ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুব্রতা রায়

নারীর প্রতি সম্মানবোধ

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

 নারীর প্রতি সম্মানবোধ

আজকাল নারী নির্যাতনের যে চিত্রটি দেখছি তা অত্যন্ত বীভৎস, যেন প্রতিশোধ নেবার জন্যই নির্মমভাবে কুকাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় অমানবিক ও অসভ্য সমাজের চরম অবক্ষয়ের অধ্যায় অতিক্রম করছি আমরা। তবে সমাজে শুধু নারী বা কন্যাশিশু নয় সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যই বলছে সমানভাবে পুত্রশিশুরাও নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। সমাজের যে সময়কাল থেকে নারীকে অধঃস্তন ভাবা শুরু হয়েছে সে সময় থেকেই নারী শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে, অবহেলা ও যৌননির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। যেগুলি ঘটতে দেখি ও শুনি সেগুলি হিসেবে ধরি কিন্তু নির্যাতন চিত্রে এর বাইরেও বিশাল সংখ্যক রয়েছে যারা গননায় নেই। সচেতনতার অভাবে অনেকসময় নিজেরাই বুঝি না যে- নির্যাতিত হচ্ছি। যদি নির্যাতনের সংজ্ঞার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করি দেখবো প্রত্যেক নারীই কোন না কোনভাবে কোন না কোন নির্যাতনের শিকার হন। প্রায় প্রতি নারীর জীবনে কিছু ঘটনা অপ্রকাশিতই থাকে চিরকাল। যৌননির্যাতন এতোটা মারাত্মক নির্যাতন যে শারীরিক, মানসিক ও অবহেলার প্রত্যেকটা যন্ত্রণা তাকে ভোগ করতে হয়। আত্মহত্যা করতে দেখি অল্পবয়সী কিছু মেয়েদের। এটাকে নেহায়েৎ একটি আত্মহত্যাই ধরে নিই, অথচ এখানেও লুকানো থাকে প্রচন্ড অবহেলা ও মানসিক নির্যাতনের গল্প। উন্মাদ না হওয়া পর্যন্ত মনের চিকিৎসার কথা এদেশে এখনোও প্রায় অব্যক্ত থাকে কিন্তু সমাজের চালচিত্র বলছে শরীরের থেকেও মনের রোগ নিশ্চিতভাবে অনেক বেশী এদেশটায়। তবে নতুন করে হলেও ভাবতে তো হবেই। সন্তান সবার ঘরে আছে। সমাজ যখন অনিরাপদ হয় তখন নিজের প্রাণপ্রিয় সন্তানটিও যে কোনদিন আক্রান্ত হবে না - বলি কেমন করে? বাইরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর সাথে সাথে মানুষের মগজের বেষ্টনীটাও জরুরী। সমস্ত ব্যবস্থার মাঝে মানুষের মগজ ও বাহ্যিক একটা নিরাপত্তা বেষ্টনী দরকার -যা হলিস্টক এ্যাপ্রোচেই করতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন সরকারের সক্রিয়তা। প্রথমেই কিছু পদ্ধতি পরিবর্তন করা দরকার, সাথে রাষ্ট্রে নিযুক্ত কর্মীবাহিনীর কাজের হিসেব, দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার পরিপূর্ণ তদারকি। দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাতে হবে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। একমুখি শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সাথে অন্তত অষ্টম শ্রেণির আগে কোন পাবলিক পরীক্ষা না নেয়া, পাঠ্যসূচিতে ইতিবাচক মুল্যবোধ শিক্ষার মাধ্যমে ভালোর ভিত্তিটা তৈরি হওয়া প্রয়োজন এই সময়কালেই। পরীক্ষা ব্যবস্থা ও কোচিং বাণিজ্যের অবসান না ঘটানো পর্যন্ত শিশুর আনন্দঘন শৈশব ফিরে দেয়া প্রায় অসম্ভব, হয়তো তাই ভিত্তির বৈকল্যের প্রভাবে মানসিক বিকৃত কিছু মানুষ সমাজকে অস্থির করে তুলছে। আজও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে, বিশেষ করে অন্ধত্ব যাদের সঙ্গী। পরিবার এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাকে মূল্যবোধ শিক্ষার আধার বলা যায়। একটি পরিবারে একজন পুরুষের নারীর প্রতি সম্মানবোধ- প্রজন্মকে নারীর প্রতি সম্মানবোধ শেখায়। এছাড়া মা-বাবা সন্তানদের খেয়াল রাখবেন, সময় দেবেন, পড়ালেখার খোঁজ নেবেন, বন্ধু হবেন, খেলার সাথে- সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে- লাইব্রেরির সাথে-বিজ্ঞান ক্লাবে যুক্ত রাখবেন, সন্তানকে প্রশ্ন করতে ও যুক্তি দিয়ে কথা বলতে শেখাবেন। এমনকি হুজুর বা ধর্মীয় শিক্ষাগুরু বা প্রচার মাধ্যম বা উপাসনালয় ও ওয়াজমাহফিলে কী বলছেন, কী পড়াচ্ছেন সেদিকও খেয়াল রাখা আজ সময়ের দাবী। পরিবারে, প্রতিষ্ঠানে ও সর্বত্র নারীর প্রতি সম্মানবোধ এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থায় সুস্থ ও সঠিক মুল্যায়ন একদিন নারী নির্যাতনকে না বলবে। কুড়িগ্রাম থেকে
×