ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হংকংয়ে বিক্ষোভে গুলি

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ১২ নভেম্বর ২০১৯

হংকংয়ে বিক্ষোভে গুলি

হংকংয়ে ছাত্র বিক্ষোভে আবারও সরাসরি গুলি চালিয়েছে পুলিশ। সোমবার সকালে বিক্ষোভের সময় একজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা যায় পুলিশকে। ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা বন্দুক তাক করে আছেন। সামনে একজন মুখোশ পরা বিক্ষোভকারী। পুলিশ তার দিকে গুলি ছুড়ে। ওই ছাত্র লুটিয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আরও দুই রাউন্ড গুলি চালায়। তবে সেগুলো কাউকে আঘাত করেছে কিনা তা ফুটেজে পরিষ্কার নয়। বিবিসি। ফুটেজে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ বিক্ষোভকারী মাটিতে পড়ে আছে, চোখ খোলা ছিল, তার চারপাশে রক্ত ছিল। জুনে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এটি তৃতীয়বারের মতো ঘটনা, যেখানে পুলিশ সরাসরি বিক্ষোভে গুলি চালাল। প্রথম ঘটনাটি ১ অক্টোবর, দ্বিতীয় ঘটনাটি ৪ অক্টোবর, যখন পুলিশ এক কিশোর বালকের পায়ে গুলি চালায়। সোমবার সকালে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে যখন বিক্ষুব্ধরা সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। সড়ক অবরোধ করার ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ট্রেন ও মেট্রো রেল চলাচলও ব্যাহত হয়। পুলিশ তাদের বিরত থাকার আহ্বান জানায় এবং সতর্ক করে দেয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাতে পাত্তা না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায়। সর্বশেষ শহরজুড়ে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। পরিবহন বিশৃঙ্খলার কারণে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ক্লাস বাতিল করেছে। হংকংয়ে সর্বশেষ বিক্ষোভের ঘটনাটি ঘটে যখন বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের ধাওয়ায় একটি পার্কিং লটের তৃতীয়তলা থেকে পড়ে যাওয়া এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। চীনের মূলভূখ-ে বন্দী প্রত্যর্পণ নিয়ে একটি প্রস্তাবিত বিল বাতিলের দাবিতে গত জুন মাসে হংকংয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। টানা আন্দোলনের মুখে ওই বিল প্রথমে স্থগিত এবং পরে বাতিল ঘোষণা করা হলেও আন্দোলন থামেনি। বরং গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীরা এখন হংকংয়ের চীনপন্থী সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে। বৃহত্তর গণতান্ত্রিক মুক্তি এবং রাজনৈতিক জবাবদিহিতাও চাইছে তারা। সোমবার পুলিশের গুলিতে অন্তত দুই বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়। সকালে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকালে এ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এক সময়কার ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকং এখন চীনের অংশ। ‘এক দেশ, দুই নীতি’র অধীনে কিছু মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে হংকং। অঞ্চলটির নিজস্ব বিচার ও আইন ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূল চীনের চেয়ে ভিন্ন। গত ৯ জুন থেকে সেখানে কথিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের আশঙ্কা, ওই বিল অনুমোদন করা হলে ভিন্নমতাবলম্বীদের চীনের কাছে প্রত্যর্পণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। লাখো মানুষের উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে এক পর্যায়ে ওই বিলকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা দেন হংকংয়ের চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যাম। তবে এতে আশ্বস্ত হতে না পেরে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে সেখানকার নাগরিকরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হংকংয়ের স্বাধীনতার দাবি। সর্বশেষ গত ৮ নবেম্বর বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে আহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থীদের চীনবিরোধী বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে উঠে। এর মধ্যেই সোমবারের বিক্ষোভে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। হংকং-এ সাম্প্রতিক বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটল। ফেসবুক লাইভের ভিডিওতে দেখা যায়, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধকারীদের মধ্যে এক ব্যক্তিকে জাপটে ধরে তার ওপর গুলি চালায় একজন পুলিশ সদস্য। এ সময় আরেক মুখোশধারী বিক্ষোভকারী এগিয়ে আসলে তার পেটে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। দুই বিক্ষোভকারীকে গুলিবর্ষণের পর আরও দুই রাউন্ড তাজা গুলি ছোড়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা। পরে মাটিতে লুটিয়ে পড়া দুই বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। এরমধ্যে প্রথমজন ব্যাপক রক্তাক্ত হলেও দ্বিতীয়জনের তখনও জ্ঞান ছিল। পরে ঘটনাস্থলে জমায়েত হয় আরও বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী। ৮ নবেম্বর পুলিশের গুলিতে আহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থীদের চীনবিরোধী বিক্ষোভ আরও তীব্র রূপ নেয়।
×