ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা লিট ফেস্ট আলোচনাকালে শশী থারুর

বঙ্গবন্ধু সবসময় বাংলাকে ভালবেসেছেন

প্রকাশিত: ১০:১১, ৯ নভেম্বর ২০১৯

 বঙ্গবন্ধু সবসময়  বাংলাকে  ভালবেসেছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘শেখ মুজিব : আইকন অব পোস্ট-কলোনিয়াল লিবারেশন’ শীর্ষক বিশেষ এক আলোচনা হয় ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। এতে অংশ নেন গবেষক ও সাংবাদিক আফসান চৌধুরী, ভারতীয় কংগ্রেস নেতা শশী থারুর ও ড. কামাল চৌধুরী। আফসান চৌধুরী বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি আমাদের জন্য অবশ্যই বিরাট ক্ষতি। দেশের অবকাঠামো ও সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়া একটি নব্য স্বাধীন দেশের জন্য যা ছিল বড় সমস্যা। আর সেই ভেঙ্গে পড়া জায়গা থেকে একটি দেশকে টেনে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিলেন বলেই সমাজের ওই সমস্যাগুলো ভাল বুঝতেন। একইসঙ্গে কোন বিষয়কে কিভাবে উপস্থাপন করতে হবে, সেটি তিনি খুব ভাল জানতেন, যা অন্য অনেক নেতা সেভাবে বুঝতেন না। এই জায়গা থেকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের একটি বড় সাপোর্ট পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ভারতের কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, বঙ্গবন্ধু কখনও কারও সঙ্গে আপোস করেননি। বাংলাকে সবসময় ভালবেসেছেন। একইসঙ্গে নেতা হিসেবে তিনি সবাইকে উৎসাহিত করতে পারতেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সে সময় উর্দুর জন্য যখন সবদিকে একটি আয়োজনের মতো ব্যাপার, তখন একটি মিটিংয়ে অংশ নেন বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী। সেই সময় ইন্দিরা গান্ধী ইংরেজীতে বক্তব্য দিলেও বঙ্গবন্ধু উঠেই বললেন, অন্য ভাষা নয়, শুধু বাংলা, বাংলা আর বাংলা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনীতির কবি। তাকে এই উপাধী বাঙালীরা দেয়নি, দিয়েছে বিশ্ব। এই বিশ্ব নেতার শতজন্মবার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবেই পালন করা হবে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক সামসাদ মর্তুজা। এক হলেন চার দেশের চার সাহিত্যিক ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘ইনইকুয়ালিটি : অল দ্য রেজ’ শীর্ষক একটি অধিবেশন হয়। ভারতীয় সাংবাদিক প্রিয়াঙ্কা দুত্তের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন ব্রাজিলের লেখক মারিয়া ফিলোমেনা, সিঙ্গাপুরের সাংবাদিক ও লেখক জেমস ক্যাবট্রি, ব্রিটিশ লেখক কেনান মালিক ও নেদারল্যান্ডসের লেখক আর্নেস ভেনদার কোয়েস্ট। ব্রাজিলের লেখক মারিয়া ফিলোমেনা বলেন, নব্বই দশকের শুরুতে ব্রাজিলে অসমতা শুরু হয়। ঐতিহাসিক প্যারাগুয়ের যুদ্ধে সৈনিকের বেশে দাসদের ব্যবহার করা হয়েছিল। পরে ওই দাসরা দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। কারাগার থেকে বের হয়ে আসার পর তাদের জন্য কোন সমাজ ছিল না। যে রাজনীতির কারণে তাদের কারাগারে যেতে হয়েছিল, সেই রাজনীতিকরা তাদের গ্রহণ করেননি। মারিয়া ফিলোমেনা বলেন, আমার মতে, ব্রাজিল এ সময়ে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। একটি বড় দুর্নীতির ঘটনায় ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি এখনো কারাগারে। তার সঙ্গে আরও চার গবর্নর অভিযুক্ত। সিঙ্গাপুরের সাংবাদিক ও লেখক জেমস ক্যাবট্রি বলেন, বছর কয়েক আগে আমি ‘দ্য বিলিয়নিয়ার রাজ’ বইয়ের জন্য মুকেশ আম্বানির সাক্ষাতকার নেই। মুম্বাই বিমানবন্দরে নামার পর আমার গাড়িচালক আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়ির কাছে গিয়ে গাড়িচালক উ”চ্ছ্বসিত হয়ে বলল, এটিই সেই বাড়ি। কোটিপতি বিত্তবানের বাড়ির মূল্য দুই হাজার কোটি টাকা! বাড়ি বললেও ভুল হবে, সেটা একটি কলোনি। পাশ্চাত্যে কখনও বিত্তশালীদের এরকম বাড়ি দেখা যায় না। ব্রিটিশ লেখক কেনান মালিক বলেন, অসমতা কোন সমাজই মেনে নিতে পারে না। সমাজে অসমতা বেড়ে গেলে, তা আর সমাজের মতো আচরণ করে না। নেদারল্যান্ডসের লেখক আর্নেস ভেনদার কোয়েস্ট বলেন, যে সমাজ অসমতা দূরীকরার আলো জ্বালায়, সেটি ভাল সমাজ। সব সমাজের এরকম গুণ থাকে না। লেখায় ভাটা পড়ার জন্য লেখকই দায়ী ॥ নাদিম জামান শুক্রবার বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক নাদিম জামানের প্রথম উপন্যাস ‘ইন দ্য টাইম অব দ্য আদার্স’ নিয়ে একটি অধিবেশন হয়। আলাপের শুরুতেই জানানো হয় উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। অধিবেশনে এর মূল চরিত্র ইমতিয়াজের ’৭১ সালের মার্চে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা হয়। অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন রিফাত মুনিম। অধিবেশনে নাদিম জামান বলেন, প্রতিটি সত্য ঘটনায় প্রচুর চরিত্র থাকে, যার কোনটি প্রত্যক্ষ, কোনটি পরোক্ষ। প্রতিটি চরিত্রের থাকে আলাদা গল্প। এসব গল্প সুন্দর করে সাজাতে পারলে একটি উপন্যাস তৈরি হয়। ‘ইন দ্য টাইম অব দ্য আদার্স’ উপন্যাসে সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় কিছু চরিত্র সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরাসরি স্বাধীনতা যুদ্ধের বাইরের মানুষ এ যুদ্ধকে কীভাবে দেখেছেন, সেটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি, সে সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন কেমন ছিল- সেসব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রাথমিক আলাপ শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে নাদিম জামানের কাছে প্রশ্ন করা হয় উপন্যাসের শিরোনাম ‘ইন দ্য টাইম অব দ্য আদার্স’ কেন উত্তরে তিনি বলেন, যেহেতু উপন্যাসে বর্ণিত ‘আদার্স’ বা অন্যরাই এখানে মুখ্য। যুদ্ধ চলাকালে তাদের গল্প, তাদের সময়টাই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। সেজন্যই উপন্যাসের এ নাম রাখা হয়েছে। নতুন লেখকদের প্রতি তার কোন পরামর্শ আছে কি-না জানতে চাইলে নাদিম জামান বলেন, পড়, পড় এবং পড়। এরপর লিখ। লেখার জন্য কোন অজুহাত দেয়া যাবে না। লেখায় ভাটা পড়ার জন্য শুধু লেখকই দায়ী।
×