ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভাপা, চিতই বিক্রি চলছে সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যা রাতে

উত্তরাঞ্চলে শীতের আগাম প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ৯ নভেম্বর ২০১৯

উত্তরাঞ্চলে শীতের আগাম প্রস্তুতি

নতুন টমেটো ও নতুন আলু ছাড়া বাজারে শীতের সকল প্রকার শাক সবজিতে ভরে উঠেছে। আর ম-ম গন্ধে ভরে উঠেছে পাকা আমন ধানের ক্ষেত। ইতোমধ্যে এই ধান ঘরে উঠতে শুরু করেছে। নতুন ধানের চালের পিঠা বিকিকিনি শুরু হয়েছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। সাধারণত এই পিঠার ক্রেতা সব শ্রেণীর রয়েছে। ভাপা, চিতই চলছে সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যা রাতে। এমন পিঠার বিকিকিনি বলে দিচ্ছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশার শুভ্র চাঁদর গায়ে দিয়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে এগিয়ে আসছে শীত। হেমন্তে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের আট জেলাজুড়ে মধ্য কার্তিক পেরিয়ে শীতের আমেজ। সাধারণত হিমালয় পর্বত সংলগ্ন এ অঞ্চলে শীতের আগমন আগেভাগেই চলে আসে। দিনে রোদের উত্তাপ অনেক কমে গেছে। দিন ছোট হওয়ায় দুপুরের পর পরেই নেমে আসে যেন সন্ধ্যা। সন্ধ্যায় গরম কাপড় পরেই বের হতে হয় রাস্তায়। আর রাতে কম্বল কাঁথা না জড়িয়ে ঘুমানো যায় না। হাড় কাঁপানো শীত না এলেও শীতের আমেজটা কিন্তু প্রতিদিনই বাড়ছে একটু একটু করে। চারদিকে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে শীতকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি। কুয়াশাচ্ছন্ন হেমন্তের রূপ আছে জীবনানন্দের কবিতায়। হেমন্তরে ঝড়ে আমি ঝরিব যখন/পথের পাতার মতো তুমিও তখন/আমার বুকের পড়ে শুয়ে রবে? অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন্থন। প্রথম ফসল গেছে ঘরে/হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে/শুধু শিশিরের জল, এমন অজস্র পঙ্ক্তিতে তিনি এঁকেছেন হেমন্তের ছবি। চালতার পাতা থেকে ঝরে পড়ছে শিশির বিন্দু, স্তব্ধ রাতের অন্ধকারে গাছের শাখায় শিকার ধরতে ওত পেতে আছে পেঁচা, মাকড়সার জালে জমেছে মুক্তার মতো শিশির বিন্দু। ভোরে ও সন্ধ্যায় গাছগাছালি শোভিত গ্রামবাংলায় পড়ছে কুয়াশা। হাওয়ায় হিমেল ¯পর্শ ঘাসের ওপর শিশির বিন্দুর ঝিলিক জানান দিচ্ছে, শীত এসে গেছে। নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধার শহর গ্রামাঞ্চলে শীতের আমেজ উপভোগ করছেন মানুষজন। পথের পাশের জংলা গাছপালা, ঝোপঝাড়, মাঠের দূর্বাঘাস সারারাত ঝরেপড়া শিশিরে ভিজে ওঠে। আর সেই শিশির বিন্দুতে সকালের সোনা রোদ হীরার কুচির মতো দ্যুতিময় হয়ে ছড়ায় তার সাত রঙের বর্ণালী। এক সপ্তাহ ধরে রংপুর বিভাগে গড়ে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে থাকছে। ফলে এখন বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর এলাকায় কুয়াশা পড়ছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা যেমন বাড়ছে তেমনি কুয়াশাও ঘন হচ্ছে। সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।এই লক্ষণ থেকে লেপ-তোষক বানানোর কারিগররা (ধুনকর) কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের সময় দাম বাড়তে পারে এই শঙ্কায় মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের পরিবার এখনই লেপ বানানো শুরু করেছে। নীলফামারী শহরের কালিবাড়ি মোড়ের ধুনকর বাবু বললেন, সব জিনিসের দাম বেশি। আগের দরে কাজ করে আর পোষায় না। একটা ডবল লেপ বানানোর মজুরি ২৫০ থেকে ৩শ’ টাকা। সিঙ্গল লেপের মজুরি দেড়শ’ থেকে ১৮০ টাকা। অন্যান্য ধুনকররা বললেন মধ্যবিত্তরা আজকাল আর শিমুলের তুলা ব্যবহার করে না। দাম অত্যধিক চড়া। কার্পাসের সঙ্গে গার্মেন্টসের তুলা মিশেল দিয়ে লেপ বানায়। একেকটা লেপ বানাতে দেড়/দুই হাজার টাকা খরচ। উত্তরাঞ্চলের বিশেষ করে ভারত সীমান্ত বাংলাদেশের গ্রাম, নদী বেষ্টিত চর গ্রামের উঠানে খরকুটায় আগুন জ্বালিয়ে চারধারে বসে তাপ নেয়ার দৃশ্য চিরন্তন। গ্রামের লোকজন বেশি শীত পড়লে খড়কুটো জ্বালিয়ে উনুন তাপের ব্যবস্থা করবে। -তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে
×