ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলীয় ১৬ জেলায় ২২ হাজার ৮৩৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

বুলবুলে আর্থিক ক্ষতি ২৬৩ কোটি ৫ লাখ টাকা ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:২১, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

বুলবুলে আর্থিক ক্ষতি ২৬৩ কোটি ৫ লাখ টাকা ॥ কৃষিমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে উপকূলীয় ১৬ জেলায় ২২ হাজার ৮৩৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৬৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৫০৩ কৃষক। তিনি বলেন, রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের মানসিকতা থেকে জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা নূর হোসেনকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ফসলের ক্ষতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মলেনে তিনি এসব কথা বলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নিহত নূর হোসনে ‘মাদকাসক্ত’ ছিলেন বলে গত রবিবার মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। তার দাবি, নূর হোসেন ‘ইয়াবাখোর’, ‘ফেনসিডিলখোর’ ছিলেন। রাঙ্গার এই মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের আকাক্সক্ষা যে কত তীব্র ছিল, কত দৃঢ় ছিল সেটি প্রমাণ করে নূর হোসেনের মতো একটি ছেলে। তেমন শিক্ষিত ছেলে সে না। বিশ্ববদ্যিালয়ের ছাত্র না, সে বুকে যেভাবে লিখে রেখেছিলÑ স্বৈরাচার নিপাত যাক/গণতন্ত্র মুক্তি পাক। এটি আমি যখন নিজে নিজেও ভাবি তখন খুবই উপলব্ধি করিÑ গণতন্ত্রের জন্য আমাদের ত্যাগ কত বড় এবং আমরা কত সাহসের পরিচয় দিয়েছি, কত ত্যাগের মানসকিতা নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। তিনি বলেন, তার (নূর হোসেন) সম্পর্কে যে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে এবং তাকে ছোট করা হয়েছে, এটা খুবই দুঃখজনক। নূর হোসেনের নাম এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলেন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং আমাদের সকলের জন্য সে একটি দৃষ্টান্ত, উদাহরণ। কাজেই এটা বলা ঠিক হয়নি। তাকে বলা হয়েছে নেশাখোর, ফেনসিডিল খায়। আমি মনে করি এটা বলা খুবই দুঃখজনক। তখন সেই ইয়াবা ছিলই না এবং ফেনসিডিলও অতটা ব্যাপকভাবে প্রচার হয়নি। এটা বলা দুঃখজনক। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এটা হয়েছে কেন? বার বার বাংলাদেশে এবং এই অঞ্চলে সামরিক বাহিনী ও সামরিক স্বৈরাচার এসেছে এবং তারা এসে রাজনীতিতে দুর্বৃত্ত ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে এসে রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ফলেই বাংলাদেশে রাজনীতি কলুষিত হয়েছে। আদর্শের রাজনীতি থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গিয়েছি। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের মন্তব্য করে আমি মনে করি তারা অনেকেই স্বৈরাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং রাজনীতিতে দুর্বুত্তায়নের সঙ্গে জড়িত ছিল। সেই মানসিকতা থেকেই এই ধরনের মন্তব্য আসতে পারে। জাতীয় পার্টি তো আওয়ামী লীগের সঙ্গেই রয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা একটা দল, তারা আরেকটা দল। পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্ষমতা বা রাজনীতিতে ঐক্য হয় কোন কোন ইস্যুতে বা আন্দোলনের ইস্যুতে। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমাদের আদর্শের অনেক দূরত্ব রয়েছে। এটি সাময়িক কোন কারণে হয়েছে সেটা আপনারা বলতেই পারেন। এর অর্থ এই নয় যে তারা যদি ভুল করে বা রাষ্ট্রবিরোধী কোন কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, সেটার আমরা প্রতিবাদ করব না। অবশ্যই আমরা প্রতিবাদ করব। তাদের সংশোধন হওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই বলব। মশিউর রহমান রাঙ্গার বিরুদ্ধে আপনারা কোন ব্যবস্থা নেবেন কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, দেখি সে কী করে। সারা জাতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তীব্রভাবে প্রতিবাদ করেছে। আমি মনে করি তাদের বোধোদয় হবে এবং সুস্থ রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে নিজেদের সুসংহত রাখার চেষ্টা করবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে উপকূলীয় ১৬ জেলায় ২২ হাজার ৮৩৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৬৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৫০৩ কৃষক। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে প্রাথমিকভাবে ১৬টি জেলায় রোপা আমন, শীতকালীন শাকসবজি, সরিষা, খেসারি, মসুর ফসল আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বুলবুলে আক্রান্ত জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নড়াইল, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং লক্ষীপুর। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অতিরিক্ত কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ প্রাপ্তির পর যথাসম্ভব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ১৬টি জেলার ১০৩টি উপজেলায় ঝড়ের প্রভাব পড়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬ হেক্টর (মোট আবাদকৃত জমির ১৪ শতাংশ) এবং ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ২২ হাজার ৮৩৬ হেক্টর (মোট আক্রান্ত জমির ৮ শতাংশ)। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ ৭২ হাজার ২১২ টন। বন্যায় আক্রান্ত ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬ হেক্টর জমির মধ্যে রোপা আমন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৮ হেক্টর, সরিষা ১ হাজার ৪৭৬ হেক্টর, শীতকালীন সবজি ১৬ হাজার ৮৮৪ হেক্টর, খেসারি ৩১ হাজার ৮৮ হেক্টর, মসুর ১৯৫ হেক্টর, পান ২ হাজার ৬৬৩ হেক্টর এবং অন্যান্য ৩ হাজার ১২৬ হেক্টর।
×