ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ দারুণ সময় বলতে হবে। উৎসব অনুষ্ঠানে এখন মুখরিত রাজধানী। একটি শেষ হচ্ছে তো শুরু হচ্ছে অন্যটি। এ ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো রাধারমণ উৎসব। তিন দিনব্যাপী আয়োজনে মুখরিত শিল্পকলা একাডেমি। খোলা আঙিনায় বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। বিশাল মঞ্চ। মঞ্চে যারা গান করছেন তাদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরের। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে শিল্পীরা এসেছেন। তৃণমূলের শিল্পীদের পরিবেশনা উৎসবটিকে আলাদা করেছে। ভাটিবাংলার সাধক শিল্পী রাধারমণের গান গাইছেন তারা। হাটে মাঠে ভেসে বেড়ানো সুর রাজধানী শহরে এসেও বদলে যায়নি। বরং প্রকৃত কথা সুরে রাধারমণ শোনার চমৎকার অনুভূতি হচ্ছে শ্রোতার ভেতরে। রাধারমণ সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র আয়োজিত উৎসব চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। একই দিন আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে লোকসঙ্গীতের আন্তর্জাতিক আসর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট। এ মঞ্চটি আরও বড়। অভিজাতও বলা যায়। সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলছে সঙ্গীতায়োজন। বিভিন্ন দেশের লোকসঙ্গীত শিল্পীরা গাইছেন। বাজাচ্ছেন। বর্তমান সময়ে যাদের খুব খ্যাতি, প্রচুর টাকা খরচ করে তাদের আনা হয়েছে। বাইরের দেশ থেকে আসা তারকা শিল্পীরা নিজ নিজ দেশের লোকসঙ্গীতকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। একই মঞ্চে পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশের শিল্পীদেরও। বিভিন্ন বয়সী শ্রোতা উৎসবে যোগ দিচ্ছেন। সবাই যে ভাল শ্রোতা, না, এমন নয়। রাতে ঘুরে বেড়াতেও অনেকে আসছেন। গল্প আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে গান শুনছেন তারা। এর আগে গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে লিট ফেস্ট। এটিও তিন দিনের উৎসব। বিদেশী সাহিত্যের প্রতি যাদের কৌতূহল বেশি মূলত তারা যোগ দিয়েছিলেন লিট ফেস্টে। ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থী নিজেদের মতো করে সময় কাটিয়েছেন। সাহিত্যের হলেও সঙ্গীত, নৃত্য, চলচ্চিত্রসহ নানা আয়োজনে মেতে ছিলেন দেশী-বিদেশী অতিথিরা। অবশ্য কেউ কেউ এসব ফেস্ট নিয়ে বিরক্ত বলেও মনে হচ্ছে। তারা এগুলোকে বলছেন, কর্পোরেট কালচার। কর্পোরেট কালচারে বাণিজ্য থাকে। আরও নানা কিছু যোগ হয়। এসব কারণে প্রচারে বেশি আসে। অথচ নিজস্ব সংস্কৃতির উজ্জ্বল দিকগুলো তুলে ধরার জন্য ভাল কোন পৃষ্ঠপোষক পাওয়া যায় না। উদাহরণ হিসেবে জাতীয় নবান্ন উৎসবের প্রসঙ্গ টানছেন তারা। বলছেন, ফসল কেন্দ্রিক সবচেয়ে প্রাচীন এবং প্রধান উৎসবটি নিয়ে তেমন কোন প্রচার চোখে পড়ছে না। নিজস্ব সংস্কৃতি ও শেকড়ের প্রতি শতভাগ অনুগত থেকে অন্যান্য উৎসব অনুষ্ঠানে মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা। এদিকে, উৎসব শুরু হয়ে গেছে পিঠাপুলিরও। শহর ঢাকার অলিতে গলিতে অস্থায়ী চুলো বসিয়ে পিঠা তৈরি করা হচ্ছে। ব্যস্ত সড়কের পাশে, পার্কের ধারে, ফুটপাথে দাঁড়িয়ে অনেকেই পিঠা খাচ্ছেন। টিএসসি এলাকায় একাধিক দোকান। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, দোকানিদের কেউ ভাঁপাপিঠা করছেন। কেউ চিতই। একদিকে পিঠা হচ্ছে। অন্যদিকে খাওয়া। সবই গরম গরম। দেখে মনে পড়ে যায়, নবান্ন উৎসবের কথা। আগামীকাল ১ অগ্রহায়ণ নবান্ন উৎসবে মাতবে ঢাকাবাসী। আর এ উৎসব তো পিঠা পুলি পায়েস ছাড়া হয় না। আগে-ভাগে শুরু হওয়া পিঠা উৎসব পুরো শীতকাল ধরে চলবে। অন্য প্রসঙ্গ। আরও একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একটি হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। নম্বরটি ৩৩৩। এ নম্বরে কল করে জরুরী তথ্য যেমন জানা যাবে, তেমনি পাওয়া যাবে নাগরিক সেবা। ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা সচল থাকবে হটলাইন। এ সম্পর্কে মেয়র আতিকুল ইসলামের বক্তব্যটিও উল্লেখ করার মতো। তিনি বলেছেন, এখন যেমন ঘরে বসেই খাবার অর্ডার করে পাওয়া যায়, তেমনি সিটি কর্পোরেশনের সেবাও ঘরে বসেই পাওয়া যাবে। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি আমরা। আগে নাগরিকেরা আমাদের ফোনে পেতেন না। অনেকেই জানতেন না কোথায়, কার কাছে, কিভাবে, কত টাকায়, কি সেবা পাওয়া যায়। এখন থেকে ফোন করে সব জানতে পারবেন। সেবা চাওয়া ছাড়াও যে কোন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারবেন এ নম্বরে। হ্যাঁ, নতুন এবং সুন্দর একটি উদ্যোগ। উদ্যোগটি সফল হবে, এমনটিই আশা আমাদের।
×