জিএম মোস্তফা ॥ প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের শাসনকর্তা জুলিয়াস সিজারের ইতিহাস বিখ্যাত উক্তি, ‘আমি এলাম, আমি দেখলাম, আমি জয় করলাম।’ এশিয়ার এক যুদ্ধ জয়ের পর এই কথাটা বলেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সেই পুরনো কথাটাই নতুন করে বললেন জøাতান ইব্রাহিমোভিচ। সুইডেনের সাবেক কিংবদন্তি ফুটবলার এই মন্তব্য করলেন আমেরিকা জয়ের পর। হ্যাঁ, এলএ গ্যালাক্সি অধ্যায় শেষে টুইট বার্তায় জøাতান ইব্রাহিমোভিচ লিখেছেন, ‘আমি এলাম, আমি দেখলাম, আমি জয় করলাম। আমাকে পুনর্জনম দেয়ার জন্য এলএ গ্যালাক্সিকে ধন্যবাদ। গ্যালাক্সি সমর্থকদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা জøাতানকে চেয়েছিলেন, আমি জøাতানকে দিয়েছি। সবাইকে স্বাগতম। তবে এই গল্প চলতেই থাকবে...। এখন আমি বেসবল দেখতে ফিরে যাচ্ছি।’
আমেরিকান ক্লাব এলএ গ্যালাক্সির সঙ্গে ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি করেছিলেন ইব্রাহিমোভিচ। এর ফলে আমেরিকান ক্লাবটির জার্সিতে ইতোমধ্যেই শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন সুইডিশ স্ট্রাইকার। যদিওবা শেষ ম্যাচে হেরে গেছে তার দল। তারপরও এই দুই বছরে গ্যালাক্সির হয়ে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে উজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী ইব্রাহিমোভিচ। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে আমেরিকান ক্লাবটির হয়ে মিশন শুরু করেছিলেন তিনি। এই সময়ে ৫৬ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করে প্রতিপক্ষের জালে ৫২ বার বল জড়িয়েছেন সাবেক বার্সিলোনা ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই তারকা ফুটবলার।
ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলাতেও মেজর সকার লীগে অসাধারণ সব পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছেন তিনি। তার সময়ে টানা দুইবার বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ইব্রাহিমোভিচ। টানা দুই বছরে গোল্ডেন বুট জয়ের রেকর্ডও গড়েন তিনি। প্রথম মৌসুমে সেরা গোলের পুরস্কারটাও নিজের শোকেসে তুলেন ইব্রাহিমোভিচ। তার পারফর্মেন্স প্রভাব ফেলেছে গোটা মেজর সকার লীগেই। গত দুই মৌসুমে ইব্রাহিমোভিচের পারফর্মেন্সে মুগ্ধ-বিমোহিত তার ক্লাব এলএ গ্যালাক্সিও। এ প্রসঙ্গে ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট ক্রিস ক্লেইন বলেন, ‘২০১৮ সালে তার আগমনের পর থেকেই লস এ্যাঞ্জেলসের ফুটবলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই সময়ে ইব্রাহিমোভিচের নৈতিক কাজ এবং দলের জন্য যে আবেগ প্রদর্শন করেছে সে জন্য আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
গ্যালাক্সি ছাড়লেও ফুটবলকে কখন বিদায় বলবেন ইব্রাহিমোভিচ? এ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তার সমর্থকদের। তবে এখনই যে তার ফুটবলীয় গল্পের সমাপ্তি ঘটছে না সেটা সুইডিশ তারকা নিজেই ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছেন। কেননা তাকে পেতে এখনও মরিয়া ইতালিয়ান সিরি’এ লীগের দল এসি মিলান এবং বোলোগনা। ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এসি মিলানের জার্সিতে খেলেছিলেন ইব্রাহিমোভিচ। তবে আবারও কী নিজের পুরনো ক্লাবে ফিরবেন তিনি? নাকি বুড়ো বয়সে নতুন কোথাও ঠিকানা গড়বেন ইব্রাহিমোভিচ? ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার।
বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ার উপহার দেয়া ইব্রাহিমোভিচের শুরুটা হয়েছিল ৬ বছর বয়সে। একজোড়া বুট পাওয়ার পর নিজের মায়ের ঘরের বাইরের মাঠে খেলা শুরু করেন তিনি। ছোট এবং নুড়ি পাথরে ভরা রুক্ষ মাঠে জøাতান এবং বন্ধুরা বিভিন্ন স্কিল, ট্রিকস, স্পিন, ফ্লিক এবং শট অনুশীলন করত। জায়গা কম থাকায় পায়ে এবং মাথায় দুই জায়গাতেই খুব দ্রুত হতে হতো। ১৭ বছর বয়সে যোগ দেন নিজের শহরের সবচেয়ে বড় ক্লাব মালমোতে। একই দলের আরেক খেলোয়াড়ের বাবা-মা আরও কয়েকজনের অভিভাবকসহ ইব্রাকে ক্লাব থেকে বহিষ্কারের জন্য ক্লাবের ম্যানেজমেন্ট বরাবর দরখাস্ত করেন। এর পেছনে কারণ ছিল, ইব্রা তাদের একমাত্র ছেলের মাথায় ঢুস মেরেছিল। ১৮ বছর বয়সে ইব্রাহিমোভিচ বুঝতে পারেন, ফুটবলে তার ভাল ভবিষ্যত আছে, একমাত্র ফুটবলই পারে তাকে দরিদ্রতা থেকে মুক্ত করতে। ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় বিভাগের দল মালমো ফুটবল ক্লাবের হয়ে তার অভিষেক হয় পেশাদার ফুটবলে এবং পরের মৌসুমেই মালমোকে তুলে নিয়ে আসেন সুইডেনের প্রথম বিভাগে। পরের বছরই ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার এই স্ট্রাইকার তৎকালীন সুইডিশ ট্রান্সফার রেকর্ডে পাড়ি জমান বিখ্যাত ডাচ ক্লাব আয়াক্স ফুটবল ক্লাবে। এর পরের গল্পটা তো সবারই জানা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: