ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গোপাল নাথ বাবুল

সমাজ ভাবনা -বিষয় ॥ নারী নির্যাতন কি থামবে না?

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

সমাজ ভাবনা -বিষয় ॥ নারী নির্যাতন কি থামবে না?

পুরুষতন্ত্রের বিকৃত প্রকাশ ॥ পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীকে করুণার পাত্রী করে দাসত্বের শৃঙ্খলে বেঁধেছে সেই আদিম যুগ থেকে। শিকার যুগে শক্তিতে নারীর পিছিয়ে পড়া তার সামাজিক অবস্থানকে আরও পেছনে ঠেলে দেয়। তখন থেকেই নারীর জন্য নির্দিষ্ট করে দেয় ঘর-সংসার ও সন্তান লালন-পালনের একনিষ্ঠ কর্তব্য। আর এমন কর্তব্যই নারীকে সমাজের কালো কাফনে দেয় মুড়িয়ে। ধর্ম ও সামাজিক অনুশাসন রচনাকালে নারীকে কৌশলে শৃঙ্খলিত করা হয়। আইয়ামে জাহেলিয়া, সতীদাহ, বাল্যবিয়ে, বহুবিবাহসহ নানা অনাচার নারীর চোখ-কান ফুঁড়ে কদর্য অলঙ্কার হয়ে আছে আবহমানকাল থেকে। বাংলাদেশের সমাজ জীবনে পরিবর্তনের হাওয়া লাগলেও যৌতুকের চাপ নারী ভোগ করে বড়ই নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে। মোল্লাতন্ত্রের চৌকাঠ পেরিয়ে নারী শিক্ষা গ্রহণের অধিকার পেলেও পায়নি জীবনের নিরাপত্তা। রাষ্ট্র বলুন, সমাজ বলুন, কেউ এমন নিরাপত্তা নারীকে এখনও দিতে পারেনি। কেননা, ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির-গির্জা সবখানে রয়েছে নতুন নতুন নির্যাতনের মাত্রা। রাস্তাঘাটে বখাটেদের উৎপাত, নিজ ঘরে আপনজনদের উৎপাত কিশোরী-যুবতী ও নারীর জীবন বিষিয়ে তুলেছে। কীভাবে নারী নির্যাতন রোধ করা যাবে ? সমাজ বা রাষ্ট্রই বা কী করতে পারবে ? যদি নিজ ঘরে জন্মদাতা পিতা নিজের কলিজাটাকে সারা রাত ধরে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় আর জন্মদাত্রী মা পিতার এমন নিষ্ঠুর কাজে সাহায্য করতে ও মেয়ের বেদনার্ত আর্তনাদ বন্ধ করতে মেয়ের মুখ চেপে ধরে ? কোনকালে, কোন সমাজে ছিল এমন প্রাণাধিক স্নেহের ছোট বোনটিকে নিজের ভাই ধর্ষণ করে। ইতিহাসে মাৎস্যনায় ও ইসলামের ইতিহাসে আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগের ইতিহাস পড়েছি। সেখানেও এমন নিষ্ঠুর ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে বলে জানা নেই। ইতিহাস ছিল, মেয়ে সন্তানকে জিন্দা কবর দিত। কিন্তু নিজের মেয়ে বা নিজের বোনকে ধর্ষণ, এমন ইতিহাস আছে কিনা সন্দেহ আছে। প্রেমের প্রস্তাবে অমত প্রকাশ করলে এসিড ছুড়ে মারা বা কুপিয়ে জখম করা অথবা মেরে ফেলা, যৌতুক বা পরকীয়ার জন্য হত্যা, নিজের স্ত্রীকে পতিতালয়ে বিক্রি, নিজের পিতৃসম শিক্ষক, মাদ্রাসার শিক্ষক বা মসজিদের বুড়ো ইমাম বা মন্দিরের ব্রাহ্মণ কর্তৃক যৌন হয়রানি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা প্রিন্টিং মিডিয়া কিংবা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে। আর এমন সব নৃশংস ও নিষ্ঠুর নারী নির্যাতনের বীভৎস চিত্র বিবেকের কপাটে আঘাত করে যায়। বর্তমান সময়ে পোষাকশিল্পও নারীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দাস প্রথা নবায়ন করেছে। এ ছাড়া বিদেশে কাজের সুযোগ, বিয়ে, চাকরির প্রলোভন, মোবাইল ফোনে প্রেমের প্রতারণা, যৌন হয়রানি বাংলাদেশী নারীদের সাতকাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবিধান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন সবকিছুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো আজ ডাল-ভাত হয়ে গেছে। সুতরাং বলতে হয়, নারী নির্যাতন পুরুষতন্ত্রের এক বিকৃত আত্মপ্রকাশ। সমাজের ধমনী ও শিরা থেকে এ ব্যধির রসায়ন নিষ্কাশন হওয়া আজ সভ্যতার যথার্থতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। দোহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে
×