ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব

লক্ষ্মীপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

লক্ষ্মীপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর, ১২ নবেম্বর ॥ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরে উঠতি আমন ফসল এবং শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেব মতে আমন এবং শীতকালীন সবজিসহ নয় হাজার ৬৭৫ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আমন নয় হাজার হেক্টর, শীতকালীন সবজি ছয় শ’ হেক্টর এবং অন্যান্য ডাল জাতীয় ফসল। ক্ষতি হয়েছে অসংখ্য মাছের ঘের। এছাড়া ডোবা-জলাশয় ভরাট হয়ে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার ৭ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সমসেরাবাদ এলাকার কয়েকটি সড়কে পাশে অর্ধশতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার অন্যান্য এলাকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে বাঞ্ছানগর, ভবানীগঞ্জ, টুমচর, কালীরচর ও লাহারকান্দি। ঝালকাঠি নিজস্ব সংবাদদাতা ঝালকাঠি থেকে জানান, রাজাপুরের বড়ইয়া ইউনিয়নের বিষখালি নদীর তীরের চরে অবস্থিত চর পালট গুচ্ছগ্রামের নির্মাণাধীন ১৭টি ঘর বিধ্বস্তসহ ২৭টি ঘর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টির পানিতে বালু ও মাটি ধুয়ে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে চর পালট গুচ্ছগ্রাম বাস্তবায়ন কমিটি দাবি করেছে। এতে যথাসময়ে ঘরগুলো ভুক্তভোগীদের মাঝে হস্তান্তর নিয়ে চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত নজর দেবে এবং ক্ষতি পুষিয়ে যাতে পুনরায় নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। চর পালট গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তাবায়ন কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য আহসান কবির জানান, চর পালট গুচ্ছগ্রামে ৭০টি ঘর, টিউবঅয়েল ও লেট্রিন নির্মাণের জন্য গুচ্ছগ্রাম সিবিআরপি-২ প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সে মর্মে কাজ শুরু করে ৩৫টি ঘরের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ অবস্থায় ঝড়ে ১৭টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ১০টি ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকার যদি এ ক্ষতির বিষয়ে নজর না দেয়, তাহলে কোনভাবেই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় এবং সঠিক সময়ে এ ঘর তৈরি ও সঠিকভাবে কাজ শেষ করা সম্ভব নয় এবং যথাসময়ে উপকারভোগীদের মাঝে ঘর হস্তান্তর করা সম্ভব হবে না। রাজাপুরের ইউএনও মোঃ সোহাগ হাওলাদার জানান, চর পালট গুচ্ছগ্রামটি বড়ইয়া ইউনিয়নের বিষখালি নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে নির্মাণ কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরে ক্ষতির বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আমতলী নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে আমতলী-তালতলী উপজেলার পাঁচ শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার একর জমির আমনের ক্ষেত। পায়রা নদীর ঢেউয়ে ভেঙ্গে গেছে এক কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। জানা গেছে, রবিবার সকাল নয়টার দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আমতলী-তালতলীতে আঘাত হানে। চার ঘণ্টাব্যাপী চলে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি। বুলবুলের আঘাতে আমতলী-তালতলী উপজেলার পাঁচ শতাধিক কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছপালা। কয়েক হাজার একর জমির ধান ও সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান কৃষি বিভাগ। বুলবুলের প্রভাবে পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢেউয়ের আঘাতে পায়রা নদী সংলগ্ন ঘোপখালী, বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, ডাঙ্গারখাল, বৈঠাকাটা, তেতুলবাড়ীয়া ,নলবুনিয়া ও জয়ালভাঙ্গার এক কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। তালতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মহসীন বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা চেয়েছি। তারা তালিকা দিলে ক্ষতির পরিমান নিরূপণ করা যাবে। আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, আমনক্ষেতের ৩০ ভাগ ও সবজি ক্ষেতের ৭০ ভাগ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মঠবাড়িয়া সংবাদদাতা মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর থেকে জানান, মঠবাড়িয়ায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তা-বে উপজেলার ১১ ইউনিয়নের আমন ফসল এখন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়, প্রবল বর্ষণ আর জোয়ারের প্লাবনে ফসল নেতিয়ে পড়ে ২/৩ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার ফসলহানি ঘটার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। উপকূলীয় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া, বেতমোড়, আমরাগাছিয়া, সাপলেজা, টিকিকাটা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গ্রামের আমন আবাদের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে শনিবার রাত ও রবিবারের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তা-বে আমন কাঁচা-পাকা ধান প্রায় তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ে উপজেলায় পাঁচ সহ¯্রাধিক কৃষক অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় উফশী আমন ৬৬৫ হেক্টর, ১৪৩৫ হেক্টর স্থানীয় আমন, খেসারি ডাল ৮৭০০ হেক্টর, পান ৩০ হেক্টর, সরিষা ৭.৫ হেক্টর, শাকসবজি ১৫০ হেক্টর, পেঁপে ৭.৫ হেক্টর, কলা ১০০ হেক্টর, ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ৫ হাজার ৩৩৫ হেক্টর আমনের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ৫৭ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার ফসলহানির আশঙ্কা করছে কৃষি অফিস। বিন্তু বেসরকারী হিসাবে এর দ্বিগুণ ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষক। উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের তরুণ কৃষক নূরুল আমীন রাসেল জানান, কৃষি জমির মাঠ ল-ভ-। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে কৃষকের। জলাবদ্ধতায় মাঠের ফসল পচে নষ্ট হচ্ছে। পানি অপসারণের কোন উপায় নেই। কিভাবে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা করবে তা নিয়ে চিন্তিত কৃষক। মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন ঘূর্ণিঝড়, ভারি বর্ষণ ও অতিজোয়ারের প্লাবনে ফসল বিনষ্টের কথা জানিয়ে বলেন, এ ক্ষতি প্রাকৃতিক।
×