ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইকোনমিস্ট ফোরামের সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী

ব্যাংকিং খাতে নীতিগত সংস্কার করছে সরকার

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১০ নভেম্বর ২০১৯

ব্যাংকিং খাতে নীতিগত সংস্কার করছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন ব্যাংকিং খাত। এই খাতে সংস্কারে জোরেশোরে কাজ করছে সরকার। তবে হঠাৎ সংস্কারের ফলে চলমান উন্নয়ন থেমে যেতে পারে। সংস্কারে সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি ঝুঁকিও কাজ করে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি আরও বলেন, সরকার ব্যাংকিং খাতের সংস্কার করতে চাইলেও উন্নয়নের ধারা ঠিক রাখতে কোন কোন ক্ষেত্রে আপোস করতে হয়। তবে সংস্কারের কাজ চলছে, সরকারের চিন্তায় এটি আছে বলেও জানান মন্ত্রী। শনিবার রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশ ইকোনমিস্ট ফোরাম আয়োজিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে প্রয়োজনীয় নীতি ও কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর একটি হোটেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা মোহা. আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এবং সানেম নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন ব্যাংকিং খাত। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে সংস্কারের প্রয়োজন আছে এটা আমরা স্বীকার করি। তবে চলমান উন্নয়ন থেমে যাওয়ার ভয় রয়েছে। তবে উন্নয়নের স্বার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারকেও কম্প্রোমাইজ করতে হয়। বর্তমান উন্নয়ন ধরে রেখে সরকার নীতিগত সংস্কারের কাজ করছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি রফতানিতে বাজার বহুমুখীকরণের বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান মন্ত্রী। এম এ মান্নান বলেন, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বিশেষ করে দেশের আর্থিক খাতগুলোর সংস্কারের প্রয়োজন আছে এটা আমরা স্বীকার করি। তবে চলমান উন্নয়ন থেমে যাওয়ার ভয় রয়েছে। বর্তমান উন্নয়ন ধরে রেখে সরকার নীতিগত সংস্কারের কাজ করছে। তিনি বলেন, বহুমুখীর প্রয়োজন আছে। এছাড়াও বড় দেশ থেকে সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে সম্ভাবনা আরও বাড়বে। আঞ্চলিক সম্ভাবনা কাজে লাগানো নিয়েও কাজ করছে সরকার। মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা রাজনৈতিক অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাব সেই সঙ্গে আঞ্চলিক সম্ভাবনা কাজে লাগাব। উচ্চপর্যায়ে এটিও চিন্তার মধ্যে আছে। আমাদের সরকার যতদিন আছে আঞ্চলিক সম্ভাবনার বিষয়ে কাজ হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের জন্য যেটি ভাল অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যেটি ভাল সেটিই আমরা করব। গত কয়েক বছরে যে কৌশলে আমরা এগিয়েছি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছি, আগামীতেও দেশের জন্য মঙ্গলকর হয় সেটি করা হবে। বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বলেন, আমাদের প্রকল্পগুলো সংখ্যার বিচারে আনা ঠিক হবে না। নানা প্রকল্প নেয়ার পরেও মানুষের আরও দাবি আছে। মানুষ আরও সড়ক চায়, বিদ্যুত চায়, বিভিন্ন স্থানে বিশ^বিদ্যালয়সহ নানা দাবি। আমাদের জনগণের দাবিও মেটাতে হয়। আমরা এখন শতভাগ বিদ্যুাতায়নে এগিয়ে যাচ্ছি। গ্রহণকরা প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়েই শেষ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী মন্ত্রী। প্রকল্প গ্রহণে কারও পরামর্শ থাকলে সেটিও দিতে বলেন এম এ মান্নান। তিনি বলেন, কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবে না সরকার। যে কারও পরামর্শ গ্রহণে সরকারের দরজা খোলা। মন্ত্রী বলেন, আগামীদিনে আমাদের কাজের আরও গতি আসবে। আমরা মন্ত্রণালয়কে টাকা না দিয়ে সরাসরি প্রকল্প পরিচালকদের দিয়ে দিচ্ছি। এতে অর্থ ছাড়ে সময় কম লাগছে। বরাদ্দ এখন শুরুতেই পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে ভাল ফল আসবে আশা করেন মন্ত্রী। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, কয়েক বছর ধরে বেসরকারী বিনিয়োগ ২৩ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে ৩৬ থেকে ৩৯ শতাংশ বেসরকারী বিনিয়োগের প্রয়োজন। ব্যাংকের সুদহার, খেলাপী ঋণ, মূলধন ঘাটতি বেসরকারী বিনিয়োগের অন্যতম বাধা বলে উল্লেখ করেন তিনি। আইএনএম নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে আর্থিক খাত। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ঝুঁকির মুখে অর্থনীতি। এই সমস্যার সমাধানে শক্তিশালী শেয়ারবাজার বন্ড মার্কেট এবং সরকারী পর্যায় থেকে নীতিগত সংস্কারের কোন বিকল্প নেই। পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা সবাই জানি আর্থিক উন্নয়নের জন্য রফতানি বৃদ্ধি খুবই জরুরী। তবে পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পণ্য বহুমুখীকরণের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
×