ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টি২০ সিরিজ হেরে এখন টেস্টে মনোযোগ টাইগারদের

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১২ নভেম্বর ২০১৯

টি২০ সিরিজ হেরে এখন টেস্টে মনোযোগ টাইগারদের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সুযোগ ছিল ভারতকে টি২০ সিরিজে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার। প্রথমবারের মতো টি২০ ক্রিকেটে ভারতের মাটিতেই তাদের সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারানোর পর স্বপ্ন দেখাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নাগপুরে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে অভিজ্ঞতার অভাবেই যেন ৩০ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ দল। বিদর্ভ ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে ভারতের করা ৫ উইকেটে ১৭৪ রানের জবাবে ১৯.২ ওভারে ১৪৪ রানে গুটিয়ে যায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। যদিও তরুণ বাঁহাতি ওপেনার নাইম শেখ ৪৮ বলে ৮১ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলে দলকে জয়ের আশা দেখিয়ে যাচ্ছিলেন। অভিজ্ঞদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় তা আর হয়নি। ফলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর রিয়াদ দাবি করেন, গেমিং সেন্সের অভাবেই ম্যাচটি হেরেছে বাংলাদেশ। এখন দুই টেস্টের সিরিজ, যার মধ্যে কলকাতার ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামে আছে দিবারাত্রির টেস্ট। তাই টি২০ সিরিজের কথা ভুলে এখন টেস্টের দিকে মনোযোগী হতে হবে। ইতোমধ্যেই টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের নেতৃত্বে দল পৌঁছে গেছে ১৪ নবেম্বর প্রথম টেস্টের ভেন্যু ইন্দোরে। তবে মায়ের অসুস্থতায় যেতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। টি২০ সিরিজে আলো ছড়ানো বাঁহাতি ওপেনার নাইম ও সৈকতসহ ৮ ক্রিকেটার ফিরে এসেছেন দেশে। টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্তটা সঠিকই ছিল, কারণ নাগপুরে টি২০ ক্রিকেটে গড় দলীয় রান ১৪৯। পেসার শফিউল ইসলাম দলীয় ৩৫ রানেই রোহিত শর্মা (২) ও শিখর ধাওয়ানকে (১৯) সাজঘরে ফিরিয়ে দেয়াতে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রেয়াস আইয়ার শূন্য রানে সহজ ক্যাচ দিয়ে আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের কাছে জীবন ফিরে পান। সেখানেই প্রথম ভুল বাংলাদেশ দলের। শেষ পর্যন্ত শ্রেয়াস ৩৩ বলে ৩ চার, ৫ ছক্কায় ৬২ রান করেন। আর লোকেশ রাহুল ৩৫ বলে ৭ চারে ৫২ রান করেন। শফিউল ও আলআমিন হোসেন দুর্দান্ত বোলিং করলেও পেস স্তম্ভ মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন আগের মতোই নিষ্প্রভ। আগের দুই ম্যাচে তুলোধুনো হওয়া মুস্তাফিজ কোন উইকেট পাননি। এবারও উইকেটশূন্য থাকলেন ৪ ওভারে ৪২ রান দিয়ে। স্পিনাররাও এদিন সুবিধা করতে পারেনি। ফলে ৫ উইকেটে ১৭৪ রানের বড় সংগ্রহ পেয়ে যায় ভারত। জবাব দিতে নেমে ১২ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বিপদ মাথায় নিয়ে শুরু বাংলাদেশের। দীপক চাহারের পেসের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে বাংলাদেশ, জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারায়। লিটন দাসের (৯) উইকেট নিয়ে পরের বলেই সৌম্য সরকারকে (০) সাজঘরে ফেরান তিনি। তবুও তৃতীয় উইকেটে নাইম ও মোহাম্মদ মিঠুনের ৬১ বলে ৯৮ রানের জুটিতে ম্যাচ জয়ের