ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বুলবুলের আঘাতে ১৩ জেলায় ৩ লাখ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১২ নভেম্বর ২০১৯

বুলবুলের আঘাতে ১৩ জেলায় ৩ লাখ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত

ওয়াজেদ হীরা ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ চলে গেছে। রেখে গেছে তার ক্ষতচিহ্ন। বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের কৃষি ও কৃষক। শীতকালীন সবজি থেকে শুরু করে পাকা-আধাপাকা আমন ধানের ক্ষতিতে দুর্গত এলাকার কৃষকের মাথায় দুশ্চিন্তা ভর করেছে। দেশের ১৩ জেলায় প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক পর্যায়ে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ক্ষয়ক্ষতি সামান্যই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা দেবে । কয়েকদিন ধরে আলোচনায় থাকা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শনিবার রাতে দেশের উপকূলে আঘাত হানে। এর আগে ঘণ্টায় ১১৫ থেকে ১২৫ কিমি বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত নয়টায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগরদ্বীপ উপকূলে আঘাত হানে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। রবিবার ভোররাতে তা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছে শক্তি হারিয়ে সকালে বুলবুল পরিণত হয় গভীর স্থল নিম্নচাপে। ঝড়ে ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর এসেছে। রবিবার সারাদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল। তবে সোমবার সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যায়। ঘূর্ণিঝড়টি চলে গেলেও এর ক্ষয়ক্ষতির হিসেব শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইং থেকে বলা হয়েছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রাথমিক প্রতিবেদন করা হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে দেশের ১৩ জেলা আক্রান্ত হয়েছে। যেখানে মোট ২ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে, এর মধ্যে রোপা আমন, খেসারি ও পানের বরোজ, রবিশস্য ও শীতকালীন বিভিন্ন সবজি রয়েছে। যদিও চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানাবেন কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চন্ডীদাস কু-ু জনকণ্ঠকে বলেন, ২ লাখ ৮৯ হাজার জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত আর ক্ষতিগ্রস্ত এক নয়। আমরা মাঠ পর্যায় থেকে যে তথ্য পাচ্ছি সে হিসেবে এটি আমাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন। আমরা প্রথমে ১৬ জেলা আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জেনেছিলাম। পরে জেনেছি ১৩ জেলা আক্রান্ত হওয়ার কথা। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসেব পাঠাচ্ছে। বিভিন্ন জেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ঝড়টি যেভাবে আঘাত হানার কথা ছিল আল্লাহর রহমত যে সেভাবে আঘাত হানেনি। এতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। পূর্ণ শক্তির ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে আরও বেশি ক্ষতি হতো বলেও মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ১৩ জেলার অধীনে মোট দ-ায়মান ফসলি জমি ১২ লাখ ৯৯ হাজার ২৭৩ হেক্টর। যেখানে দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬ হেক্টর জমির ফসল, যা এসব জেলার মোট জমির শতকরা ২২.২৪ শতাংশ। কৃষি সম্প্রসারণ থেকে জানা গেছে, চলতি ২০১৯-২০ মৌসুমে বোনা ও রোপা আমান মিলিয়ে মোট ৫৮ লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়। এতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। গত অর্থবছরের চেয়ে এ অর্থবছরে জমি বেড়েছে প্রায় দুই লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর। এছাড়াও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় বারো লাখ ২৩ হাজার মেটন। এই দুর্যোগে এর খুব একটি প্রভাব ফেলবে না বলেও কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক সংসদ অধিবেশনে থাকায় তার কণ্ঠে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের আগেই এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ে আশঙ্কাপ্রবণ এলাকার সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করে দ্রুত দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। সেখানে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং কৃষির ক্ষয়ক্ষতি হলে তা নিরূপণ করতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় দ্রুত কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রম চালানো হবে। বীজ ও সারসহ যতরকম সাহায্য সহযোগিতা দরকার তা করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আমাদের মন্ত্রী বিস্তারিত জানাবেন। কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিচ্ছে। শুধু এটুকু বলব সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে আছে। রবি মৌসুমে সার বীজ যা প্রয়োজন সবই দেয়া হবে। এছাড়াও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি যাতে কমিয়ে আনা যায় সে লক্ষ্যে কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকেও দেয়া হচ্ছে নানা পরামর্শ। এছাড়াও সারাক্ষণ খোলা রয়েছে কৃষি কল সেন্টার। যেখানে ফোন করেও সেবা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা।
×