ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বিপুল অঙ্কের অস্ত্র কিনেছে তেহরান

মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বলয় গড়ছে ইরান

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ৮ নভেম্বর ২০১৯

  মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বলয় গড়ছে ইরান

ইরান মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের চেয়ে এগিয়ে গেছে। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটেজিক স্টাডিস বা আইএসএস-এর এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। তেহরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াদ হাজার হাজার কোটি ডলারের পশ্চিমা অস্ত্র কিনেছে। দেশটি এর বেশিরভাগই কিনেছে যুক্তরাজ্য থেকে। ইরানের ওপর একের পর এক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশটি অস্ত্রক্রয়ের বিপুল অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে কৌশলগত অগ্রগতি লাভ করেছে। বিশেষ করে সিরিয়া, লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইরান এখনও নিয়ন্ত্রণমূলক প্রভাব রেখে চলছে। একই সঙ্গে তেহরান মধ্যপ্রাচ্যে একটি জোট গঠনের লক্ষ্যে অলিখিত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি মিলিশিয়া বাহিনীর গঠনের বিষয়টি নতুন নয়। এই সব মিলিশিয়া বাহিনী প্রায়ই এক দেশ অপর দেশের পক্ষে লড়াইয়ে অংশ নেয়। ইরানের বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লা খোমেনি ১৯৭৯ সালে দেশটিতে ফেরার পর থেকে লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মধ্যে বিপ্লবী আদর্শ ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালান। কিন্তু আইএসএস-এর ২১৭ পাতার প্রতিবেদনে এসবের অভাবনীয় তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম দেয়া হয়েছে, ইরান্স নেটওয়ার্কস অব ইনফ্লুয়েন্স ইন দ্য মিডিল ইস্ট। প্রতিবেদন বিষয়ে ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে ইরান একটু এগিয়ে গেছে। একটি শক্তিশালী বাহিনীকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে তারা তৃতীয় পক্ষকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে ইরান এই সফলতা অর্জন করেছে। এখানে প্রধান নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেছে কুদস বাহিনী। এই বাহিনী ইরানের ইসলামিক রেভুলু্যুশনারি গার্ড বা আইআরজিসির একটি অভ্যন্তরিণ শাখা হিসেবে পরিচিত। কুদস বাহিনী ও এর প্রধান মেজর জেনারেল কাশেম সোলায়মানি ইরানের সবোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির কাছে সরাসরি জবাবদিহিতা করেন। ২০০৩ সালে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অভিযান শুরু করে। এরপর থেকেই কুদস বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তাদের অভিযানের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এই বাহিনী ইরানের মিত্র বাহিনীগুলোকে প্রশিক্ষণ এবং অর্থ ও অস্ত্রের জোগান দিতে থাকে। তারা মধ্যপ্রাচ্যে একপ্রকার অপ্রচলিত যুদ্ধে পারঙ্গম বাহিনী গড়ে তোলে। এসব বাহিনীর কাজ ছিল, দলীয় কার্যপদ্ধতি নির্ধারণসহ ড্রোন ও সাইবার হামলা পরিচালনা করা। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিপ্লবী বাহিনী ও কুদস বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেয়। এই প্রথম কোন আন্তর্জাতিক সরকার আইআরজিসি ও কুদস বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিল। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেয়। সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র মনে করেন, কুদস বাহিনী প্রধান কাশেম সুলায়মানির ভূমিকা শুধুু সেনা কমান্ডার হিসেবে নয়। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা রয়েছে। এই সেনা কমান্ডার মধ্যপ্রাচ্যে তার মিত্রদের কুদস বাহিনীর সাহায্যে পররাষ্ট্রনীতি ঠিক রাখেন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জ্যাক স্ট্র তেহরান সফর করেন। এই প্রতিবেদন বিষয়ে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভূমিকাকে অবশ্যই সম্মান ও স্বাগত জানাতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে অবহেলা করার নীতি এখন আর অতটা কাজে আসবে না। একই সঙ্গে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধ সত্ত্বেও দেশটি সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এটি অবশ্যই এখন একটি শক্তিশালী দেশ। -বিবিসি
×