ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তবতায় মোড়ানো মেয়েদের হলজীবন

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

বাস্তবতায় মোড়ানো মেয়েদের হলজীবন

প্রতিদিনই নতুন স্মৃতি জন্ম নেয় এখানে শামীমা সীমা পরিসংখ্যান বিভাগ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল, চবি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মজাটা হলে থেকেই পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা যায়। তবে বাসা বা বাড়িতে থাকলে আম্মু যতœ নেয় আর এখানে তো নিজেকেই করতে হয়, এখানে রুমমেট ছোট বোনগুলো খুব ভাল কেয়ারিং করে। বাসা তো বাসাই। তাছাড়া আম্মুর সঙ্গে থাকলে হালকা অলসতা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে হলজীবন শেষে কতগুলো অভিজ্ঞতার ঝুড়ি নিয়ে ফিরব আশা করা যায়। তবে একটা দুঃখের ব্যাপার হলো এখানে রাত ৯.৩০ টার পর আর কোন খাবারই পাওয়া যায় না। যখন অনেক রাত পর্যন্ত পড়তে হলে খিদের সঙ্গে যুদ্ধ করতেই হয়, এছাড়া আর কি উপায়! হলজীবনে নির্দিষ্ট কোন স্মৃতি বলতে কিছু নেই বরং হল জীবন মানেই প্রতিদিন নতুন নতুন স্মৃতির সম্মুখীন হই। এখানে অনেক যুদ্ধ করে অভিযোজন করতে হয়। মজাই লাগে। নিজেই নিজের কাজ করতে বোরিং ফিল হয়না এদিক থেকে খুবই ভালো। তারপর সুযোগ পেলেই আড্ডা তো আছে, হাহাহা!’ হল জীবন আমার আরেকটা পরিবার বর্ষা চাকমা সংগীত বিভাগ, প্রীতিলতা হল,চবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবার থেকে দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতে হবে জেনে মনের মধ্যে অনেক আজানা আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠা কাজ করেছিল। কারণ আমি প্রথমবার বাড়ি ছেড়ে পরিবার থেকে দূরে থাকব। যখন হলে আসি মা-বাবার কথা খুব মনে পড়তো। ক্যান্টিনে খেতে গেলে মায়ের রান্না খুব মিস করতাম এখনো করি। হলে আসার পর থেকে মজার স্মৃতির শেষ নেই। যেমন; ওয়াশরুম অভিযান, কবুতর অভিযান, মুভি টাইম, ব্লক পিকনিক ইত্যাদি। রুম থেকে ওয়াশরুম একটু দূরে তাই যেদিন হরর মুভি দেখি সে রাতে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় রুমমেট আপু সবাইকে নিয়ে যায়, রুমমেট আপুরা ট্রল করে এর নাম দিয়েছে ওয়াশরুম অভিযান । হলে আসার পর রুমমেট আপুদের এবং হলে থাকা সকলের আন্তরিকতায় এখন বলতে পারি হলে নতুন একটি পরিবার খুঁজে পেয়েছি। সব মানিয়ে নিতে শিখেছি নওরিন আক্তার মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল, চবি হলে উঠার প্রথম ৫মাসের অভিজ্ঞতা খুব-ই কষ্টের, অসহনশীল তবে শিক্ষণীয়। ঢাকায় বেড়ে ওঠা আমি কে চবি শিক্ষার্থী নওরিন বানাতে দিনের পর দিন রোদে পুড়ে কালো হয়েছি, সম্মানিত প্রভোস্টের পিছনে ঘুরে ঘুরে জুতার তালু ক্ষয় করেছি আর রাতের পর রাত খাপ খাওয়াতে না পারার কষ্টে বাসায় কল দিয়ে শুধু মুখ চেপে কাঁদতাম। ডাইনিং ক্যান্টিনের তিক্ত খাবার গলা দিয়ে নামাতাম আর চোখের পানি মুছতাম আম্মুর হাতের রান্নাকে মিস করে, স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছিল প্রথম কয়েক মাসে পরিবর্তিত পাহাড়ী আবহাওয়াতে, এলার্জি জুটিয়েছি রীতিমতো।আয়রনের পানিতে চুল এখন প্রায় নেই বললেই চলে,আর গ্যাস্ট্রিক তো শিরায় শিরায়।কিন্তু একসময় এগুলো সহ্য হয়ে যায়,মানিয়ে নিই,ধৈর্য্য ধরি, কারণ শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়,এটাও শিক্ষার অংশ। এই তিন বছরে হলের আশপাশ,মানুষগুলো,সব নিজের পরিবারের অংশ মনে হয়। সেই অপরিচিত হলের মানুষগুলোকে এখন খুব আপন মনে হয়, একে অপরের সুখে দুঃখে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকি, রাতে হলে ফিরেই পোশাক পরিবর্তন না করেই আড্ডায় বসে যাই, রাত বিরাতে খাওয়ার প্রিপারেশন, বিস্কিট চানাচুরময় রাত, দলবেধে সিনিয়র-জুনিয়রের পুরো হল চক্কর দেয়া, মোটকথা হলজীবন কে এখন এডভেঞ্চার এর চেয়ে কম কিছু মনে হয়না। এখন আর ছোট ছোট ছুটিগুলোতে বাসায় যাওয়া হয়না,বরং ঈদের ছুটিগুলোতে ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার আগে কয়েকবার করে পিছন ফিরে তাকাই মিস করব বলে। এখন ভাবতেই কস্ট হয় যে আগামী কয়েকবছর পরে আমাকেও হল ত্যাগ করে কর্মজীবনে পা রাখতে হবে,ভাবতেই কেমন লাগছে! জীবন কিছুটা অসম্পূর্ণ রয়ে যেত শারমিন জাহান শশী শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল, চবি ভাগ্যক্রমে চবির খালেদা জিয়া হলে ডাবলিং-এ একটা সিট পেলাম। হলে থাকলে যথেষ্ট উপভোগ্য ও স্বাধীন জীবন পার করা যায়। আমার রুমে তামান্না আপু, পুনম, পল্লী, তাসপিয়া আর ইষ্টি। অনেক ভালো রুমমেট পেয়েছি। সারাদিন হাসিখুশি থাকে সবাই। একটু মন খারাপ থাকলে সবাই ভালো করার চেষ্টা করে। কোনো কিছুতে বাঁধা দেয়ার কেউ নেই। হলের মুখরিত পরিবেশ। চারদিকে ফুল গাছ, মৌ মৌ গন্ধ, ঠা া, মনোরম ও সুন্দর পরিবেশ। ১০-১২ টা রুম মিলে একটা ব্লক। মাসে মাসে ব্লক মিটিং ছাড়াও ব্লক পিকনিক হয়। সবাই সাজগোজ করে ছবি তুলতে উন্মত্ত হয়। সে কি ভালো লাগা! এক একটা যেন শাড়ি পরা পরী! লাল পরী, নীল পরী, সাদা পরীর মতোই দেখতে লাগে। অনেক আনন্দ হয় সেদিনটায়। আমার মনে হয় হল লাইফ যারা পায় না, তাদের জীবন কিছুটা হলেও অসম্পূর্ণ। অনেক অনেক বেশি ভাল লাগার একটা স্থান হলো হল। আবার কতগুলো নিয়ম পালন করা লাগে। আমার ওগুলো ভাল লাগে না। এটা কর না ওটা কর না, কেমন যেন রুলসগুলো! তবে হলে থাকার আনন্দটাই সব কিছুকে ছাপিয়ে দেয়।
×