ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জরুরী সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী

জাবির আন্দোলনে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১০ নভেম্বর ২০১৯

জাবির আন্দোলনে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কে কার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নাটক সাজিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করছে তার খবর আমাদের কাছে আছে। যে প্রকল্পে অর্থছাড় হয়নি সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যারা ক্যাম্পাসে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জরুরী সংবাদ সম্মেলনে উপমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে, কিন্তু অরাজকতা সৃষ্টির অধিকার কারও নেই। তবে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে প্রমাণীত হলে তার বিরুদ্ধেও সরকার ব্যবস্থা নেবে। উপমন্ত্রী বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার রাতে শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে এ অভিযোগ দেয়া হয়। তবে তা এখনও দফতরে আসেনি। বর্তমান দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা কেটে গেলে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগ সত্য হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রকল্পে অর্থছাড় হয়নি সেখানে সন্দেহের ভিত্তিতে অরাজকতা করা হয়েছে। সে জন্য কোথা থেকে অর্থ এলো তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষক নিজেদের নৈতিক অবস্থান থেকে সরে গেছেন, আমরা কাউকে সরাইনি বা সরে যেতে বলিনি। কে কার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নাটক সাজিয়েছে তার খবর আমাদের কাছে আছে। উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করবে এবং মিথ্যা অভিযোগ দেবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখন আমাদের প্রযুক্তি অনেক এগিয়েছে। কে কোথায়-কার কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা নেয়ার পাঁয়তারা করেছে সেগুলো আমরা জানতে পারি। কিন্তু অনেক সময় জাতীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করে, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ছাড় দেয়া হয়েছে। দ-বিধির ২১১ ধারায় বলা আছে, মিথ্যা অভিযোগ করলে দ- পেতে হবে। উপমন্ত্রী বলেন, আমরা অভিযোগকারীদের কাছে তথ্য-উপাত্ত চাওয়ার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক ঘণ্টার পথে অভিযোগ নিয়ে আসতে তাদের চারদিন কেন লেগেছে? স্বাভাবিক কারণেই মনে হয়েছে এ দেরিটা দুরভিসন্ধিমূলক। অভিযোগ থাকবে, সেটা জমা হলে তদন্ত হবে। ন্যায়বিচারের জন্য উভয় পক্ষের শুনানির প্রয়োজন আছে। কিন্তু তার আগেই গান-বাজনা-কনসার্ট ঘোষণা দেয়া, গভীর রাতে তালাভাঙ্গা, তালা লাগানো। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পরও ক্যাম্পাস ত্যাগ না করে কি উদ্দেশে সারারাত অবস্থান করা হচ্ছে? সেটা জানতে চাই। তদন্ত করার জন্য অভিযোগ জমা দেয়ার আগে কনসার্টের অর্থ কোথা থেকে এলো সেটাও তদন্তে রাখব। তিনি আরও বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্য বাস্তবায়ন হয় না। আমরা দেখেছি সব স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার দাবি যখন উপাচার্য পদত্যাগ করে তখন বন্ধ হয়ে যায়। সেই অভিযোগগুলো আর মাঠে থাকে না। এ প্রবণতা থেকে ধারণা করতে পারি যে, উদ্দেশ্য কি আসলেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য কিনা। উপমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, দুঃখের বিষয় জনগণের অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে শিক্ষাবর্ষ নষ্ট ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনকে শঙ্কায় ফেলে অপচেষ্টা হচ্ছে। অনেকেদূর থেকে এ আন্দোলনকে ইন্ধন দিচ্ছে জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল যারা মাঠের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান জনগণের মধ্যে আস্থা আনতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেছে নিয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। আমরাও সহযোগিতা করেছি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল আছে। তথাপি দেখা যাচ্ছে একটি পক্ষ সেখানে কনসার্ট আয়োজনের নামে, প্রতিদিন তালাভাঙ্গা, তালা দেয়ার মতো অরাজকতা করছে। ব্যারিস্টার নওফেল এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ আন্দোলনকারীরা কিছুদিন আগে বলছিলেন আচার্যের যে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন সে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তথ্য-উপাত্ত পেশ করবেন। পরে দেখা গেলো সেগুলো উপস্থাপন না করে পরিস্থিতি জটিল করতে গভীর রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে একটি অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করলেন। উপাচার্য একজন নারী তার পরিবারের সবাইকে অবরুদ্ধ করা হয়। যারা এ দাবি নিয়ে মাঠে আছেন তাদের আবারও বলছি যে আপনারা যদি মনে করেন দাবির ভিত্তি আছে তাহলে সেটা নিয়ে না এসে শুধু ভিসির পদত্যাগকে মুখ্য কেন করছেন। ভিসির পদত্যাগের মাধ্যমেই কি সব জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে? জানা গেছে, শুক্রবার রাতে রাজধানীর বনশ্রীতে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির একান্ত সচিব ড. আব্দুল আলীম খানের বাসা ‘ক্লান্ত নিবাস’ এ গিয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন জাবির চার শিক্ষক। শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন- বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউল করিম তালুকদার, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মোঃ ফজলুল করিম পাটোয়ারি, কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু সাইদ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ। অভিযোগ দেয়ার পর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউল করিম তালুকদার বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দুর্নীতিবাজ ও মামলাবাজ উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হচ্ছে এর মাধ্যমে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। আন্দোলন কবে শেষ হবে জানতে চাইলে রেজাউল করিম তালুকদার বলেন, এটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। আমাদের যিনি আহ্বায়ক তিনি এখানে আসেননি। আমরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এই আন্দোলনের বড় অংশ হলো শিক্ষার্থী। আমরা শতভাগ আশাবাদী। আমরা প্রত্যাশাই করি না মন্ত্রণালয় আমাদের পক্ষ অবলম্বন করবে। যেগুলো সত্য ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর বিষয়ে পক্ষ অবলম্বন করলেই আমাদের জয় হবে।
×