ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লিট ফেস্টে সাহিত্য আড্ডা

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ৮ নভেম্বর ২০১৯

 লিট ফেস্টে সাহিত্য  আড্ডা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাহিত্যের প্রশ্ন-উত্তরের আড্ডায় প্রানবন্ত হয়ে ওঠে ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে। বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হওয়া ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিনে এ অধিবেশনে কথা বলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখিকা মনিকা আলী, ব্রাজিলের লেখিক মারিয়া ফিলোমেনা বইসো লেপেসকি, ফিনল্যান্ডের মিন্না লিন্ডগ্রেন ও ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখিকা ইয়ারা রড্রিগেজ। সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন ভারতীয় লেখিকা সুমনা রায়। আলোচনার বিষয় ছিল ‘গল্প : প্রতিবন্ধকতা নাকি আশ্রয়’। বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অধিবেশনের শুরুতেই গল্প কী? এমন প্রশ্ন উপস্থাপন করেন মডারেটর সুমনা রায়। জবাবে মনিকা আলী বলেন, গল্প হচ্ছে ছোট ঘটনাকে কাব্যিকতায় রূপ দেয়া এবং এর পরিসর বৃদ্ধি করা। মিন্না লিন্ডগ্রেন বলেন, আমার কাছে গল্প হলো সমাজের কথা বলা। সামাজিক জীবনের গল্পগুলো তুলে ধরার চেষ্টা আমার সব সময়। সেখানে বেশিরভাগ বয়স্ক মানুষের কথা উঠে আসে। আমার লেখায় তাদের ভালবাসা ও অপ্রাপ্তির বিষয় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি সব সময়। মারিয়া ফিলোমেনা বইমো লেপেসকি বলেন, সবার জন্যই কল্পনাশক্তি খুব জরুরী। আমরা বই পড়লে সুন্দর করে কল্পনা করতে শিখি। সে জন্য আমার কাছে গল্প মানে মনোরঞ্জনের মাধ্যম। ইয়ারা রড্রিগেজ বলেন, যেহেতু আমি নারীবাদী লেখিকা, সে ক্ষেত্রে আমার কাছে গল্প হলো, সমাজে নারীর প্রতিচ্ছবিকে বইয়ের পাতায় ফুটিয়ে তোলা। নারীদের অধিকার, সুবিধা ও অসুবিধাগুলো গল্প দিয়ে ফুটিয়ে তুলতেই আমি সাহিত্য রচনা করি। সুমনা রায়ের পরের প্রশ্ন ছিল আপনারা লেখক হিসেবে আর পাঠক হিসেবে কেমন করে নিজেদের উপস্থাপন করেন? এর জবাবে মারিয়া ফিলোমেনা বলেন, আমি ছন্দময় মানুষ। সবসময় ব্যালে নাচের ছন্দ অনুসরণ করি। সে জন্য আমার লেখা গল্পগুলোতেও ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। মিন্না লিন্ডগ্রেন বলেন, অনেকে মনে করে, আমি খুব হালকা বিষয় নিয়ে লিখি। আমি আধুনিক সমাজের বয়স্করা কী করে বা কী করা উচিত এমন বিষয় নিয়ে লিখলেও আমার লেখায় প্রচুর হিউমার থাকে, সে জন্য মানুষ এগুলোকে হালকা মনে করে। যদিও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে আমার পছন্দ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। এর জবাবে ইয়ারা রড্রিগেজ বলেন, আমার লেখার বিষয়ের সঙ্গে ভারী সঙ্গীতের মিল পাওয়া যায় না। আমি পছন্দ পপ মিউজিক। আর লেখালেখি করি নারীর অধিকার নিয়ে, কলোনিয়াল ফেমিনিজম নিয়ে। ধাপে ধাপে মডারেটর লেখকদের লেখালেখির সংগ্রাম ও বিপর্যয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর জবাবে মনিকা আলী বলেন, বাংলাদেশী