ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুমায়ূন আহমেদ অনেক বড় মাপের সাহিত্যিক ॥ তৌফিকুর রহমান

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১২ নভেম্বর ২০১৯

হুমায়ূন আহমেদ অনেক বড় মাপের সাহিত্যিক ॥ তৌফিকুর রহমান

বহুবচন নাট্যদলের কর্ণধার, নাট্যাভিনেতা তৌফিকুর রহমান। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের মঞ্চকে আলোকিত করে রেখেছেন। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে তার দলের প্রযোজনায় ‘দেবী’ নাটকে তিনি মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া জাগিয়েছেন। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় ‘দেবী’ নাটকের ১২১তম মঞ্চায়ন হবে। নাটক ও অন্যান্য বিষয়ে এই অভিনেতার সঙ্গে কথা হয়। ‘দেবী’ নাটকের পথ পরিক্রমা নিয়ে বলেন- তৌফিকুর রহমান : ‘দেবী’ নাটক নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় বরেণ্য সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কথা। সাহিত্যিক হিসেবে তিনি অনেক বড় মাপের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে ১৯৭০ সালে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। ১৯৭২ সালে বহুবচন প্রতিষ্ঠায় সম্পর্কটা আরও গভীর হয়। ১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে মহিলা সমিতিতে দলের পক্ষ থেকে মঞ্চায়ন করি ওনার ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের নাট্য প্রযোজনা। এর নাট্যরূপ দেন ওনার ভাই ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। হুমায়ুন আহমেদের অনুমতি নিয়ে ১৯৯২ সালে ‘দেবী’ উপন্যাসের মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত নেই। মোঃ ইকবাল হোসেনের নাট্যরূপ এবং আরহাম আলোর নির্দেশনায়, ১৯৯৪ সালে মঞ্চে আসে ‘দেবী’। দেশে বিদেশে প্রশংসিত নাটকটির একশ কুড়িতম মঞ্চায়নে আমরা রোমাঞ্চিত। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস মঞ্চে আনার অভিপ্রায় হলো কেন? তৌফিকুর রহমান : তরুণ প্রজন্ম হুমায়ূন আহমেদের লেখার প্রতি দারুণভাবে আকৃষ্ট। বিভিন্ন বইমেলা বা দোকানে গিয়ে দেখেছি ইয়াং জেনারেশন তার বই কিনছে এবং পড়ছে। তখন ভাবলাম এই প্রজন্মকে মঞ্চ নাটকে টানতে আমাদের হুমায়ূন আহমেদের লেখাকে মঞ্চে আনতে হবে। তখন তার কাছে যাই এবং তিনি ‘দেবী’ উপন্যাসটি দিয়ে বলেন তোমরা এটা মঞ্চে করো। বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে ‘দেবী’ নাটকটি কেমন? তৌফিকুর রহমান : বিষয়বস্তুটা বিজ্ঞানের মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে। মানুষের অতীত তো মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। এ রকম এক ভয়ঙ্কর অতীত থেকে ষোল-সতেরো বছর বয়সী রানুর প্রাণান্তর বাঁচার লড়াইয়ের প্রশ্নে দেবী সত্তাকে আঁকড়ে ধরা আর রহস্যভেদী মিসির আলীর বাস্তবতা অন্বেষণের টানাপোড়েনের নাটক ‘দেবী’। গ্রামের কোন কোন মেয়ে অল্প বয়সে হিংস্র পুরুষ দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়, পরবর্তীতে সংসার জীবনে তার যে প্রতিচ্ছবি পড়ে তাকেই লেখক তুলে এনেছেন। মিসির আলী চরিত্রে অভিনয়ে আপনার অনুভূতি কি? তৌফিকুর রহমান : ‘দেবী’ নাটকে মিসির আলী একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। মিসির আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। তিনি ক্লাসে ছেলে মেয়েদের বোঝানোর চেষ্টা করে, আসলে মানুষ যেটা করে সেটাই ঠিক। নানাভাবে এ চরিত্রটা করা যায়। আমার মনে হয়, যতবার মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করছি, ততবারই এর উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করছি। এ চরিত্রের শেষ নাই। আমি বহুবার উপন্যাসটি পড়েছি। যখন মঞ্চে উঠি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাইকোলজির প্রফেসরের যে রকম হওয়া উচিত সেই মনবৃত্তি নিয়েই অভিনয় করি। আপনি কী উৎপল দত্ত দ্বারা প্রভাবিত? তৌফিকুর রহমান : দেশ স্বাধীনের পর যখন কলকাতায় যেতাম মঞ্চে উৎপল দত্তের অভিনয় দেখতাম। আমি ওনার অনেক নাটক দেখেছি। তার অভিনয়ের বৈচিত্র্যের যে ভেরিয়েশন তা আমার কাছে অসাধারণ লাগত। তার চোখের চাহনি, হাসি, কথা বলার ভঙ্গি সব কিছুই আমার কাছে সাঙ্ঘাতিক লেগেছে। আমি খুবই অনুপ্রাণিত ওনার অভিনয়ে। বহুবচন দলের চলার পথ যেমন ছিল তৌফিকুর রহমান : দেশ স্বাধীনের পর মতিঝিল নিপুণা পেট্রোলপাম্পে দিনের পর দিন আড্ডা শেষে সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম নাটক করব। সেলিম, মোতাহার, আরমান, নওশাদ, ঝিনু, মাজহার, বিপ্লব, দুলাল, দুলুসহ বেশ কয়েকজন মিলে কণ্ঠে তুলে নিলাম নাটকীয় সেøাগান, ‘আমাদের নাটক মানে শুধু নাটকীয়তা নয়, নাটকের চিরচারিত আঙ্গিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ’। দলের নাম হলো বহুবচন। ‘প্রজাপতির লীলালাস্য’ নাটক দিয়ে যে আমাদের দলীয় যাত্রা শুরু, সে দলীয় যাত্রায় ৪৮ বছরে বেশ কিছু নাটকের প্রযোজনায় রয়েছে অজস্র মঞ্চায়ন। শেষাবধি বহুবচন কখনো মঞ্চ ছাড়েনি, ছাড়বেও না। -গৌতম পাণ্ডে
×