ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করলে ক্ষমা করা হবে না ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করলে ক্ষমা করা হবে না ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার কটূক্তি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করলে কাউকে ক্ষমা করা হবে না। বাংলাদেশের জনগণও এক্ষেত্রে কাউকে ক্ষমা করবে না। মঙ্গলবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, শহীদ নূর হোসেন হত্যাকা- যে গণতন্ত্রের সংগ্রামকে হত্যা করার জন্য, সেটা দেশ ও জাতি জানে। এই নূর হোসেনের প্রতি আজও কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে যারা রাজনীতিতে অক্সিজেন পেয়েছেন, তারা নেত্রীকেও কটাক্ষ করেন। তবে শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করলে জনগণ কাউকে ক্ষমা করবে না। সম্মেলনে তিনি বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। মশিউর রহমান রাঙ্গার নাম উচ্চারণ না করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, কথা মুখ থেকে ফসকে গেলে মুখে আর ফিরে আসে না। যতই ‘সরি’ বলা হোক, যত এ্যাপোলাইজ করা হোক- এ ধরনের দায়িত্বহীন মন্তব্য ও কটাক্ষ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে নষ্ট করে দেয়। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নন, শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি বহু বছর ধরে এদেশের জনপ্রিয় নেতা। এদেশের গণতন্ত্র বিকাশের অগ্রদূত। এদেশের মানুষ তাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে। তাকে কটাক্ষ করলে বাংলাদেশের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করা হবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। অনেকেই শেখ হাসিনা সম্পর্কেও কটাক্ষমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ রকম বক্তব্য সহ্য করা হবে না। শেখ হাসিনার প্রতি কোন কটাক্ষ করলে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বাংলাদেশের বহু মানুষের অনুভূতিকে কটাক্ষ করা হয়। কারণ এদেশে শেখ হাসিনা সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের খুনের দায় বিএনপি কোনভাবে এড়াতে পারে না। এই খুনীদের নিরাপদে বিদেশে পাঠিয়েছেন এবং বিদেশী দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। খুনীদের যাতে বিচার না হয় তার জন্যও জিয়াউর রহমান কুখ্যাত ইনডেমনিটি জারি করেছিলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, এখনও বলা হয় ‘মুজিব গেছে যেই পথে, হাসিনা যাবে সেই পথে’। বিএনপি আজ এ রকম ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। আরও অনেকেরই অতীতের অনেক ঘটনা আছে। বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে কেউ কটাক্ষ করলে জাতি কাউকে ক্ষমা করবে না। আমি বলে দিতে চাই, আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি, আর নয়। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলবেন। দলের বিরুদ্ধে কলহ করবেন না। আমরা আদর্শের রাজনীতি করব। আমরা বঙ্গবন্ধুর কর্মী। কেউ কারো বিষয়ে ব্যক্তিগত কটূক্তি করবেন না। কটূক্তিকারীকে সহ্য করা হবে না। সম্মেলন হলেও ১৬ নবেম্বর সংগঠনের জাতীয় সম্মেলনের দিন মহানগর উত্তরের নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যে কয়জনের নামই আসুক না কেন, সমঝোতা করে একজন করে নাম দিতে হবে। তা না হলে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই মেনে নিতে হবে। মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোবাশে^র চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ, সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি, নগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান খান ইরান প্রমুখ। দুই প্রার্থীর সমর্থকদের চেয়ার ছোড়াছুড়ি উদ্বোধনের আগে সম্মেলনস্থলে নেতাকর্মীদের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান খান ইরান ও মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। তারা দু’জনেই নগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সম্মেলনে যোগ দিতে সকাল থেকে মহানগর উত্তরের থানা ও ওয়ার্ড নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনস্থলে উপস্থিত হতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সম্মেলনস্থলে জায়গা করে নেয়াকে কেন্দ্র করে ইরান ও ইসহাকের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তারা চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু করেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতির অবনতি হলে ইসহাক সর্মথকরা সম্মেলনস্থলে ছেড়ে পাশে অবস্থান নেন। পরে অবশ্য সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর বেলা ১২টায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেখানে উপস্থিত হয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
×