ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণদের এই ফোরাম হবে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সহযোগী সংগঠন

অসংক্রামক রোগ ঠেকাতে ‘ইয়ুথ ফর হেলদি বাংলাদেশ’ গঠন

প্রকাশিত: ১১:৫০, ১০ নভেম্বর ২০১৯

অসংক্রামক রোগ ঠেকাতে ‘ইয়ুথ ফর হেলদি বাংলাদেশ’ গঠন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বজুড়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগ মহামারী আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশে গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যু হ্রাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হলেও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে অসুস্থ মানুষদের ৬১ শতাংশই অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। দেশের ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ৯৭ শতাংশের কমপক্ষে একটি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি আছে। এসব রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। তাই অনেক সময় অসংক্রামক রোগে অনেক আক্রান্তকে চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়। গত ছয় বছরে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। ’১৭ সালে সকল রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু সংখ্যার শতকরা ৬৭ ভাগের জন্য দায়ী ছিল অসংক্রামক রোগ। গত ’১১ সালে এই হার ছিল ৫২ শতাংশ। শনিবার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘এনএইচএফ ইয়ুথ ফর হেলদি বাংলাদেশ’ নামে তরুণদের নিয়ে ফোরাম গঠন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব) আব্দুল মালিকের সভাপতিত্বে ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক অতিরিক্ত সচিব মোকাম্মেল হোসেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য ও বিশ্বস্বাস্থ্য) রীনা পারভীন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডাঃ রায়হান-ই-জান্নাত প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সব ধরনের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করতে একটি ইয়ুথ ফোরাম গঠন করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ। এই ফোরাম অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করবে। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, দেশে এখন সংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে এলেও বেড়েছে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আগামী ’২৫ সালের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমাতে হবে। অসংক্রামক রোগের ব্যাপকতা ও গুরুত্বের ওপর নীতিনির্ধারক এবং পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা দরকার। রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন সেক্টরকে কেন্দ্র করে একটি সমন্বিত পদ্ধতির প্রবর্তন করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় জনশক্তি ও কাঠামোগত উন্নয়ন, ঝুঁকির কারণগুলো সংশোধন ও নিয়ন্ত্রণ, রোগ শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সেবা দেয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সব পর্যায় শক্তিশালী করতে হবে। বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অবস্থা তুলে ধরে আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে প্রায় ২ কোটি লোক কোন না কোন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। আক্রান্তের শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে এ মরণব্যাধির অস্তিত্ব ধরতে পারেন না। কিডনি বিকল রোগীর চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, মাত্র শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ লোকের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। দেশে প্রতি বছর ২৫ হাজার লোকের কিডনি বিভিন্ন কারণে হঠাৎ করে অকেজো হয়ে যায়। প্রতি বছর কিডনিজনিত রোগে প্রায় ৪০ হাজার লোক মারা গেছে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন মহামারী হয়ে উঠছে। বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৪১ কোটি। দেশে প্রায় ৭১ লাখ, বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ রোগী। শুধু ডায়াবেটিসের কারণে বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হয়। বিশ্বের সর্বত্র বয়সী বয়োবৃদ্ধরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ও ওই সব রোগের আক্রমণের পথ প্রশস্ত করে ডায়াবেটিস। কেবল ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে পারলে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতেই বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় কমানো সম্ভব বলে মনে করছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বিশ্বে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা আগামী ’৪০ সালের মধ্যে ৬৪ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এভাবে ক্যান্সার, লিভার ও ফুসফুস সমস্যাসহ নানা জটিল ধরনের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে অসহায় হয়ে পড়ে অনেক গরিব রোগী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক অতিরিক্ত সচিব মোকাম্মেল হোসেন তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দিতে হবে তরুণদেরই। তাই তাদের এখন থেকেই দায়িত্ববান হতে হবে। যে কোন কাজ ‘আমরা করব’ বলে বসে থাকলে চলবে না; বরং ‘আমি করব’ বলে তরুণদের দায়িত্ব নিতে হবে। অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য ও বিশ্বস্বাস্থ্য) রীনা পারভীন তরুণদের ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি নিজেদের সুস্বাস্থ্যের প্রতিও নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আজকের তরুণেরা কর্মজীবনে সফল হলেও ৩৫-৪০ বছর বয়সে গিয়ে যদি হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ যে কোন অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে তার সেই সাফল্য পরিপূর্ণতা লাভ করবে না। সেজন্য তরুণদের প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্টফুড ছেড়ে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, সিগারেট ও ই-সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্য ও মাদক গ্রহণ থেকে দূরে থাকতে হবে, শারীরিক চর্চা করতে হবে।
×