হয়ে ব্রিটিশদের কাছে নিজের লেখা তুলে ধরতে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়েছে আমাকে। মারিয়া ফিলোমেনা বলেন, নিজের লেখা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে তাকে নতুন করে ইংরেজি ভাষাটিই রপ্ত করতে হয়েছে। অন্যদিকে ইয়ারা রড্রিগেজ বলেন, নারীবাদী লেখার জন্য বিভিন্ন সময় প্রকাশকরা তার প্রচুর লেখা বাতিল করেছে। লিট ফেস্ট বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কবিতা নিয়ে আলোচনা লিট ফেস্টের প্রথম দিন হয়ে গেল বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কবিতা নিয়ে আলোচনা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব ঢাকা লিট ফেস্টে ‘কবিতা আড্ডা : এপার ওপার’ শীর্ষক এক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বাংলাদেশের কবি রুবি রহমান, কবি কামাল চৌধুরী ও পশ্চিমবঙ্গের কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, জহর সেন মজুমদার ও গৌতম গুহ রায়। সেশনটি পরিচালনা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। শুরুতেই কামাল চৌধুরী বলেন, কবিতার দুটি ধারা- একটি এলিটিস্ট, আরকেটি পিপলস। এলিটিস্ট কবিতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও উচ্চ শ্রেণীর কিছু পাঠক পড়ে থাকে। আর পিপলস ধারার কবিতা প্রায় সবার জন্যই। কবি জহর সেন মজুমদার বলেন, এসব কবিতার বাইরে আরও এক ধরনের কবিতা হয়। আর তা হলো নীরব ধারার কবিতা। এ কবিরা নীরবে, নিভৃতে কবিতা লিখে চলেন। জীবনানন্দ দাশও এ ধারার কবি। কিন্তু তার কবিতা নিজ গুণেই এলিট বা পিপল সব শ্রেণীর কাছেই জনপ্রিয়। কবি রুবি রহমান বলেন, কবিরা কখনই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এলিট শ্রেণীর কবিতা বা পাঠ্যপুস্তকে ছাপার জন্য কবিতা লেখেন না। তারা তো লেখার সময় পাঠ্যপুস্তকের কথা মাথায় রেখে ভাষা প্রয়োগ করেন না, বরং নিজের খেয়ালে লিখে যান। কবিতার নিয়ে বলতে গিয়ে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত বলেন, কবিতা বর্তমান সময়ে পাঁচতলার মতো উঁচু কোথাও আটকে নেই, বরং তা আকাশ ছুঁয়েছে। বাংলা কবিতা স্রোতস্বিনী। কবি লিখতে লিখতে নিজেই নিজের পথ খুঁজে নেন। কবি গৌতম গুহ রায় বলেন, বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করেছে দুই বাংলাই। কাঁটাতার, আমলাতন্ত্র, খণ্ডীকরণসহ বিভিন্ন বিষয় দুই বাংলার পাঠককে বাংলা সাহিত্যের মূল ধারা থেকে আলাদা করেছে। ফলে অনেকেই দুই বাংলার সাহিত্য সম্পর্কে সেভাবে জানে না। এমনকি মফস্বলেও অনেক ভাল ভাল লিটলম্যাগ হচ্ছে, কিন্তু অনেকেই তা জানতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গ ধরেই কামাল চৌধুরী বলেন, ভাল কবিতা লিখলে কাঁটাতার দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না। পৃথিবীটা বরং চলে অর্থনৈতিক সূত্রের হিসেবে। আর তাই উন্নত দেশগুলোর লেখা আমাদের কাছে চলে আসে, কিন্তু আমাদের লেখাটা খুব সহজে তাদের কাছে পৌঁছায় না। কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আমরা জানি জলের ধারা নিচের দিকে আসে। সেদিক থেকেই হয়তো বাংলাদেশে ভারতীয়দের লেখা এতটা আসে।
×