ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবিরোধী কম্বিং অপারেশন শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৮ নভেম্বর ২০১৯

 জঙ্গীবিরোধী কম্বিং অপারেশন শুরু হচ্ছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ জঙ্গী সংগঠন হিসেবে আল্লাহর দল নিষিদ্ধ হওয়ার পর সারাদেশে জঙ্গীবিরোধী কম্বিং অপারেশন শুরু হচ্ছে। হলি আর্টিজানে হামলার তিন বছর পর আবারও সারাদেশে এমন জঙ্গীবিরোধী অপারেশন শুরু করতে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সদ্য নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত এবং নানাভাবে সহায়তাকারীদেও গ্রেফতার করতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সংগঠনটির দেশী-বিদেশী নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এজন্য ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত জঙ্গী সংগঠনটির শতাধিক সদস্যকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে সংগঠনটির নামে বেনামে থাকা ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করেছে। একাউন্টে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে জঙ্গী সংগঠনটির শতাধিক সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। আগে সংগঠনটি নিষিদ্ধ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। এখন নিষিদ্ধ সংগঠনটির কোন সদস্য গ্রেফতার হলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হবে। ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোন তথ্য দেয়নি। যদিও তাদের বিরুদ্ধে আগাগোড়াই জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ আগস্ট ঢাকার হাতিরঝিল ইব্রাহিম আহমেদ হিরো (৪৬), আবদুল আজিজ (৫০), শফিকুল ইসলাম সুরুজ (৩৮) ও রশিদুল ইসলাম (২৮) নামে জঙ্গী সংগঠনটির চার সদস্য র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এদেও দেয়া তথ্য মোতাবেক চারদিন পর গত ২৩ আগস্ট ঢাকার দক্ষিণখান থেকে সিরাজুল ইসলাম (৪৬), মনিরুজ্জামান মনির (৪০), এসএম হাফিজুর রহমান সাগর (৪৫) ও শফিউল মোযনাবীন তুরিন (২৭) নামের জঙ্গী সংগঠনটির নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের চার নেতা র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এরও আগে খুলনায় পর পর তিনটি অভিযানে জঙ্গী সংগঠনটির আরও কয়েক নেতাকর্মী গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারকৃতদের নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঢাকায় গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক ও র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক হিসেবে কর্মরত সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জনকণ্ঠকে বলছিলেন, জঙ্গী সংগঠনটি সারাদেশে ব্যাপক নাশকতা চালিয়ে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করছিল। সরকার উৎখাতের পর দেশী-বিদেশী দল ও জঙ্গী সংগঠনের পরামর্শে দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আল্লাহর দল। জঙ্গী সংগঠনটির সঙ্গে দেশের প্রায় সকল জঙ্গী সংগঠনের যোগাযোগ থাকার প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা, রাজশাহীতে জেএমবির তৎপরতার একপর্যায়ে জেএমবি নিষিদ্ধ হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার পর জেএমবির বহু সদস্য গ্রেফতার হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে জেএমবি। জেএমবি দুর্বল হওয়ার পর আল্লাহর দল জেএমবির মতো করে গোপনে সংগঠিত হচ্ছিল। তারা জেএমবির আদলে দল গোছাচ্ছিল। জেএমবির মতো শক্তি সঞ্চয় করারও চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কারণ জেএমবির সঙ্গে জঙ্গী সংগঠনটির বহু পুরনো সম্পর্ক। জেএমবির অনেক কলাকৌশল তাদের জানা ছিল। একত্রে আল্লাহর দল ও জেএমবি নানা জঙ্গী তৎপরতাও চালিয়েছে। জঙ্গী দলটি থানা পর্যায় পর্যন্ত স্বল্প পরিসরে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। তাদের তথ্য আদান-প্রদানের পদ্ধতিও জেএমবির মতো সনাতন। এই পদ্ধতিতে চিরকুট ও নিজস্ব লোক ব্যবহার করে তারা তথ্য আদান-প্রদান করত। প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় তাদের গ্রেফতার করা কঠিন ছিল। দলটির সামরিক শাখা নানাভাবে অস্ত্র গোলাবারুদ কিনে প্রস্তুত হচ্ছিল। এই কর্মকর্তা বলছেন, জঙ্গী সংগঠনটিতে দেশের সব বাহিনীর সদস্য আছে। তাদের দিয়ে সশস্ত্র ইউনিটগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। জঙ্গী দলটিকে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ইসলামী দল ও জঙ্গী সংগঠন সহায়তা করছে। ইতোমধ্যেই সংগঠনটির বিভিন্ন ব্যাংকে বেনামে থাকা ২০টি একাউন্টে এক কোটির বেশি টাকা জমা থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলেছে। ওইসব টাকা সংগঠনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং অস্ত্র গোলাবারুদ কেনার জন্য ব্যয় হওয়ার কথা ছিল। জঙ্গী অর্থায়নের এসব টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে আল্লাহর দলের নামে বেনামে থাকা একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। যেসব ব্যাংকে জঙ্গী সংগঠনটির একাউন্ট আছে, সেইসব ব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে ওইসব একাউন্টের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
×