আশা জিইয়ে রাখে বাংলাদেশ। কিন্তু মিঠুনের পরের বলেই (২৯ বলে ২৭) অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম (০) সাজঘরে ফেরেন। শেষ ৩০ বলে ৫০ রান প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু নাইম ৪৮ বলে ১০ চার, ২ ছক্কায় ৮১ রান করে বোল্ড হয়ে যান শিভম দুবের পেসে। পরের বলেই তিনি ফিরতি ক্যাচে পরিণত করেন আফিফ হোসেন ধ্রুবকে (০)। তিন দফায় এই জোড়া আঘাতে ৬ উইকেট খুঁইয়ে পথের নিশানা হারায় বাংলাদেশ। শেষ ৩৪ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯.২ ওভারে ১৪৪ রানেই থেমে যায় সফরকারীরা। আন্তর্জাতিক টি২০তে ভারতের পক্ষে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন চাহার। মাত্র ৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে করেন সেরা আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে বোলিং ফিগারের বিশ্বরেকর্ড। ৩০ রানে জিতে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে নিজেদের করে নেয় ভারত। ম্যাচ শেষে তাই রিয়াদ বলেন, ‘৩০ বলে যখন ৪৯ রান প্রয়োজন, তখন একটা সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল। এটা বলতেই পারি আমরা সিনিয়ররা ব্যর্থ হয়েছি। এটা মেনে নিচ্ছি। নাইম আর মিঠুনের জুটি দারুণ ছিল। ম্যাচে আমাদের সুযোগ ছিল। খুবই দৃষ্টিনন্দন লেগেছে ওর (নাইম) ইনিংস। যখন পর পর দুই বলে দুটো করে উইকেট পড়ে সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন। আমার এতটুক খারাপ লাগছে যে ও এত সুন্দর খেলেছে, আর আমরা ম্যাচ শেষ করে আসতে পারলাম না। আমাকে বলতেই হচ্ছে টি২০ ফরমেটে উন্নতি করতে আমাদের এখনও অনেক দূর যেতে হবে। আমাদের অনেক কিছু বিশ্লেষণ করে খুঁজে বের করতে হবে।’ অবশ্য সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের মতো পারফর্মারদের ছাড়াই এবার টি২০ সিরিজে বাংলাদেশ দলের পারফর্মেন্স ছিল নজরকাড়া। এটাই সান্ত¦নার। আর বড় পুরস্কার হিসেবে নাইমের মতো ব্যাটসম্যানকে খুঁজে পেয়েছে দল। টি২০ সিরিজ শেষ, এখন ২ টেস্টের সিরিজ নিয়ে ভাবনা শুরু। ইন্দোরে ১৪ নবেম্বর প্রথম টেস্ট। ইতোমধ্যেই অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে ভারতের টেস্ট দল। এমনকি ২২ নবেম্বর ইডেনে দিবারাত্রির টেস্ট খেলতে গোলাপি বলেও অনুশীলন করছে তারা। বাংলাদেশ দলকেও ভাবতে হবে এখন টেস্ট নিয়ে। কিন্তু এর আগেই টেস্ট দলের সদস্য মোসাদ্দেককে হারাতে হয়েছে। তিনি মায়ের অসুস্থতার জন্য দেশে ফিরে এসেছেন টেস্ট দলে না থাকা নাইম, শফিউল, বিপ্লব, আরাফাত সানি, আফিফ, সৌম্য, আবু হায়দার রনিদের সঙ্গে। প্রথম টেস্টে হয়তো তাকে ছাড়াই খেলতে হবে বাংলাদেশ দলকে। তবে ১৬ সদস্যের টেস্ট দল তাকে ছাড়া এখন ১৫-তে নেমে এসেছে। টি২০ সিরিজ শেষ হওয়ার আগেই টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুলসহ ইমরুল কায়েস, এবাদত হোসেন, আবু জায়েদ রাহী, সাইফ হাসান, সাদমান ইসলাম অনিক, মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানরা ভারতে গেছেন। তারা দলের সঙ্গে অনুশীলনও করেছেন। এখন পুরো টেস্ট দল প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ পাবে দু’দিন। সোমবারই প্রথম টেস্টের ভেন্যু ইন্দোরে পৌঁছে গেছেন মুমিনুলরা। সেখানে প্রস্তুত হতে হবে টেস্ট মেজাজে ফেরার জন্য। হাতে সময় মাত্র ২ দিন। অর্থাৎ ২২ নবেম্বর দিবারাত্রির টেস্ট খেলার জন্যও ইন্দোরের ম্যাচ শেষেই প্রস্তুতির সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের জন্য।
×