ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাল থেকে আয়কর মেলা শুরু

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

কাল থেকে আয়কর মেলা শুরু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’ -এ স্লোগানে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ৭ দিনব্যাপী আয়কর মেলা। চলবে আগামী ২০ নবেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে সাত দিন, জেলা শহরে চার দিন, ৪৮ উপজেলায় দুই দিন এবং আট উপজেলায় দিনব্যাপী করমেলা আয়োজন করবে এনবিআর। সব মিলিয়ে এবার দেশের ১২০ স্থানে অনুষ্ঠিত হবে এ মেলা। এনবিআরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এবারের আয়কর মেলায় সেবা প্রদান, কর সংগ্রহ, রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। বলা হয়, রাজনৈতিক কোন সঙ্কট নেই। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও আগের তুলনায় ভাল, তাই কর আদায়ে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এবার বাড়বে। ওই কর্মকর্তা বলেন, বছরের এ সময়ের জন্য করদাতারা অপেক্ষা করে। ঝামেলাহীন ভাবে কর দেয়া সংক্রান্ত সব ধরনের কাজগুলো এক ছাদের নিচ থেকে পেয়ে যান সবাই। তাই কর মেলার আবেদন দিন দিন বাড়ছে। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আবু হোসেন জানান, করমেলায় রিটার্ন দাখিল করায় কোন নাজেহাল হতে হয় না। স্বাচ্ছন্দ্যেই সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করা যায়। একই এলাকার তাসলিমা হাসান জানান, বছরের অন্য সময় করাঞ্চলে গেলে নানান ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। কিন্তু আয়কর মেলায় তেমন কোন সমস্যা হয় না। মুহূর্তে সব ধরনের কাজ করা সম্ভব। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন জানান, করমেলা রাজস্ব আদায়ের অন্যতম উৎস। কিন্তু মেলায় সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে মেলার আয়োজন বেশি কার্যকর হবে। কারণ সারাদেশে ৯০ হাজার বাজার আছে; প্রতিটি বাজারে দুইজন করে করদাতা শনাক্ত করা গেলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৮০ হাজার। এই করদাতাদের চিহ্নিত করতে ইউনিয়ন পর্যন্ত মেলার আয়োজন করা জরুরী। সেটা অর্থনীতির জন্য বেশি অবদান রাখবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ জানান, আয়কর মেলায় প্রচুর মানুষের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে অফিসগুলোতে ভাল পরিবেশ নেই। করদাতাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হলে মেলায় এত মানুষের আগ্রহ থাকত না। কর অফিসে সেবার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, করমেলায় যারা আয়কর জমা দেন পরবর্তীতে তাদের যেন আবার প্রশ্নের মুখোমুখি না হতে হয় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল ব্যবস্থায় কর দেয়ার ধারণা মেলায় ভালভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। যাতে সহজ নিয়মে, স্বল্প সময়ে মানুষ কর দিতে পারে। পাশাপাশি কর মেলার আয়োজন সম্পূর্ণ সরকারী ব্যয়ে হওয়ার তাগিদ দেন সাবেক এনবিআরের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, স্পন্সর নিয়ে মেলার আয়োজন হলে পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠানের সুযোগ দেয়ার বিষয় সামনে আসে। শুধু ঢাকায় নয়, এ ধরনের মেলা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চালু করা দরকার। এনবিআরের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের আয়কর মেলায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫১ টাকা। ২০১৫ সালের মেলায় তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকায়। ২০১৬ সালের মেলায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকারও বেশি। বছরটিতে মেলায় রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ২০১৭ সালের আয়কর মেলায় ২ হাজার ২১৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ২২১ টাকার রাজস্ব আহরণ হয়। বছরটিতে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে, ২০১৮ সালের মেলা থেকে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৫ টাকা। এবারের মেলায় রাজস্ব আহরণের আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে যাবে বলে আশা করছে এনবিআর। এনবিআর আয়োজিত এবারের মেলায় পুরনো পদ্ধতিতে হাতে লিখে রিটার্ন জমা দেয়ার সঙ্গে অনলাইনেও রিটার্ন জমা দেয়া যাবে। মেলায় একই ছাদের নিচে রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধের সুযোগ থাকবে। রাজস্বসংক্রান্ত কোন বিষয় জানার প্রয়োজন হলে মেলায় উপস্থিত রাজস্ব কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তা জেনে নিতে পারবেন। আয়কর মেলায় কোন করদাতাকে হয়রানি করা হলে দায়ী রাজস্ব কর্মকর্তাকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। রাজধানীর আয়কর মেলা বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। গত বছরের আয়কর মেলায় সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৬, যা এর আগের বছরের তুলনায় ৩৯.৯০ শতাংশ বেশি ছিল। গতবারে রিটার্ন জমা হয়েছে চার লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৩। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয় ৪৫.৩৩ শতাংশ। আয়কর আদায় হয় দুই হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৫ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয় ১১.৩৫ শতাংশ। নতুন ইটিআইএন গ্রহণ করে ৩৯ হাজার ৭৪৩। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৫.৮৫ শতাংশ। কারও আয় বছরে আড়াই লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন দেয়া বাধ্যতামূলক। নারীর ক্ষেত্রে এ সীমা তিন লাখ। ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতার রিটার্ন জমার শেষ সময় ৩০ নবেম্বর। এ সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানার বিধান রয়েছে। অনলাইনেও রিটার্ন জমা দেয়া যাবে ॥ প্রতিবছরের মতো করদাতাদের জন্য এবারও আয়কর মেলায় কর বিবরণী থেকে শুরু করে কর পরিশোধের জন্য থাকবে ব্যাংক ও বুথ। একই ছাদের নিচে মিলবে সব সেবা। করদাতাকে শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিতে হবে। মেলায় নতুন করদাতারা ইলেক্ট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিতে পারবেন। এছাড়া ই-পেমেন্টের জন্য থাকবে পৃথক বুথ। মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এসব তথ্য জানান। এ সময় এনবিআরের অন্য সদস্য ও মেলা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অন্য বারের যেসব সুযোগ-সুবিধার ছিল তার পাশাপাশি এবার মেলায় মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদেরসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য আলাদা বুথ থাকবে।
×