ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ন্যাটো এখন অকেজো

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ৯ নভেম্বর ২০১৯

ন্যাটো এখন অকেজো

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক সহযোগিতা জোট ন্যাটোকে একটি অকেজো সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি মনে করেন, ন্যাটোর অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা দেশ যুক্তরাষ্ট্র জোটের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছে। প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাপ্তাহিক দ্যা ইকোনমিস্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ফরাসী প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন। ইকোনমিস্টের বৃহস্পতিবার সংখ্যায় ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আলোচিত সাক্ষাতকারটি প্রকাশিত হয়। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান ও এএফপির। ফরাসী প্রেসিডেন্ট বলেন, সিরিয়ায় ন্যাটোর সদস্য দেশ তুরস্ক আগ্রাসন চালাচ্ছে। এ বিষয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয়ের প্রবল ঘাটতি রয়েছে। সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য সরিয়ে নেয়ার আগে ট্রাম্প প্রশাসনের ন্যাটো জোটের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল বলে ফরাসী প্রেসিডেন্ট মনে করেন। এ বিষয়ে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, তাহলে ন্যাটো প্রতিরক্ষা বিষয়ে কিভাবে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেবে? জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল ন্যাটো বিষয়ে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর প্রশ্ন তোলার কড়া সমালোচনা করেছেন। মেরকেল বলেন, ফরাসী প্রেসিডেন্টের এই ধরনের মন্তব্যের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করি। কারণ, এই সামরিক জোট নিয়ে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ অত্যন্ত কঠোর ভাষায় কথা বলেছেন। জার্মান চ্যান্সেলর স্বীকার করেন, ন্যাটোতে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। তবে এই বিষয়ে এখন প্রশ্ন তোলা অবান্তর। অপরদিকে ন্যাটো প্রধান জেনস স্টোলেনবার্গও ম্যাক্রোঁর মন্তব্যের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। বর্তমানে বার্লিন সফররত স্টোলেনবার্গ বলেন, অতীতে ন্যাটো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালের সুয়েজ সঙ্কট ও ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের সময় এই জোট নেতৃত্বের সামনের সারিতে ছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, দীর্ঘ সোভিয়েত দখলদারিত্ব রুখে দিতে ন্যাটো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ওদিকে রুশ কর্তৃপক্ষ ফরাসী প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ, রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোকে হুমকি মনে করে মস্কো। শুক্রবার রাশিয়ার পক্ষে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, ন্যাটো বিষয়ে ফ্রান্স প্রকৃত সত্য তুলে ধরেছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভ বলেন, ন্যাটো নিয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্টের মূল্যায়ন শতভাগ সঠিক। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ন্যাটো জোট নিয়ে ম্যাক্রোঁ উপযুক্ত মন্তব্য করেছেন। প্রতিরক্ষা বিষয়ে ন্যাটো কি সঠিক ও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে? ইকোনমিস্টের এই প্রশ্নের জবাবে ফরাসী প্রেসিডেন্ট সাফ বলেন, আমি আসলে জানি না। ন্যাটোর বর্তমান কার্যক্রমকে আমার কাছে নিষ্ক্রিয় বলে মনে হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনও এই জোটের প্রধান সদস্য দেশ হিসেবে রয়েছে। তিনি বলেন, ন্যাটো তার ইউরোপীয় মিত্র, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের সঙ্গে সমন্বয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সাক্ষাতকারে ম্যাক্রোঁ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক খ্যাপাটে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কর্মকা- দেখে মনে হচ্ছে, দেশটি এসব বিষয়ে পীঠ বাঁচিয়ে চলছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ন্যাটো সদস্য দেশের সঙ্গে আলাপ না করেই সৈন্য প্রত্যাহার করেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট বা ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ২৯টি দেশ এই সংগঠনের সদস্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফ্রান্স এই সংগঠনের সদস্য হিসেবে রয়েছে। তবে ফ্রান্স ন্যাটোতে ঐতিহ্যগতভাবে রহস্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬৬-২০০৯ সাল পর্যন্ত ন্যাটোর সামরিক সিদ্ধান্ত থেকে ফ্রান্স বরাবর দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। আগামী ৪ ডিসেম্বের লন্ডনে ন্যাটো সম্মেলন শুরু হবে। এর আগে ফরাসী প্রেসিডেন্টের এই ধরনের বক্তব্য অনভিপ্রেত বলে মনে করছে ন্যাটো নেতৃত্ব।
×