ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত গতিতে উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে জমি ॥ হুমকিতে পরিবেশ

ধীর গতির শামুক নিধন ও পাচার হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১০ নভেম্বর ২০১৯

ধীর গতির শামুক নিধন ও পাচার হচ্ছে

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ ধীর গতির জলজ প্রাণী শামুক নিধন হচ্ছে দ্রুত গতিতে। হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশ। ছোট্ট এই প্রাণী রক্ষায় সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ নেই। পরিবেশবিদগণ নীরব। ইতোমধ্যে সোনালি শামুকসহ কয়েক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ২০১২ সালের এক প্রজ্ঞাপনে শামুককে বন্য প্রাণীর স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইনে শামুক নিধন নিষিদ্ধ। তারপরও নিধন রোধ হয়নি। অবাধে বিক্রির পাশাপাশি শামুক পাচার হচ্ছে। পানি দূষণ রোধ, পরিশোধন, জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি, পরিবেশের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ ও জীব বৈচিত্র্য ধরে রাখে জলজ প্রাণী শামুক। জলাভূমিতে জন্মে প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে ওঠে। বৃষ্টির দিনে গ্রামের পথঘাটে বাড়ির উঠানে উঠে আসে খুবই ধীর গতিতে চলা শামুক। যার আরেক নাম শম্বুক। সমাজ জীবনে, অফিসে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধীর গতিতে চলা কোন কিছুকে শামুকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। বাগধারায় স্থান পেয়েছে। জলাশয়, খাল বিল ও চলনবিলের শামুক নিধন ও পাচার দুই-ই হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মুনিরুল এইচ খান জানিয়েছেন, প্রতিটি প্রাণী একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। শামুক নিধন হলে এর ওপর নির্ভরশীলতার অনেক প্রাণী খাদ্য সঙ্কটে পড়ে বিলুপ্তির খাতায় নাম লিখাবে। জমিতে থাকা শামুকের খোলস মাটিতে মিশে উর্বরা শক্তি বাড়িয়ে দেয়। জমির কীটপতঙ্গ (পোকামাকড়) খেয়ে ফসল রক্ষা করে শামুক। বেড়ে যায় উৎপাদন। শামুক নিধনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ছে। বর্ষা থেকে হেমন্তের শেষ পর্যন্ত জলাভূমি ও আবাদি জমি কম বেশি ডুবে থাকে। সেখানেই প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় শামুক। অতীতে শামুক নিধন হতো না। প্রয়োজনও হতো না। গ্রামের মানুষ জানত শামুক মরে মাংস ও খোলস পঁচে জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই ফসফেট পটাশ ও ক্যালসিয়াম তৈরি করে। জৈব পদার্থ (বা প্রাকৃতিক রসায়ন) ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। ধান গাছের শিকড় মজবুত করে। বর্ষা মৌসুমে উপকার করে আমন আবাদের। একইসঙ্গে জলাশয়ের দূষিত পানি পরিশোধন করে দূষণমুক্ত রাখে। দেশীয় মাছের অন্যতম খাদ্য শামুকের নরম ডিম। কৈ, শিঙ, মাগুর, ট্যাংরা, টাকি, শোল, পাবদাসহ অন্য মাছের খাবারের বড় একটি অংশ আসে শামুকের ডিম থেকে। তা না পেলে মাছের পোনা মারা যায়। শামুক নিধন হচ্ছে দেশের প্রতিটি জলাশয়ে। চলনবিল এলাকায় শামুক নিধন চোখে পড়ে। সেখানে প্রকাশ্যে কুড়িয়ে বস্তায় ভরে রাখা হয়। বিল পাড়ে নৌকা করেও শামুক সংগ্রহ হয়। প্রতি কেজি শামুক বিক্রি হয় এক শ’ থেকে ১৫০ টাকায়। ঢাকা চট্টগ্রাম খুলনা বরিশালের মহাজনরা শামুক সংগ্রহ করে। শামুক ব্যসায়ী রোস্তম আলী জানালেন, চলনবিল এলাকা থেকে প্রতিমাসে ৬শ’ মেট্রিক টনেরও বেশি শামুক সংগ্রহ করা হয়। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, মেঘনা পাড়ে এবং ছোট নদীগুলো থেকেও শামুক আহরোণ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা শামুক সংগ্রহের পর প্রসেস করে চোরাই পথে পাচারও করছে। বিলপাড়ের লোকজন জানান, মহাজানের পাঠানো ট্রাকে করে প্রতিনিয়ত শামুক বেচা-কেনা দেখেন। চোরাই পথে শামুক পাচার হচ্ছে। কখনও পাচারকারীরা কচ্ছপের মধ্যে শামুক রেখে পাচার করে। শামুক নিধন রোধে আইন আছে, প্রয়োগে ভাটাও আছে। আইনে বন্য প্রাণী শিকার, বধ, সংগ্রহ, নিধন ও ধ্বংস ও বেচা-কেনা করা যাবে না। আইন অমান্যকারীদের শাস্তি ও জরিমানার বিধান আছে। জলজ প্রাণীর মধ্যে অন্যতম ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, কচ্ছপ ইত্যাদি।
×