ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী চার কন্যাকে নিয়ে বিপাকে এক দিনমজুর

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১০ নভেম্বর ২০১৯

প্রতিবন্ধী চার কন্যাকে নিয়ে বিপাকে এক দিনমজুর

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই চৌরঙ্গীপাড়া গ্রামে প্রতিবন্ধী চার কন্যাকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এক দিনমজুর পরিবার। জন্মের এক বছর পর থেকে কন্যাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। পাঁচ কন্যা সন্তানের চারজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। চারজনেরই হাত ও পা অচল। অপরের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা, ওঠাবসা ও খেতে পারছে না। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও সাহায্য নিতে হচ্ছে। এ রকম সন্তানদের নিয়ে গত টানা ৩৫ বছর ধরে চলছে দিনমজুর বাবা মায়ের বেঁচে থাকার এই সংগ্রাম। অথচ পরিবারটির স্থায়ী সহায়তায় এখন পর্যন্ত কোন সাড়া মেলেনি। সবার জন্য জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পর্যন্ত। ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের লাল মাটির পাহাড়ী জনপদের উপজেলা ফুলবাড়িয়া। আর ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরের গ্রাম রাধাকানাই চৌরঙ্গীপাড়া। বাঁশঝাড়ের ভেতর মাত্র আট শতক জমির পৈত্রিক ভিটাতে বাস দিনমুজর ইব্রাহীম খলিলের। এক খ্রীস্টান মিশনারির সহায়তায় মেলায় ছোট্ট টিনের ছাপড়া ঘরটিই একমাত্র সম্বল এই ইব্রাহীমের। একই ইউনিয়নের পাশের ধারদাস্তা গ্রামের শামছুন নাহারকে বিয়ে করেন ইব্রাহীম গত চল্লিশ বছর আগে। দিনমজুর এই দম্পত্তির ঘরে এ সময় জন্ম নেয় মিনা পারভীন (৩৫), ফরিদা ইয়াসমিন (২৫), বিউটি আক্তার (২০), তাপসী (১৫) ও শাবনুর (১১)। এদের মধ্যে ফরিদা ছাড়া অপর চারজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফরিদা বিয়ে করে সংসার পাতলেও বাকিদের দিন কাটছে বাবা মায়ের অনটনের সংসারে। ইব্রাহীম জানান, জন্মের সময় সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু হাঁটার সময় ১২-১৪ মাস বয়সে দেখা গেল পারভীন কোনভাবেই হাঁটতে পারছে না। এমনকি দাঁড়াতেও পারছে না। এরপর সংসারে আসে ফরিদা, বিউটি, তাপসী ও শাবনুর। ফরিদার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা দেখা না গেলেও পারভীন, বিউটি, তাপসী ও শাবনুরের দেখা দেয় শারীরিক সমস্যা। প্রথমে হাঁটতে ও দাঁড়াতে না পারার সমস্যা, পরে হাত ও পায়ের মাংসপেশী শুকিয়ে দিন দিন বেঁকে অচল হয়ে পড়া। এ সময় স্থানীয় কবিরাজের ঝাড়ফোঁক, পানি পড়া ও তেল মালিশের পাশাপাশি সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন ইব্রাহীম। এলাকার স্বাস্থ্য কর্মী শেখ চানের কাছে গিয়ে পোলিও খাইয়েছিলেন। কিন্তু কোন কাজে লাগেনি। এক পর্যায়ে চিকিৎসার হাল ছেড়ে দিয়ে জীবন ও জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকায় চলে যান ইব্রাহীম মেয়েদের নিয়ে। কিন্তু নানা শঙ্কায় কারণে ঢাকা ছেড়ে ফের চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। এর পর থেকে খ্রীস্টান মিশনারির করে দেয়া টিনের ছাপড়া ঘরে থাকছেন ইব্রাহীম। এখানেও শঙ্কার শেষ নেই। আর তাই পালা করে ইব্রাহীম আর শামছুন নাহার কাজে যান। একজন থাকেন মেয়েদের কাছে। দুর্ঘটনার ভয়ে দিনে বসতঘরের বারান্দায় থাকলেও রাত কাটান ঘরের ভেতর। রাত নামলে কখন ভোর হবে, আর ভোর হলে কখন রাত নামবে প্রহর গুনেন প্রতিবন্ধী চার কন্যা। বয়স হয়েছে এখন আর আগের মতো কাজও পান না ইব্রাহীম। কিন্তু দু বেলার খাবার যোগাড় তো করতেই হবে। এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই ইব্রাহীম ও শামছুন নাহারের। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহীমের দুই কন্যা বিউটি ও তাপসীর নামে দুটি প্রতিবন্ধীর কার্ড সহায়তা দিয়েছেন। পরের বাড়িতে কাজ আর এই দুটি কার্ডই এখন পরিবারটির ভরসা।
×