ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুর, নীলফামারী ॥ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষার উদ্যোগ

’২১ সালের জুলাইয়ে গ্যাস যাচ্ছে উত্তরের দুই জেলায়

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

’২১ সালের জুলাইয়ে গ্যাস যাচ্ছে উত্তরের দুই জেলায়

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী ॥ ২০২১ সালের জুলাই মাসের মধ্যে পাইপলাইনে গ্যাস পেতে যাচ্ছে রংপুর জেলা ও নীলফামারী জেলার উত্তরা ইপিজেডসহ সৈয়দপুরের শিল্পকারখানাগুলো। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পে বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর ও নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত উচ্চচাপ সংবলিত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ১৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের জন্য এ সংক্রান্ত রোড ম্যাপ তৈরি ও জরিপ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ নিয়ে গ্যাস ট্রান্সমিশন লিমিটেড (জিটিসিএল) প্রস্তাব অনুমোদন করলেই রংপুর ও নীলফামারী জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ কাজে হাত দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, জিটিসিএলেই অনুমোদন সাপেক্ষে চলতি বছরের মধ্যেই জমি অধিগ্রহণ ও জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর শুরু হবে পাইপলাইনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনের নির্মাণ কাজ। আশা করা হচ্ছে ২০২১ সালের জুলাই মাসের মধ্যে এ অঞ্চলের গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি ও খনিজ স¤পদ মন্ত্রণালয় থেকে বগুড়া-রংপুর ও সৈয়দপুর তথা নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়। যা পরিকল্পনা কমিশনে (একনেক) অনুমোদনও হয়েছে। প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। যা বরাদ্দও প্রদান করা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর ও নীলফামারীর উত্তর ইপিজেড পর্যন্ত ৮৯টি মৌজার ৩০৯ দশমিক ৫ হাজার ৬২৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ শেষ করা হয়েছে। এতে গ্যাস পাইপ নির্মাণে দুটি নদী ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া রংপুর, সৈয়দপুর ও নীলফামারীতে প্রয়োজনীয় অফিস অবকাঠামো নির্মিত হবে। জানা যায়, জমি অধিগ্রহণে রংপুরের পাঁচটি উপজেলা পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর এবং নীলফামারী সদরে জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে। নীলফামারী ও সৈয়দপুর উপজেলায় প্রায় ২৭ একর ও রংপুর জেলার ৫ উপজেলা প্রায় ১৬৮ দশমিক ৫ হাজার ৫০৮ একর জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে। পাশাপাশি গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপনের কাজের সুবিধার্থে সংবলিতভাবে বগুড়া, রংপুর ও নীলফামারী জেলায় মোট ৮৯টি মৌজায় ৩০৯ দশমিক ৫ হাজার ৬২৬ একর জমি অধিগ্রহণ এবং হুকুম দখল করা হবে। অধিগ্রহণকৃত জমি স্থায়ীভাবে নেয়া হবে এবং হুকুম দখলকৃত জমি কাজের সুবিধার জন্য কিছুদিন ব্যবহার করা হবে। কাজ শেষে তা ফেরত দেয়া হবে জমির মালিককে। সূত্র মতে, ভূমি মালিকগণ জমির মূল্যের তিনগুণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাবেন। রংপুর বিভাগে স্বাভাবিক বিদ্যুত সরবরাহে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, শিল্পায়ন তথা ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প এটি। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, রংপুর ও সৈয়দপুরে দুটি ২০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন বিদ্যুত কেন্দ্রসহ ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ আকারে বহু শিল্পকারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কয়লা, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল ইত্যাদি জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে রংপুরে ১০০ ও সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাস¤পন্ন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রংপুর, পীরগঞ্জ, সৈয়দপুর, উত্তরা ইপিজেড এবং প্রস্তাবিত নীলফামারী অর্থনৈতিক অঞ্চলে পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ফলে দ্রুত এসব অঞ্চলে শিল্পের প্রসার ঘটবে। যার কারণে ভবিষ্যতের চাহিদা মাথায় রেখে ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। উত্তরবঙ্গের রংপুর বিভাগে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কো¤পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ইমাম উদ্দিন শেখ। তিনি জানান, যাচাই প্রক্রিয়া স¤পন্ন করার পর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপরই গত বছরের ৪ নবেম্বর প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়। রুট ম্যাপ ও জমি অধিগ্রহণ এলাকা চিহ্নিত করতে একটু সময় লেগেছে। এখন জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান করে দ্রুত পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
×