ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মিহির কুমার রায়

নারীর ক্ষমতায়ন

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৮ নভেম্বর ২০১৯

  নারীর ক্ষমতায়ন

এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এএসবি) বিগত ৩০ জুন ২০১৮ তারিখে তাদের পঞ্চম মাসিক সভা উপলক্ষে গণতান্ত্রিক সমাজে নারীর সমতা ও রাজনীতি বিষয়ক একটি বক্তৃতার আয়োজন করেছিল এবং এই আয়োজনে প্রবন্ধ উপস্থাপক ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতির বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপিকা নাসরিন আখতার হোসেন। এই প্রবন্ধে উল্লিখিত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন বাদ দিলে ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচিত নারীর আসন সংখ্যা ২০ যা শতকরা হার ৬.৭। এর সঙ্গে যদি সংরক্ষিত ৫০ নারী আসন যোগ হয় তা হলে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৭০ যা মোট ৩৫০টি আসনের মাত্র শতকরা হারে ২০ যা ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চৌদ্দতম জাতীয় নির্বাচনের আসন চিত্র। এই সংখ্যাটি নবম সংসদে ছিল ১৮.৬ শতাংশ এবং প্রথম জাতীয় সংসদে (১৯৭৩-৭৫) ছিল ৪.৮ শতাংশ। সময়ের আবর্তে সংরক্ষিত বনাম সরাসরি আসনে সংসদে নারীর প্রতিনিত্ব বেড়েছে। প্রবন্ধকার আরও উল্লেখ করেছেন সংরক্ষিত আসনবহির্ভূত সাধারণ সিটে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন পদে মোট আসনে নারী প্রতিনিধিত্বের হার হলো : উপজেলা চেয়ারম্যান ০.৬ শতাংশ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ০.২ শতাংশ, সিটি কর্পোরেশন মেয়র ১১.১ শতাংশ, সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর ০.০০ শতাংশ, মিউনিসিপেলিটির মেয়র ১.৩ শতাংশ, মিউনিসিপেলিটি কাউন্সিলর ০.৩ শতাংশ, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ০.৬ শতাংশ এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদ্যস ০.১ শতাংশ। মোট ৩৫ পৃষ্ঠার প্রবন্ধের উপস্থাপনায় উপসংহারে প্রবন্ধকার বলেছেন নারীদের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম সংখ্যক আসন এটাই প্রমাণ করে আইন প্রণয়নে কিংবা নীতি নিধারণে নারীদের অংশগ্রহণ তাৎপর্যপূর্ণ নয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কাঠামোতে পরিবর্তন না হলে নারী নেতৃত্ব সমাজের বৃহত্তর পরিসরে প্রতিষ্ঠান করতে আরও অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন নব্বইয়ের দশক থেকে নারী প্রধানমন্ত্রীরাই দেশ শাসন করে চলছে। তার পরও নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা নারী নেতৃত্ব দেশের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠার গতি এত মন্থর কেন যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেন্ত্রী, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, কৃষিমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের স্পীকার মহিলা। এই বক্তৃতার আলোচনা পর্বে অনেকের মধ্যে একজন নারী নেতৃত্ব যিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সাবেক সভানেত্রী তথা এককালের ছাত্রনেত্রী প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশ যে গতিতে নারীর উন্নয়ন কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে চলছে তা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। তার একটি মাত্র কারণ নেতৃত্ব তৈরির যে প্রক্রিয়া তা অনেকদিন যাবত ¯্রােত হীন নদীর মতো আবদ্ধ জলে মজে গেছে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ রয়েছে যাকে বলা হয় সুস্থ ধারার রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরির কারখানা। বিষয়টি এখানেই শেষ নয় সারাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র একই রকম বিধায় নারী নেতৃত্ব তৈরির প্রশ্নই আসে না। তিনি আরও বলেন এর থেকে মুক্তির পথ একটি আছে যা হলো ক্ষমতার রাজনীতি পরিহার করে আদর্শিক রাজনীতির দিকে ধাবিত হওয়া, উচ্চ শিক্ষায় নারীদের আরও সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজের রূপান্তর ঘটিয়ে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের সঙ্গে তার ভারসাম্য রক্ষা করা। এই আলোচনা থেকে এটিই প্রতীয়মান হয় যে তুলনামূলক বিচারে এই জায়গাটিতে আমারা পিছিয়ে সত্যি কিন্তু সেটার উন্নতি কল্পে বাংলাদেশ সংসদে সূচনা লগ্নে থেকেই সংরক্ষিত নারী আসন প্রবর্তন হয় যা প্রথশ জাতীয সংসদ নির্বাচনের (১৯৭৩-৭৫) সময় ছিল ১৫টি যা বর্তমানে দশম সংসদ নিবাচনে (২০১৪-২০১৮) রয়েছে ৫০টি। এই সংরক্ষিত আসন নিয়ে পক্ষের বিপক্ষের অনেক যু্িক্ত রয়েছে এবং বর্তমানে উদার অর্থনীতির যুগে কোন মানুষ সে নারী কিংবা পুরুষই হোক সংরক্ষিত হয়ে থাকতে চায় না আর নারীরা তো নয়ই। তারা নিজের যোগ্যতার বিচারে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য হতে চান সংরক্ষিত কোঠায় নয়। এটা মনে করা হয় একটি বৈষম্যমূলক আচরণ বিষেশত যারা সরাসরি নির্বাচিত জনগণের ভোট দ্বারা। আবার সংসদে আইন প্রণয়নের কথা বাদই দিলাম স্থানীয় পর্যায়ে সংরক্ষিত মহিলারা যে জেলায় প্রতিনিধি সেখানে কোন উন্নয়ন কর্মকা- তাদের কোন প্রকার প্রাধান্য কিংবা ক্ষমতার প্রয়োগের সুযোগ খুবই সীমিত বিশেষত সরাসারি ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ছেয়ে। (চলবে)
×