মতে, বর্তমান নাট্যদলগুলো কোন না কোনভাবে নাট্য আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কাজ করে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের যে কোন কর্মকা-ে দলগুলো এগিয়ে আসে। সমকালীন বিষয়ভিত্তিক নাট্য উপস্থাপনাই নাট্য আন্দোলনের অংশ বলে আমি মনে করি। টিভি নাটক বা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন কি? খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম : আমি বিটিভির একজন তালিকাভুক্ত নাট্যশিল্পী। মা ও শিশু, স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা বিষয় ইউনিসেফ থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত নাট্যকার। এ কারণে আমি এসব বিষয়ে গণসচেতনতামূলক অনেক নাটক লিখেছি, অভিনয় করেছি। যেগুলো একাধিকবার প্রচার হয়েছে। তবে চলচ্চিত্রে খুব একটা কাজ করা হয়নি। দলের নতুন কোন প্রযোজনা মঞ্চে আসছে কি? খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম : দলে নতুন একটি পথ নাটক এবং একটি মঞ্চ নাটক প্রযোজনার কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা করছি অচিরেই নাটক দুটির প্রদর্শনী শুরু হবে। আপনি নিজেকে কী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম : আমি আমাকে মঞ্চশিল্পী, থিয়েটারকর্মী অথবা নাট্যকর্মী হিসেবে মনে করি এটা বলা মুশকিল। তবে নাট্যবিদ এবং নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ যারা রয়েছেন তারা যদি সম্মিলিতভাবে বিষয়টি দাফতরিক, আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে নির্ধারণ করে দেন তবে সেটাই হবে সর্বজনীন। ধরুন, যে গান করেন সে গায়ক, যে নাচেন সে নৃত্যশিল্পী, যিনি ছবি আঁকেন তিনি চিত্রশিল্পী, যিনি অভিনয় করেন তিনি অভিনয় শিল্পী তবে মঞ্চে যিনি অভিনয় করেন তিনি কখনই একা কিছু করতে পারেন না। কেননা এটি একটি যৌথ শিল্পকর্ম। এর সঙ্গে শিল্পের নানা শাখা জড়িত থাকে। তাই এই শিল্পের মানুষদের এমন একটি নাম হওয়া উচিত যে, নামের পূর্ণ সার্থকতা থাকে। সংস্কৃতি অঙ্গনে পথচলার শুরুটা কেমন ছিল? খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম : সাংস্কৃতিক আঙ্গনে আমার পথচলা শুরু“হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর যখন আমি কলেজে পড়ি। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা গ্রামের সিনিয়র ভাইদের বাৎসরিক নাটকের রিহার্সেলে প্রক্সি দিতে গিয়ে। নাটকের নাম ‘কুয়াসা কান্না’ নাট্যকার কল্যাণ মিত্র। নির্দেশনায় ছিলেন নাট্যগুরু কালি দাস। একজন জুনিয়র উকিলের চরিত্রে (নায়কের পাঠ)। তারপর পড়ালেখার পাশাপাশি কোথাও অতিথি শিল্পী হয়ে কখন নিজের বন্ধু-বান্ধব মিলে নাটক মঞ্চায়ন শুরু করি। বেশকিছু নাটকের নির্দেশনাও দেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপাড়া শেষ করে চাকরির পাশাপাশি পুরাতন ঢাকার নাট্যাঙ্গানে নাট্যচর্চা শুরু করি। তারপর এক সময় শাঁখারি বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বী নাট্য দলের যোগ দেই। শুরু হলো গ্রুপ থিয়েটার চর্চা। প্রায় ৭ বছর পর যোগ দেই লিয়াকত লাকী ভাইয়ের লোক নাট্যদলে। তবে এ সময় আদমজীতে চাকরির কারণে দলত্যাগ করতে হয়। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় এরপর সুষম নাট্য সম্প্রদায় দল গঠন করি। -সাজু আহমেদ
×