ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামালপুরের মাদারগঞ্জে পুকুর ভরাট প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৩:২২, ৮ নভেম্বর ২০১৯

জামালপুরের মাদারগঞ্জে পুকুর ভরাট প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারিতলা ইউনিয়নে একটি বিদ্যালয়ের মাঠতৈরির জন্য পুকুর ভরাট প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অতিদরিদ্র শ্রমিকদের দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৪৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তা না করে ড্রেজারে বালিমাটি এনে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। শ্রমিকদের মজুরির টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছে না স্থানীয়রা। তারা এ ঘটনার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজের অংশ হিসেবে মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারিতলা ইউনিয়নের মোসলেমাবাদ নুরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য ৪৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায়। মাঠ ভরাট করার কথা বলা হলেও মূলত: বিদ্যালয়ের একটি বড় পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। প্রকল্পটির জন্য ৫৩০ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে মাটি কেটে পুকুরটি ভরাট করার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমরান খান বাছেদ প্রকল্পটির সভাপতি হলেও মূলত: ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন আয়না কাজটির পুরো তত্ত্বাবধান করেন। প্রকল্পের শুরু থেকেই তিনি শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে আইন ও প্রকল্পের নীতিমালার কোনোরূপ তোয়াক্কা না করেই নিকটবর্তী ফসলি জমি ও ডোবায় বড় ড্রেজার বসিয়ে বালিমাটি এনে পুকুরটি ভরাট করছেন। ১৫ জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু প্রকল্প কমিটি কাজের পুরো বিল তুলে নিয়েছে গত জুন মাসের মধ্যেই। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অতিদরিদ্র শ্রমিকদের দিয়ে কাজ না করিয়ে ড্রেজারে মাটি ভরাট করে প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাদারগঞ্জের ইউএনওর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান সাজু। বিষয়টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকেও জানানো হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: ওবায়দুর রহমান বেলাল গত ১৬ অক্টোবর সরজমিনে গিয়ে ডেজার দিয়ে পুকুরে মাটি ভরাট কাজের অস্তিত্ব পান। তিনি শ্রমিকদের দিয়ে কাজ না করানোর বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তার তদন্ত প্রতিবেদনটি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়ে প্রকল্পটির কাজে অনিয়মের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এরপর কয়েকদিন বন্ধ রেখে পুনরায় ড্রেজারে মাটি ভরাট কাজ শুরু করে প্রকল্প কমিটি। গত মঙ্গলবার দুপুরে প্রকল্প স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, পাইপ দিয়ে ড্রেজারে বালিমাটি এনে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে কোনো অতিদরিদ্র শ্রমিক নেই। প্রকল্পের কোনো সাইনবোর্ডও নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান সাজু অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে কোনো শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়নি। এভাবেই ড্রেজারে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। ফলে কাগজে কলমে ৫৩০ জন শ্রমিকের তালিকা জমা দিলেও কার্যত কোনো শ্রমিক মজুরি পায়নি। শ্রমিকদের মজুরির পুরো টাকাই আত্মসাত করেছে প্রকল্প কমিটি। এ নিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছি না।’ প্রকল্পটির সভাপতি গুনারীতলা ইউপি সদস্য ইমরান খান বাছেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সময়মতোই কাজ বুঝিয়ে দিয়েছি। কাজের বিলও তুলেছি।’ শ্রমিকদের দিয়ে কাজ না করানো বা ড্রেজার প্রসঙ্গে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। গুনারিতলা ইউপি চেয়ারম্যান মো: জয়নাল আবেদীন আয়না অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পুকুর ভরাট কাজে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। এখন যে ড্রেজার দেখলেন তা প্রকল্পের কাজ নয়। আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আরো কিছু বালিমাটি ভরাট করে দিচ্ছি। স্থানীয় একটি মহল হয়রানি করার উদ্দেশে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’ মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে পুকুর ভরাট প্রকল্পের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগনেতা মো: ওবায়দুর রহমান বেলাল অভিযোগ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘সরজমিনে গিয়ে পুকুর ভরাট প্রকল্পের তালিকাভুক্ত অতিদরিদ্র শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়নি বা এরকম কোনো আলামত পাইনি। ড্রেজারে মাটি ভরাটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রকল্পটির কাজের অনিয়মের অভিযোগ উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি।’
×