ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সমতার সৌন্দর্য

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

  সমতার সৌন্দর্য

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ট্রেন কোন স্টেশনে গিয়ে থামবে সে এক মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। কথায়, আচরণে, ইশারায় নারীকে মানসিকভাবে কষ্ট দেয়া, অসম্মান ও ছোট করা নারী নির্যাতনের অন্যতম অনুষঙ্গ। যৌতুকের দাবিতে নারীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে আঘাত করা এমনকি ধর্ষণ ও হত্যা করা নারী নির্যাতনের চূড়ান্ত পর্যায়। পরকীয়ায় আসক্তি, একে অপরের প্রতি অবিশ্বস্ত হওয়া নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হওয়া নির্ভর করে নারী-পুরুষের সম্পর্কের রসায়ন বিশেষ করে পুরুষের মনমানসিকতা ও আচার-আচরণের ওপর। বর্তমান বিশ্বে পুরুষতন্ত্র ও পুরুষ শাসিত সমাজ বিদ্যমান। এখানে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে উর্ধ্বতন অধস্তন সম্পর্ক সুপ্রতিষ্ঠিত। পুরুষরা অভিভাবক ও চালক। আয় বৈষম্য, কর্মসংস্থান সুযোগের অপ্রতুলতা, নীতি নির্ধারণী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা নারীকে পুরুষের অধীনস্থ করে রেখেছে। অর্থনৈতিক কর্মকা- এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যদিও নারীদের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় বেড়েছে তথাপিও এখনও পর্বতপ্রমাণ বৈষম্য বিরাজমান। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আধিপত্যবাদী মানসকাঠামো নারী নির্যাতনের অন্যতম প্রধান কারণ। ঘর-বাহির, পরিবহন, অফিস-আদালত, বাণিজ্যিক-ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রে ইভটিজিং এমনকি অনৈতিক অসামাজিক আচরণের কারণে শিশু কিশোরী যুবতী নারীদের বিব্রত হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণমাধ্যম সচেতনতার ফলে এর সামান্য অংশই আলোর মুখ দেখে। অধিকাংশই থেকে যায় আড়ালে। সাম্প্রতিককালে ফেনীর নুসরাত হত্যাসহ কিছু কিছু হত্যার দ্রুত বিচার সম্পন্ন হলেও তনু হত্যাসহ বেশিরভাগ হত্যারই বিচার হয়নি অথবা বিচার বিলম্বিত বা দীর্ঘসূত্রতার বেড়াজালে আটকে আছে। এ ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে পুরুষতান্ত্রিক মানস কাঠামো পরিবর্তন হওয়া আবশ্যক। পুরুষের দৃষ্টিতে নারীরা অবলা, অসহায়, অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন, পুরুষনির্ভরশীল পরগাছা, কোমলস্বভাবা ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের যথাযথ সুযোগ পেলে নারীরাও পুরুষের সমকক্ষ বা ক্ষেত্র বিশেষে অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সক্ষম হতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও তার ভূরি ভূরি প্রমাণ আছে। নারীদের অবলা, কোমলস্বভাবা না ভেবে তাদের কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি দিয়ে সহকর্মী হিসেবে মর্যাদা দিলে পুরুষরাই বেশি লাভবান হতে পারেন। নারী নির্যাতন ও নারী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ও বিচারিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কোন প্রকার শৈথিল্য বা দীর্র্র্র্র্র্র্র্র্ঘসূত্রতার সুযোগ নেই। নারীকে শুধুমাত্র সংসারের অলঙ্কার, ভোগের সামগ্রী এবং সন্তান ধারণের যন্ত্র হিসেবে গণ্য করার পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। মনে রাখতে হবে নারীর ওপর পুরুষের যে অধিকার, পুরুষের ওপরও নারীর সেই অধিকার আছে। তাই নারীকে পুরুষের পরামর্শক, সহকর্মী, সহযাত্রী গণ্য করে পাশে রেখে চলার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেককে ঘরে বন্ধী রেখে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রেখে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির আশা নিরর্থক বা বাস্তবসম্মত হবে না। পুরুষ ও নাগরিক সমাজকে এ দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা আজকে সময়ের দাবি। শান্তিবাগ, পটুয়াখালী থেকে
×